নিজস্ব সংবাদদাতা,পশ্চিম মেদিনীপুরঃ
বদলি বাধ্যতামূলক লিখে মাস ফুরোলেও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ সভাপতির দেওয়া নির্দেশকে অগ্রাহ্য করেই জেলার বিভিন্ন চক্রের তৃণমূল ও তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের নেতারা যোগ দিচ্ছেন না তাঁদের বদলিকৃত বিদ্যালয়ে। অভিযোগ উপরন্তু তৃণমূল ঘনিষ্ঠ সেইসব শিক্ষকদের বদলী বাতিল করার আবদার জানিয়ে রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে লিখিত চিঠি করেছে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল শিক্ষক সংগঠন।যাতে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মাত্র ১৭ জন প্রাথমিক শিক্ষকের বদলী খারিজের জন্য আবেদন করা হয়েছে।আর চিঠিই জেলা জুড়ে শিক্ষকদের গ্রুপে ছড়িয়ে পড়েছে।
এর জেরে ক্ষোভ বাড়ছে বদলিতে অনিচ্ছুক অন্যান্য প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে।
জানানো যায় এমাসেরই ৫ তারিখ সারা রাজ্যের ৮টি জেলার মোট ২৮৭৩ জন প্রাথমিক শিক্ষকদের হঠাৎ তাঁদের বর্তমান বিদ্যালয় থেকে অন্য বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।
জানানো হয় শিক্ষার স্বার্থে ছাত্র শিক্ষক অনুপাতে অতিরিক্ত শিক্ষকদের পাঠানো হয়েছে সেই সব বিদ্যালয়ে যেখানে শিক্ষক প্রয়োজন ছিল। যদিও সংবাদ মাধ্যমে একাধিক উদাহরণ তুলে ধরা হয় যেখানে শিক্ষা দপ্তরের ৩০ঃ১ অনুপাত না মেনেই বিদ্যালয় থেকে শিক্ষক বদলি বা অন্য বিদ্যালয় থেকে শিক্ষক আনা হয়।
এই বদলিতে চরম অসন্তোষ দেখা গিয়েছিল বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনগুলির মধ্যে।সব চাইতে খবরের শিরোনামে আসে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা। এই জেলার প্রায় ৯০৭ জন শিক্ষককে অন্যত্র বদলী করা হয়। সেই বদলিতে নাম উঠে আসে শাসক দলের শিক্ষক সংগঠন তৃণমূল শিক্ষা সেলের বাঘা বাঘা সব নেতাদেরও।সেই সব নেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল পশ্চিম চক্রের তৃণমূল শিক্ষা সেলের চক্র সম্পাদক সোমেশ চক্রবর্তী এবং নাড়াজোল-২ চক্রের তৃণমূল শিক্ষাসেলের চক্র সম্পাদক শ্যামসুন্দর দোলইয়ের নাম।
ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনের প্যাডে লেখা রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রীর উদ্দেশ্যে লেখা একটি চিঠি ভাইরাল হয়েছে।এই চিঠিতে জেলার বিভিন্ন চক্রের ১৭ জন প্রাথমিক শিক্ষকের নাম লিখে শিক্ষা মন্ত্রীকে আবেদন করা হয়েছে, এদের বদলি বাতিল করার জন্য।
খোঁজনিয়ে দেখে গেছে এইসব শিক্ষকদের অধিকাংশ শিক্ষকই বদলীর চিঠির নির্দেশ না মেনেই তাঁদের পুরানো বিদ্যালয়ে দিব্যি আছেন। অথচ বদলির চিঠিতে সাফ লেখা ছিল ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ এর মধ্যেই শিক্ষককে তাঁর বর্তমান বিদ্যালয় ছেড়ে চিঠিতে লেখা নতুন বিদ্যালয়ে যোগদান করতে হবে।বিভিন্ন চক্রের এস.আই রা ও জানিয়েছিলেন শিক্ষক নতুন বিদ্যালয়ে যোগদান না করলে তাঁদের বেতন বন্ধ করে দেওয়া হবে।
আরও পড়ুনঃ অপরিকল্পিত প্রাথমিক শিক্ষক বদলির বিরুদ্ধে অবস্থান বিক্ষোভ
এ বিষয়ে আমরা আমাদের নিউজরুম থেকে ফোনে যোগাযোগ করি নিখিল বঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সম্পাদক ধ্রুবশেখর মণ্ডলের সাথে।তিনি বলেন,নির্দেশ ও নিয়ম সকল শিক্ষকদের জন্যই একই রাখা আবশ্যক।অন্যথায় প্রশাসনের উপর মানুষ আস্থা হারাবে।আমরা ইতি মধ্যেই এই অনৈতিক বদলির বিরুদ্ধে আমাদের জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ সভাপতিকে জানিয়েছি আমাদের বক্তব্য।বলেছি দলমত নির্বিশেষে সমস্ত অনিচ্ছুক শিক্ষককেই তাঁদের পুরানো বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনতে হবে।তবে তার পরেও এমন দ্বিচারিতা যদি সত্যিই ঘটে আমরা বসে থাকবো না।গত ২৬ জুলাই শিক্ষা দপ্তরের মিটিংয়ে বলা হয়েছিল শিক্ষার স্বার্থে বিদ্যালয়ের অতিরিক্ত শিক্ষকদের চাহিদা সম্পন্ন বিদ্যালয়ে বদলী করা হবে কিন্তু রাতারাতি চিঠি ধরিয়ে যে বদলী হলে তাতে আমাদের জেলায় প্রায় ৭৩টি বিদ্যালয় সিঙ্গেল টিচার স্কুলে পরিণত হয় এবং জেলার ৩টি স্কুল শিক্ষক শূন্য হয়ে যায়,কেবল পার্শ্ব শিক্ষক ছিল।বিষয়টি একেবারেই শিক্ষার স্বার্থ বহন করেনা।
এর জেরেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার প্রাথমিক শিক্ষক শিক্ষিকাদের মধ্যে ক্ষোভ জন্মেছে। তাঁদের বক্তব্য,নির্দেশ ও নিয়ম সবার জন্যই এক হওয়া দরকার। ওঁরা সরকার পক্ষের নেতা বলে ওঁরা নিয়ম নির্দেশ মানবে না! এটা আমরা একেবারেই মেনেনেবনা। তেমন হলে অনিচ্ছুক শিক্ষকদেরকেও আমাদের পুরানো বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584