পিয়ালী দাস, বীরভূমঃ
বিশ্বকবি কে নিয়ে নোংরা রাজনীতি করতে গিয়ে মুখ পুড়লো বিজেপির। বিজেপি নেতা অমিত শাহের ছবির নীচে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি দেওয়াতে শান্তিনিকেতন জুড়ে উঠেছিল সমালোচনার ঝড়। নিন্দায় সরব হয়েছিল আশ্রমিক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ।
তীব্র সমালোচনার মুখে পোস্টার খুলে ফেললো বিজেপির শান্তিনিকেতন সংস্কৃতি বিকাশ সমিতি। গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নামটাই বিশ্বের দরবারে ভারতবর্ষের পরিচিতি দিতে যথেষ্ট।কিন্তু বিশ্বকবিকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে কালিমালিপ্ত করেছে বিজেপি এমনটাই অভিযোগ আনলেন শান্তিনিকেতনের বিশিষ্ট আশ্রমিক বৃন্দ। কিন্তু তারা কেন এমন অভিযোগ আনছেন ?
আগামী রবিবার একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে বোলপুরে আসছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, তাকে আমন্ত্রণ জানাতে গিয়ে শান্তিনিকেতন সংস্কৃতি বিকাশ সমিতির তরফে বোলপুর শহরজুড়ে একটি প্ল্যাকার্ড লাগানো হয়। প্ল্যাকার্ডের ওপরে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ছবি, মাঝখানে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তুলি দিয়ে আঁকা একটি মুখের আদল, নীচে বিজেপি নেতা অনুপম হাজরার ছবি। এখান থেকেই শুরু বিতর্ক।
আরও পড়ুনঃ অফিস থেকে সরল মমতার ছবি, দলত্যাগের তালিকায় শীলভদ্রও
কটাক্ষ করে বিশ্বভারতীর প্রাক্তন সবুজ কলি সেন জানিয়েছেন , যারা এই প্ল্যাকার্ডটি দিয়েছেন তারা একটু ভুল করে ফেলেছেন, দ্বিতীয় স্থানে বিজেপি নেতা অনুপম হাজরা রেখে তৃতীয় স্থানে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবিটি রাখা উচিত ছিল। এটাই ওদের পক্ষে স্বাভাবিক আচরণ। বিষয় টি নজরে আসতেই সমালোচনায় সরব হয়েছেন আশ্রমিক, শিক্ষক, ছাত্র- ছাত্রীরা। আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর জানিয়েছেন, অনাচার অনাসৃষ্টি চলছে বিশ্বভারতী জুড়ে, এ ধরণের কাজ অত্যন্ত নিন্দনীয়, ঘোর অন্যায়।
আশ্রমিক সুবোধ মিত্র জানিয়েছেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলেন জগতগুরু, একটি তা বিশেষ রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে রাজনীতির ফসল ঘরে তোলার জন্য যেভাবে গুরুদেব কে দ্বিতীয় সারিতে নামিয়ে নিয়ে এসেছে তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। একজন রাজনৈতিক নেতার ছবির নিচে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি, এরমধ্য দিয়ে বিজেপি বুঝিয়ে দিতে চাইছে বাঙালীর আবেগ, সৃষ্টি, কৃষ্টি-সংস্কৃতি কোনটারই তাদের কাছে গুরুত্ব নেই, ক্ষমতালোভী পিশাচে পরিণত হয়েছে বিজেপি নেতারা। সময় এসেছে একযোগে একসাথে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে সামিল হওয়ার।
আরও পড়ুনঃ একাধিক দাবি নিয়ে মুর্শিদাবাদের জেলাশাসককে ডেপুটেশন জেলা কংগ্রেস সংখ্যালঘু সেলের
বিশ্বভারতীর অধ্যাপকদের দাবি, গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাধের বিশ্বভারতী এখন আর শিক্ষাক্ষেত্র নেই,বর্তমান বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকে বিশ্বভারতী একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের দলীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে।
বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী এবং বীরভূম জেলা তৃণমূলের শিক্ষক সমিতির চেয়ারপার্সন ডঃ প্রলয় নায়েক জানিয়েছেন, খুব লজ্জাজনক ঘটনা, এধরণের ছবি দেখতে হবে তা স্বপ্নেও ভাবিনি। বাঙালির গর্ব ও মর্যাদা গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তির পায়ের নীচে দেখে আমরা শিক্ষক সমাজ ব্যথিত ও স্তম্ভিত। তীব্র ধিক্কার জানাই।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত নীল বাড়ি আজ ও অসংরক্ষিত, ক্ষুব্ধ হিলিবাসী
বিশ্বভারতী ছাত্র ফাল্গুনী পান বলেন, গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিন্তা এবং বিজেপির চিন্তা একেবারেই বিপরীত মেরুর। শুধুমাত্র হোটেল জুমলা বাজি করার জন্য গুরুদেব কে ব্যবহার করছে বিজেপি।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ইতিহাস মুছে ফেলতে চায় অমিত শাহরা। আজকের ছবি সেটাই প্রমাণ করে।তবে বিলম্বিত বোধোদয় হয়েছে দেখে ভালো লাগলো।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584