দিদির দূত নাকি বিজেপির রথ, বাংলা দখলে এগিয়ে কে! জল্পনা রাজনৈতিক শিবিরে

0
102

উজ্জ্বল দত্ত, কলকাতাঃ

বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই বিজেপি ও তৃণমূল দলের দ্বৈরথ বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ দুই শিবিরই একে অপরকে ক্রমাগত টেক্কা দেওয়ার চেষ্টা করছে৷ যার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ বিজেপির পরিবর্তন যাত্রা ও তৃণমূলের ‘দিদির দূত’৷

didir doot | newsfront.co
দিদির দূত। নিজস্ব চিত্র

দু’দল এখন বাড়ি বাড়ি প্রচার, মিটিং মিছিলের পাশাপাশি সাইবার-যুদ্ধেও একে ওপরের থেকে পিছিয়ে নেই৷ সেই কারণেই ‘দিদির দূত’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করেছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারের মিছিলেও ব্যবহার করা হচ্ছে দিদির দূতকে৷ যেমন দেখা গেল শনিবার৷ এদিন দক্ষিণ চব্বিশ পরগণায় কামালগাজি থেকে সোনারপুর পর্যন্ত মিছিল করেন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনি যে গাড়িটিতে দাঁড়িয়ে মিছিলে অংশ নিলেন, তাতে স্পষ্ট লেখা ‘দিদির দূত’ কথাটি৷

parivartan yatra | newsfront.co
বিজেপির রথ। নিজস্ব চিত্র

এটিকে জনসংযোগ হিসেবে গন্য করছে তৃণমূল। যা দেখে অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বিজেপির পরিবর্তন যাত্রার সঙ্গে দিদির দূতের মিল খুঁজে পাচ্ছেন৷ কারণ, এই ভাবেই রাজ্যের বিভিন্ন অংশে ঘুরছে বিজেপির গাড়ি(পড়ুন, রথ)৷ সেই গাড়িতে চড়েই কখনও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা, কখনও দলের হেভিওয়েট নেতা অমিত শাহ, আবার কখনও রাজ্যস্তরের দিলীপ ঘোষ-শুভেন্দু অধিকারীরা প্রচারে অংশগ্রহণ করছেন৷

তৃণমূল কংগ্রেসের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আপাতত ‘দিদির দূত’ হয়ে জনসংযোগ করেছেন শনিবার৷ হয়তো আগামী দিনে রাজ্যের অন্যান্য অংশে তৃণমূলের অন্যান্য নেতারাও ‘দিদির দূত’ হয়ে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছবেন৷রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, পোশাকি নাম যাই হোক, উদ্দেশ্য কিন্তু এক৷ দুই রাজনৈতিক দলই চাইছে একেবারে জনতার মাঝে পৌঁছে যেতে৷ যেখানে একেবারে জনতার সঙ্গে দূরত্ব অনেকটাই কমে যায়৷

আরও পড়ুনঃ আলিপুরদুয়ারে প্রবেশ বিজেপির পরিবর্তন যাত্রার রথ

কর্মীদের মধ্যে উদ্যমও বৃদ্ধি পায় এই ধরনের কর্মসূচি থেকে৷ সভা করে যেটা অনেক সময় সম্ভব হয় না৷ তাছাড়া কর্মী-সমর্থকরা ছাড়া এই ধরনের মিছিলের আশপাশে যাঁরা থাকেন, যেমন রাস্তার দু’পাশের যে বাড়িগুলি থাকে সেখানে উপস্থিত মানুষের প্রতিক্রিয়া নেতারা সরাসরি পরখ করতে পারেন৷ অনেক সময় নেতাদের পালটা প্রতিক্রিয়াও ভোটারদের কাছে ইতিবাচক বা নেতিবাচক বার্তা পৌঁছে দেয়৷ যার প্রতিফলন ভোটবাক্সে পড়ে৷ রাজ্য বিজেপি নেতারা অবশ্য বলছেন, তাঁদের কর্মসূচিকেই নকল করছে তৃণমূল।

কখনো বা বিজেপির এই পরিবর্তন যাত্রা প্রশাসনকে সঙ্গে করে নিয়ে আটকে দেওয়ার চেষ্টা করছেন, আবার কখনও বা তৃণমূল দুষ্কৃতীদের লেলিয়া দিয়ে বিজেপির এই কর্মসূচি নষ্ট করতে চাইছে তৃণমূল। যেমন লাভপুর ও ইসলামপুরে বিজেপির এই পরিবর্তন যাত্রার ওপর হামলা চালিয়ে ছয় বিজেপি কর্মীকে জখম করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। আর কিছুই করতে না পেরে বিজেপির এই কর্মসূচি নকল করে ‘দিদির দূত’ নামে এই কর্মসূচি নিয়েছে।

তৃণমূলের মুখপাত্র ও প্রাক্তন রাজ্যসভার সাংসদ কুণাল ঘোষ বলেন,’দিদির দূত’ কর্মসূচি অনেকদিন আগেই দলের পক্ষ থেকে ঠিক রাখা হয়েছিল। এটা একটি জনসংযোগের অঙ্গ। ২০১১ সালে তৃণমূলের কী রকম জনসংযোগ ছিল তা ওরা ভাবতে পারে? তখন এরাজ্যে বিজেপি প্রায় ছিল না। আর দিলীপ ঘোষও বিজেপি করতেন না। আমলাশোলের ঘটনা ওরা জানে? ওদের সব ট্রেন নেতা শিশুর মতো কথা বলছে।

আরও পড়ুনঃ কোচবিহার রাজবাড়িতে কেন্দ্রের মহোৎসব বন্ধের দাবীতে বিক্ষোভ

ওরা ভালো করে আগে পড়াশোনা করুক।’ এবিষয়ে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষকে প্রশ্ন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এই বক্তব্যের লড়াই চলতেই থাকবে। কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠছে, এই যাত্রা পথের শেষে সাফল্য কোনদ রাজনৈতিক দল পাবে? দিদির দূত এ চড়ে তৃণমূল নেতারা কি পারবেন তৃতীয়বারের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে পৌঁছে দিতে? নাকি রথে চড়ে নাড্ডা-অমিত-দিলীপ-শুভেন্দুরা বাংলায় তাঁদের কাঙ্খিত পরিবর্তনের পরিবর্তন আনতে পারবেন! দিদির দূত কি পারবে বিজেপির এই পরিবর্তন যাত্রাকে আটকে দিতে!

এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য রয়েছে রাজ্যের ভোটারদের মনে৷ ভবিষ্যতের বাংলা গড়ার দায়িত্ব তাঁরা কাকে দেবেন, সেই উত্তর জানতে অপেক্ষা করতে হবে আরও মাস তিনেক৷ কিন্তু এই মুহূর্তে বলা যায় যে সাধারণ মানুষের একেবারে নিকটে পৌঁছতে তৃণমূল বা বিজেপি, কেউই চেষ্টার কোনও কসুর করছে না৷
দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কে হাসেন শেষ হাসি; মমতা! না বিজেপি!

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here