শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
পরিবেশের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক যে মানুষই, তা যেন ফের একবার প্রমাণ হল। লকডাউনের পর টানা ১৪ দিন যেন দূষনহীন ছিল শহর কলকাতা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোমবাতি জ্বালানোর কথা বলতে সুযোগ পেতেই রবিবার একরাতে ৬ কোটি টাকার বাজি পুড়িয়ে শহরের দূষণ ৬ গুণ বাড়িয়ে ফেলল শহর কলকাতা।
পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং সারা বাংলা আতসবাজি উন্নয়ন সমিতির পক্ষ থেকে পাওয়া গিয়েছে এমনটাই তথ্য। যদি বেআইনি ভাবে বাজি ফাটানোর অভিযোগে কলকাতা পুলিশ গ্রেফতার করেছে ৯৮ জনকে।জানা গিয়েছে, করোনার আতঙ্কের মাঝেই কোটি টাকার বাজি বিক্রি করে খুশি বিক্রেতারাও।
আচমকাই ফোনে ফোনে অনেকেই বিপুল আতসবাজির বরাত পেয়ে যান। এমনিতে সারা বছর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সেলিব্রেশন হোক অথবা দিওয়ালি, তারা আতসবাজির অর্ডার পেয়েই থাকেন। কিন্তু চলতি বছরে করোনা ভাইরাসের প্রকোপে যেভাবে একের পর এক অনুষ্ঠান বাতিল হচ্ছে, তাতে আদৌ পরবর্তী সময়ে আতসবাজি বিক্রি হবে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বাজি ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
আরও পড়ুনঃ আইসোলেশন-কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে থাকবেন মনোবিদ, সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য ভবনের
এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর ডাকে মোমবাতি জ্বালানোর অনুষ্ঠান অকাল দীপাবলিতে আতসবাজি ফাটানোর উৎসবে বদলে যাওয়ায় লকডাউনের মধ্যে বাজি পোড়ানোয় কিছুটা হলেও আয়ের মুখ দেখেছেন বাজি বিক্রেতারা।
মোমবাতি কিনতে যাওয়া সকলের মধ্যে প্রচার হয়েছে, আলো জ্বেলে নয় আতস বাজিতে জীবাণু মারা সম্ভব। আর তাতেই এই আতঙ্কের বাজারেও বিক্রি বাড়িয়ে লাভবান ব্যবসায়ীরা। অন্তত পুরনো স্টক বাজিও প্রায় পুরোটাই বিক্রি করতে পেরেছেন তাঁরা।
সারা বাংলা আতসবাজি উন্নয়ন সমিতির কর্তা বাবলা বাবুর কথায়, “লোকেরা আগাম প্ল্যান কষেছিল। এলাকার চেনা আতসবাজি ব্যবসায়ীদের বলে ঘরে বসেই বাজির অর্ডার দেওয়া হয়। তারা খবর দিয়ে গোপনে বাজি কারখানা মাল প্রস্তুত করিয়ে ফেরা আনিয়ে নেন নিজের দোকানে।’ তাঁর কথায়, “মাত্র ৯-১০ মিনিটে গোটা রাজ্যে ৬ কোটি টাকার বাজি পুড়েছে।”
যেখানে পণ্য পরিবহনের সমস্যার জন্য একাধিক নিত্যপ্রয়োজনীয় এবং অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সরবরাহের ঘাটতি অভিযোগ উঠেছে , সেখানে বাজি কিভাবে যথাযথ পরিমাণে গোপনে সরবরাহ হয়ে গেল, তা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে।অন্যদিকে বাজির শব্দ আর ধোঁয়ায় ক্ষুব্ধ পরিবেশপ্রেমীরা। তাঁদের বক্তব্য, লকডাউনে কিছুটা পরিবেশের হাল ফিরেছিল, কিন্তু কালকে যা দাপট চলেছে তাতে দূষণ কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে।
উল্লেখ্য, WHO-এর নিয়ম অনুযায়ী বাতাসে প্রলম্বিত শ্বাসযোগ্য সূক্ষ্ম ধূলিকণা ২৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি হওয়া উচিৎ নয়। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য অনুযায়ী, সেটাই রবিবার রাতে ৬ গুণ বেড়ে গিয়েছিল। রবিবার রাত ১০টায় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স ছিল ১৫৬, যা চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর। মানুষ সচেতন না হলে তারা যে নিজেই পরিবেশের পক্ষে কতটা ক্ষতিকর হতে পারে, এই ঘটনাই যেন তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584