নিজস্ব সংবাদদাতা, ওয়েব ডেস্কঃ
প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখপাধ্যায়ের সদ্য প্রকাশিত আত্মজীবনী ‘দ্য প্রেসিডেন্সিয়াল ইয়ার্স’ দেশের বিখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সম্পর্কে তাঁর ধারণা, পরামর্শ, মূল্যায়ন সবকিছুর এক মূর্ত দলিল। ক্ষেত্রবিশেষে তিনি সমালোচনা করেছেন মনমোহন সিং-এর, সমালোচনা করতে ছাড়েননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরও।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিদেশি রাষ্ট্র্নায়কদের সঙ্গে মোদি বারেবারে কূটনৈতিক সম্পর্কের বাইরে গিয়ে ব্যক্তিগত সখ্যের জায়গায় নিয়ে যেতে চেষ্টা করেছেন, তা একেবারেই অনুমোদন করেননি প্রণব বাবু। মোদিকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ‘ভরসাযোগ্য বন্ধু’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
তার উল্লেখ করে প্রণব লিখেছেন, ‘আমি রাষ্ট্রনায়কদের সঙ্গে ব্যক্তিগত বন্ধুত্বের বিরোধী। কারণ, তা কূটনৈতিক সম্পর্কের বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আন্তর্জাতিক সম্পর্কে এই বন্ধুত্বের কোনো গুরুত্ব নেই। কূটনীতিতে কোনো সম্পর্কই ব্যক্তিগত হয় না।“ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মোদির সৌহার্দ্য নিয়েও একই মত প্রণবের। মোদীর বিদেশনীতি একেবারেই পছন্দ হয়নি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির।
আরও পড়ুনঃ গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে ফের শুনানি আগামীকাল
তিনি লিখেছেন, মূলত অনভিজ্ঞতার কারণেই মোদী এমন কাজ করেছেন। সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়েও মোদী বাড়াবাড়ি করেছিলেন বলে প্রণববাবু মনে করেন। কারণ, তাঁর মতে, “পাকিস্তানি আগ্রাসনের জবাবে সীমান্তে এমন ঘটনা হামেশাই ঘটে। ভারতীয় সেনা এমন ধরনের হামলা প্রায়ই চালিয়ে থাকে। এ নিয়ে এতটা বাড়াবাড়ি অপ্রয়জনীয়। এতে ভারতের কোনো লাভ হয়নি।“
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে মোদীকে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন প্রণব। লিখেছেন, ‘ইমরান স্বাধীনতার পরে জন্মেছেন। তিনি নতুন প্রজন্মের রাজনীতিবিদ। স্বাধীনতা-পূর্ব ভারতে মুসলিম লীগ যে ধরনের রাজনীতি করত, তার কোনো দায় ইমরান খানের নেই।“ প্রণব লিখেছেন, “ভারত সম্পর্কে ইমরানের অবস্থান কী, সে বিষয়ে আমাদের নিশ্চিত হওয়া দরকার। ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, ইমরানের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত।“
আরও পড়ুনঃ কলার টিউনে অমিতাভ কণ্ঠস্বর বন্ধে দিল্লি হাইকোর্টে জনস্বার্থে মামলা
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির মতে, যোগ্য ব্যক্তি হিসাবেই প্রধানমন্ত্রী পদ পেয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর পদ তিনি অর্জন করেছেন, তাঁর পূর্বসূরীদের মতো ওই পদ তাঁকে কেউ দিয়েছে এমনটা নয়। এই কথায় তিনি নাম না করে মনমোহন সিংকে কটাক্ষ করেছেন তা বলা-ই বাহুল্য। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির কলমে, “দুই প্রধানমন্ত্রীর মসনদে বসার দৃষ্টান্ত সম্পূর্ণ আলাদা। মনমোহন সিংকে সোনিয়া গান্ধী প্রধানমন্ত্রীর পদে বসিয়েছিলেন। কংগ্রেসের সংসদীয় কমিটি সোনিয়াকে বেছে নিয়েছিল প্রধানমন্ত্রী পদে। ইউপিএ-র অন্য সদস্য দলগুলিও, কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।“ তবে তিনি এও লিখেছেন, “মনমোহন ছিলেন অনেক উদ্যমী, বিচক্ষণ এবং অদম্য জেদশক্তির অধিকারী। তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ভালই কাজ করেছেন। অন্যদিকে, মোদী ২০১৪ সালে জনপ্রিয়তার নিরিখে বিজেপিকে নেতৃত্ব দেন এবং বিপুল ভাবে জিতে ক্ষমতায় নিয়ে আসেন। তিনি ধুরন্ধর রাজনীতিবিদ এবং তাঁকে ভোটের প্রচারের সময়ই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করা হয় তাঁকে।“ গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মোদীর বিপুল জনপ্রিয়তা জনগণের সঙ্গে তাঁকে জুড়েছিল, তিনি যোগ্য ব্যক্তি হিসাবেই প্রধানমন্ত্রিত্ব অর্জন করেছেন, লিখেছেন প্রণব।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাজের ধরনের কিছু সমালোচনা প্রণব আত্মজীবনীতে করেছেন। মোদীর কাজ করার ধরন তাঁর ‘স্বৈরতন্ত্রী’ বলে মনে হয়েছে। সেই কারণে তাঁকে কিছু পরামর্শও দিয়েছেন। বলেছেন, বিরোধীদের অবহেলা না করে তাঁদের কথা বেশি করে শোনা উচিত। সংসদে আরও বেশি করে তাঁর উপস্থিত থাকা দরকার। সংসদ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার প্রাথমিক দায়িত্ব পালনে মোদী ব্যর্থ, বলে উল্লেখ করে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি লিখেছেন, সংসদকে ব্যবহার করে বিরোধীদের সন্তুষ্ট করার মধ্য দিয়ে দেশবাসীর কাছে তিনি সঠিক তথ্য পৌঁছে দিতে পারেন। এই ফোরামকে ব্যবহার করা প্রয়োজন।
ইউপিএ আমলে এই বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি লিখেছেন, সব সময় তিনি বিরোধী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। বিভিন্ন বিষয়ে ইউপিএ ও এনডিএ দুই শিবিরের অভিজ্ঞ নেতাদের মতামত নিতেন। নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি আগে বলেছিলেন, “সংখ্যাগরিষ্ঠতা স্থিতিশীলতা দেয় ঠিকই, কিন্তু কাজ করতে হয় সবাইকে সঙ্গে নিয়ে। সংসদীয় গণতন্ত্র সেকথাই বলে। যাঁরা এই নিয়মের বাইরে গিয়ে উল্টো পথে হাঁটার চেষ্টা করেছেন, একটা সময়ের পরে তাঁদের শাস্তি দিয়েছেন ভোটাররা।“
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584