শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
কিছুদিন আগেই সদ্য প্রয়াত হয়েছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। কিন্তু বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তার লেখা বইয়ের সারাংশ প্রকাশিত হওয়া মাত্রই রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে। আর এবার সেই বইয়ের লেখা নিয়ে প্রকাশ্যে টুইট যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লেন প্রণব পুত্র অভিজিৎ এবং প্রণব কন্যা শর্মিষ্ঠা।
প্রণব-পুত্রের দাবি, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে বইয়ের সারাংশ প্রকাশিত হয়েছে। কোথাও প্রকাশ হওয়ার আগে এখনও পর্যন্ত অপ্রকাশিত ওই আত্মজীবনীর পাণ্ডুলিপি তিনি নিজে খতিয়ে দেখতে চান। তার লিখিত অনুমতি নিয়ে তবেই তার বাবার আত্মজীবনী প্রকাশ করতে হবে বলেও বলে টুইট করেন তিনি। এদিকে নিজের দাদার এই ‘তত্ত্ব’ খারিজ করে শর্মিষ্ঠার পাল্টা দাবি, ‘সস্তা প্রচারে’র জন্যই বাবার আত্মকথা প্রকাশে ‘অহেতুক বাধা’র সৃষ্টি করছেন অভিজিৎ।
3/3 , Therefore , I being his son request You to immediately stop it's publication without my written consent till I go through its contents ! I have already sent you a detailed letter in this regard which will reach You soon !
Regards – Abhijit Mukherjee.#pranabmukherjee— Abhijit Mukherjee (@ABHIJIT_LS) December 15, 2020
আরও পড়ুনঃ সমস্ত অভিযোগ থেকে মুক্ত নিজামুদ্দিনে তবলিঘি জামাতকাণ্ডে ৩৬ বিদেশি, নির্দেশ দিল্লি হাইকোর্টের
প্রণবের আত্মকথা ‘দ্য প্রেসিডেন্সিয়াল ইয়ারস’-এর প্রথম পর্ব প্রকাশ্যে আসে বছর কয়েক আগে। সেই সময় তিনি জীবিত ছিলেন। তবে কিছুদিন আগে তিনি মারা যান। তাই বেশ কয়েকটি পর্ব তার জীবন কালে প্রকাশিত হলেও ওই সিরিজের শেষ খণ্ড অপ্রকাশিত। সেই অপ্রকাশিত স্মৃতিকথার সারাংশ বেশ কিছুদিন আগে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ্যে আসে। তারপর এই নিয়েই রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক শুরু হয়। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়, প্রণব চট্টোপাধ্যায় ওই বইতে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবির জন্য সনিয়া গাঁধী এবং মনমোহন সিংহকেই দায়ী করেছেন।
I, daughter of the author of the memoir ‘The Presidential Years’, request my brother @ABHIJIT_LS not to create any unnecessary hurdles in publication of the last book written by our father. He completed the manuscript before he fell sick 1/3
— Sharmistha Mukherjee (@Sharmistha_GK) December 15, 2020
আরও পড়ুনঃ পাহাড়ের মানুষ বিজেপির নাটক বুঝতে পেরেছেন- মমতা
মঙ্গলবার প্রণবের বই নিয়ে কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ, প্রণবপুত্র অভিজিৎ একাধিক টুইট করে লিখেছেন, ‘কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে আমার লিখিত অনুমতি ছাড়াই ওই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সারাংশ ছাপা হয়েছে। লেখকের ছেলে হিসেবে আমার অনুরোধ, দয়া করে এর প্রকাশনা বন্ধ করুন। যেহেতু বাবা আর বেঁচে নেই। তাই তাঁর ছেলে হিসেবে আমি ওই বইয়ের প্রকাশনার আগে তা শেষ খসড়া খতিয়ে দেখতে চাই। বাবা বেঁচে থাকলে তিনিও তা-ই করতেন। ওই খসড়া দেখা না পর্যন্ত আমার লিখিত অনুমতি ছাড়া এই বইয়ের প্রকাশনা অবিলম্বে বন্ধ রাখার অনুরোধ করছি। এ বিষয়ে একটি সবিস্তার চিঠি আপনাদের পাঠানো হয়েছে। শীঘ্রই তা হাতে পাবেন’।
আরও পড়ুনঃ কৃষকরা যখন বিষ পান করছেন, তখন কারও মাথা ব্যথা হয় না- দিলজিৎ
এর প্রতুত্তরে টুইটারেই দাদাকে আক্রমণ করে প্রণব কন্যার বক্তব্য ‘প্রসঙ্গত দাদা, বইয়ের নামটা দ্য প্রেসিডেন্সিয়াল ইয়ারস, দ্য প্রেসিডেন্সিয়াল মেমোয়ার্স নয়।
লেখকের মেয়ে হিসেবে দাদাকে অনুরোধ, বাবার লেখা শেষ বইপ্রকাশে অহেতুক বাধা তৈরি করবেন না। অসুস্থ হওয়ার আগেই ওই বইের পাণ্ডুলিপি শেষ করেছিলেন তিনি। বইয়ের শেষ খসড়ায় আমার বাবার হাতে লেখা নোট এবং মন্তব্য ছিল, যা মান্য করা হয়েছে। যে মতামত প্রকাশ করেছেন, তা তাঁর নিজস্ব। এবং এ নিয়ে সস্তা প্রচারের উদ্দেশ্যে বইয়ের প্রকাশনা বন্ধ করার চেষ্টা করা কারও উচিত নয়। এতে প্রয়াত বাবাকে অশ্রদ্ধাই করা হবে।’
আরও পড়ুনঃ কোচবিহারে নব-নির্মিত মেডিক্যাল কলেজের উদ্বোধন মুখ্যমন্ত্রীর
কিন্তু কি এমন লিখেছেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি যা নিয়ে পরিবারের মধ্যেই দাদা এবং বোন নিজেদের মধ্যে বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়লেন? বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ওই বইয়ের সারাংশ থেকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ‘কংগ্রেসের কয়েক জন সদস্য তত্ত্বগত ভাবে মনে করেন যে ২০০৪-এ আমি প্রধানমন্ত্রী হলে ’১৪-র লোকসভায় ভরাডুবির হাত থেকে বেঁচে যেত দল।
যদিও আমি তা মনে করি না। আমার মতে, প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরই দলীয় নেতৃত্ব রাজনৈতিক লক্ষ্য হারিয়েছিল। এক দিকে, সনিয়া দল চালাতে অপারগ ছিলেন। অন্য দিকে, সংসদে দীর্ঘ দিন অনুপস্থিতির কারণে সংসদদের থেকে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ঘুচে গিয়েছিল।’ প্রণব চট্টোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি হন সোনিয়া গান্ধীর আমলে। স্বাভাবিকভাবেই এই বক্তব্য আঘাত হেনেছে কংগ্রেস তথা গান্ধী পরিবারের অন্দরে। তার প্রভাবে প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের অতি সক্রিয় হলেন কিনা, সেই প্রশ্ন এখন উঠছে বিভিন্ন মহলে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584