১৫০ টাকায় চুল বিক্রি করে সংসারের হাল ধরা প্রেমা গাইছে জীবনের জয়গান

0
91

নিউজফ্রন্ট, ওয়েবডেস্কঃ

সাত মাস আগে স্বামী আত্মহত্যা করার পর তিন সন্তানকে নিয়ে চরম দারিদ্রতা এবং অসহায়তার মধ্যে দিন কাটাতে শুরু করে তামিলনাড়ুর সালেম জেলার বাসিন্দা প্রেমা সেলভাম। ৩ জানুয়ারি তিন সন্তান-সহ সারাদিন অভুক্ত থাকার পর প্রেমা এক অভাবনীয় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়।

prema salabham sale hair around 150 rupees for leading life | newsfront.co
প্রেমা সেলভাম। চিত্র সৌজন্যঃ বিবিসি বাংলা

ভারতবর্ষ মানুষের চুল আমদানি এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে বিশ্বে শীর্ষস্থানে রয়েছে। বহু মন্দিরেও পুণ্যার্থীরা মনস্কামনা পূরণের পর চুল দান করেন এবং বিদেশে তা রপ্তানি করা হয়। অন্নের আশায় তাই শেষ পর্যন্ত নিজের চুল বিক্রি করতে হয় প্রেমাকে।

গণমাধ্যম বিবিসি সূত্রে পাওয়া খবর, প্রেমা নিজের চুল বিক্রি প্রসঙ্গে জানায়, “একটা দোকানের কথা আমার মনে ছিল যেটি চুল কিনতো। আমি সেখানে গিয়ে আমার পুরো মাথার চুল ১৫০ টাকায় বিক্রি করে দিই।”

prema salabham sale hair around 150 rupees for leading life | newsfront.co
দুই সন্তানকে কোলে নিয়ে প্রেমা। চিত্র সৌজন্যঃ বিবিসি বাংলা

তবে চুল বিক্রি করে পাওয়া দেড়শো টাকায় তো এক-দু’বেলার বেশি চারজনের পেট চালানো সম্ভব নয়। এই চরম দুর্দশার মধ্যে প্রেমা আত্মহত্যা করারও চেষ্টা করেছিল।

আরও পড়ুনঃ পারমাণবিক অস্ত্র-ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি চুরিতে আটক পাঁচ পাকিস্তানি ব্যবসায়ী

প্রেমার স্বামী একটি ইটভাঁটায় কাজ করতেন। সেখানকার রোজগারে তাদের সুস্থভাবেই জীবন কাটত। পরবর্তীকালে তিনি নিজের ইটভাঁটা তৈরির জন্য ঋণ নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই কাজ বাস্তবায়নের মাঝে প্রচুর বাধা এসে পড়ে। শেষে ঋণের বোঝায় জর্জরিত হয়ে নিজের গায়ে আগুন জ্বালিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি।

prema salabham sale hair around 150 rupees for leading life | newsfront.co
বালা মুরুগানের সাথে প্রেমা। চিত্র সৌজন্যঃ বিবিসি বাংলা

স্বামীর মৃত্যুর পর পরিবারের সবরকম দায়ভার এসে পড়ে প্রেমার উপর। ইটভাঁটার শ্রমিক হিসাবে কাজে যোগ দেয় সে। কিন্তু এরপর ধীরে ধীরে অসুস্থ হতে শুরু করে প্রেমা। কাজ করার দৈহিক সামর্থ্য চলে যায় তার।

আরও পড়ুনঃ আমেরিকাতেও প্রবেশ করোনা ভাইরাসের, সতর্কতা জারি বিজ্ঞানীদের

প্রেমা ও তার স্বামী ঋণ নিয়েছিল প্রতিবেশী এবং স্থানীয় ঋণদাতাদের কাছ থেকে। পড়াশোনা কম জানায় এবং সরকারি সাহায্যের বিষয়ে অবগত না হওয়ায় ক্রমাগত ঋণের চাপে প্রেমার জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল। এমন পরিস্থিতিতে আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না প্রেমার কাছে। পারিপার্শ্বিক বাধায় সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় শেষ অবধি মরিয়া হয়ে নিজের চুল বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় সে।

এরপর সৌভাগ্যক্রমে প্রেমার সাথে বালা মুরগানের দেখা হয়, যে প্রেমাকে এই হতদরিদ্র অবস্থা থেকে মুক্তির আলো দেখায়। বালার বন্ধু প্রভু একটি ইঁটভাটার মালিক, তার থেকেই বালা প্রেমার কথা প্রথম শোনে। প্রেমার হতদরিদ্র জীবনের গল্প বালাকে স্পর্শ করেছিল, কারণ বালাও তাঁর ছোটবেলা এরকম দুর্দশাপূর্ণ অবস্থার মধ্যেই কাটিয়েছে। ছোটবেলাতে বালার মা ও আত্মঘাতী হন।

প্রেমাকে সাহায্যের পর বালা পুরো ঘটনাটি ফেসবুকে পোস্ট করে লেখে, “একদিনের মধ্যে আমি এক লাখ ২০ হাজার টাকা জোগাড় করি। যখন আমি প্রেমাকে জানাই সে খুবই খুশি হয় এবং বলে যে এতে তার বেশিরভাগ ঋণ শোধ হয়ে যাবে।”

আরও পড়ুনঃ কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের উন্নতিতে সাহায্য করতে চায় আমেরিকা

প্রাথমিক ঋণ শোধ হয়ে যাওয়ার পর প্রেমার অনুরোধেই বালা ঋণ তহবিল বন্ধ করে। কারণ প্রেমার ইচ্ছে ছিল বাকি ঋণ সে নিজের উপার্জন থেকেই পরিশোধ করবে। এরপর দিন প্রতি ৭০০ টাকা করে সে ঋণ শোধ করতে শুরু করে।

দুঃখজনক ভাবে, প্রেমার গল্পটিই একমাত্র ঘটনা নয়। ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও, লাখ লাখ মানুষ প্রতিদিনের খাবার যোগাড় করতেই হিমশিম খায়। প্রেমা এক দৃষ্টান্ত মাত্র।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here