শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
রাজ্যে আলুর দাম বাড়তে বাড়তে কোথাও ৩৬, আবার কোথাও ৪২ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় এই সবজির দাম এভাবে চড়চড় করে বাড়তে থাকায় স্বাভাবিকভাবেই রীতিমতো বিপদে পড়েছে আম বাঙালি। কিন্তু হঠাৎ কেন এত বেড়ে গেল আলুর দাম? যে আলু ১৮-২৫ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করত, তার এই ঊর্ধ্বগতির কারণ কি? কথা বলা গেল আলু ব্যবসায়ী সমিতির আধিকারিকদের সঙ্গে।
তাদের দাবি, একদিকে কম ফলন আর অন্যদিকে সরকারি বিজ্ঞপ্তি বিভ্রান্তি একসঙ্গে আলুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তার সঙ্গে রাজ্যের যোগান না দেখে আগেই অন্যান্য বছরের মত রফতানি করে দেওয়ায় ভুগতে হচ্ছে রাজ্যকে।
সাধারণ বাজারে খুচরো ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, তাদের বেশি দামে আলু কিনতে হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কম লাভ রেখেও তারা আলুর দাম কম করতে পারছেন না। কিন্তু অন্যান্য কারণের সঙ্গে স্কুল শিক্ষা দফতরের মিড ডে মিলের এক পাতার বিজ্ঞপ্তির জেরেও আলুর দর বৃদ্ধি হয়েছে বলে দাবি আলু মজুতকারীদের। সরকারি ওই বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট লেখা ছিল, আগষ্ট মাসে ২৮ টাকা কেজি দরে ১ কেজি আলু ক্রয়, সঙ্গে ২ কেজি চাল ও ১টি সাবানের কথা উল্লেখ রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষার কিট দেওয়া বন্ধের নির্দেশ কেন্দ্রের, অসন্তোষ প্রকাশ রাজ্যের
পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য সভাপতি সাগর দে বলেন, “ওই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার পর আলু সংরক্ষণকারীরা সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে আগস্ট মাসে হিমঘর থেকে আলু বের করবে। একেই এই বছরে হিমঘরে আলুর পরিমাণ অন্য বছরের তুলনায় কম রয়েছে। ফলে আমরা হিমঘর থেকেই ২৮ টাকা দরে আলু বের করেছি। স্বভাবতই খুচরো বাজারে দাম বেড়ে গিয়েছে।”
কিন্তু সত্যিই কি তাই? ওই বিজ্ঞপ্তি প্রসঙ্গে সরকারি সূত্রে দাবি, বিষয়টি পাইকারী বাজারের জন্য নয়, কলকাতার খুচরো বাজারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তা স্পষ্টভাবে বোঝা না যাওয়ায় আলুর দাম বেড়েছে।
আরও পড়ুনঃ জিএসটি বাবদ রাজ্যের ২.৩৫ লক্ষ কোটি টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্রঃ মুখ্যমন্ত্রীর
তার সঙ্গে আছে এই বছরের কম ফলন। সূত্রের খবর, এবছর হিমঘরে আলু রাখার পরিমান অনেকটাই কমেছে। ২০১৭ সালে ১৪ কোটি ৩২ লক্ষ প্যাকেট রাখা হয়েছিল। ২০১৮ সালে ১৪ কোটি ৪ লক্ষ প্যাকেট, ২০১৯ সালে ১২ কোটি ৬৯ লক্ষ প্যাকেট রাখা হয়েছিল। এবার ২০২০ সালে হিমঘরে আলু রাখা হয়েছে ১১ কোটি ৪০ লক্ষ প্যাকেট। তার মধ্যে ১০ শতাংশ বীজ আলু।
আরও পড়ুনঃ ভুয়ো করোনা রিপোর্টের ভিত্তিতে মোটা অঙ্কের বিল,তদন্তে পুলিশ
আলু ব্যবসায়ী সমিতির তরফে দাবি, একে এতটা কম ফলন হয়েছে, তারপর সরকার তাঁদের অনুরোধ করেছে ২৩ টাকা কেজি পাইকারী দর রাখার জন্য। তবু আমরা চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু সরকারের মিড ডে মিল দফতর অর্ডার বের করেছে ২৮ টাকা কেজি দরে আলু কিনবে। তাতেই আরও বিভ্রান্তি বেড়ে দাম বেড়েছে।
তারা আরও জানিয়েছেন, ২০১৬ থেকেই আলুর উৎপাদন অল্প অল্প করে কমছে। চলতি বছরে আলুর উৎপাদন সারা দেশেই কম হয়েছে। উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, গুজরাটে ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ আলু মজুত হয়েছে। আর পশ্চিমবঙ্গে মোট উৎপাদন ক্ষমতার ৭৮ থেক ৮০ শতাংশ আলু উৎপাদন হয়েছে। এভাবে চললে এখন তো দাম বেড়েইছে, এমনকি পরেও আলুর দাম বাড়তে বাধ্য।
তা হলে আলুর দাম কমার সম্ভাবনাই নেই? প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য সভাপতি সাগরবাবু বলেন, “গত বছরের মত বৃষ্টির পরিস্থিতি হলে শেষের দিকে আলুর দাম আরও বাড়বে। দাম কমার সম্ভাবনা কম কারণ বেশি আলু মজুত নেই। তবে আমরা যে দামে ছাড়ছি তার থেকে খুচরো বাজারে আরো অনেক বেশি দাম বেড়ে যাচ্ছে। যার জন্য যতটা না সমস্যা তার চেয়ে মানুষের কাছে আরো বেশি ভয়াবহ বার্তা পৌঁছচ্ছে। এই দিকটা নজরদারি রাখতে হবে কিন্তু সরকারকেই। ”
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584