শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
একে দু’মাসের ওপর থমকে গিয়েছিল গণপরিবহণ। তার জেরে বিপুল ক্ষতি হয়েছে বিভিন্ন রুটের বাসচালক ও মালিকদের। তারপর গ্রিন জোন ও অরেঞ্জ জোনের নন-কনটেনমেন্ট জোনে ২০ জন করে যাত্রী চলার নির্দেশে ক্ষতি সামলাতে বাসভাড়া বাড়ানোর দাবি জানানো হয়েছিল।

কিন্তু অতিরিক্ত বাসভাড়া বৃদ্ধি চূড়ান্ত হয়ে গেলেও শনিবার পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী আচমকাই ঘোষণা করেন, বেসরকারি বাস মালিকদের দাবি অনুযায়ী ভাড়া বাড়ানো হবে না। এই ঘটনাকে প্রতিশ্রুতিভঙ্গ বলে দাবি করে সোমবার থেকে রাস্তায় বাস নামাতে নারাজ বাসমালিকরা।
প্রসঙ্গত, করোনা পরিস্থিতিতে ভাড়া বাড়িয়ে মানুষের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করতে রাজি নয় সরকার।সরকারের যুক্তি, লকডাউনে মানুষের আয়ের সমস্ত পথ বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে ভাড়া বাড়ালে অনেকে তা সামলাতে পারবেন না। কিন্তু দু’মাস গাড়ি বসে থাকায় তাদের ক্ষতি হয়েছে, তা সামাল দেওয়া সম্ভব নয় গণপরিবহণের সঙ্গে যুক্ত মালিক-শ্রমিকদের। সরকারের এই সিদ্ধান্তে হতাশ বাস মালিকরা। তাঁদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী কথা রাখেননি।
আরও পড়ুনঃ লকডাউনে সাম্মানিক না পেয়ে অসহায় রাজ্যের ১০ হাজার আংশিক সময়ের শিক্ষক
জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ মুখ্যমন্ত্রী নিজে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে বলেছিলেন, বেসরকারি বাসের ভাড়ার ব্যাপারটা মালিকদের উপর ছেড়ে দিচ্ছি। যাঁরা পারবেন বাসে উঠবেন, যাঁরা পারবেন না, উঠবেন না। ২৪ ঘন্টার মধ্যে কি এমন ঘটল, পরিবহণমন্ত্রী ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেলেন? আমাদের প্রশ্ন সরকার কি আমাদের প্রতি একটু মানবিক হতে পারেন না? ‘
তপনবাবু বলেন, ‘ সরকার তো ডিজেলের উপর ১৮ টাকা সেস তুলে নিতে পারেন। ডিজেলের উপর জিএসটি বসাতে পারেন। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্থিক প্যাকেজের দাবি জানিয়েছিলাম। এতদিন বাসগুলো পড়ে রয়েছে। রাস্তায় নামানোর আগে কিছু মেরামতি দরকার। তাছাড়া এতদিন বাস বন্ধ, শ্রমিকদের যতটা পেরেছি সহায়তা করেছি। কিন্তু বাস মালিকদের রোজগারও বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে সরকার আর্থিক প্যাকেজ দিলে আমরা উপকৃত হতাম। কিন্তু সে ব্যাপারেও সরকার নীরব। আমাদের সিদ্ধান্ত খুব পরিষ্কার, ভাড়া বাড়ানো না হলে রাস্তায় বাস নামবে না।’
আরও পড়ুনঃ প্রবল শক্তি নিয়ে মন্দারমণিতে আছড়ে পড়বে ঘূর্ণিঝড় আমফান
সারা বাংলা বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘ আমরা জানতাম কোন কোন রুটে বাস চলতে পারে, সে বিষয়ে সরকারি তরফে একটা নির্দেশিকা আসবে। সেইমতো একটা পরিকল্পনার পরে ভাড়ার বিষয়ে সরকার নির্দেশিকা জারি করবে। কিন্তু যেভাবে ভাড়ার ব্যাপারে পরিবহণমন্ত্রী ঘোষণা করলেন, তাতে আমরা হতাশ।
তাছাড়া ২০ জন যাত্রী নিয়ে এত কম ভাড়ায় আমরা চালাতে পারবো কি না, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। সরকারি বাস যেমন পুলিশ পাহারায় চালাতে হচ্ছে ! বেসরকারি বাস চালাতে আমরা তো আর এত পুলিশি পাহারা পাবো না। নিশ্চিত ভাবেই নিজেদের আরও ক্ষতি করে বাস পথে নামানো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এই সংঘাতে সোমবার থেকে রাজ্যের গণপরিবহণের ভবিষ্যৎ কি হতে চলেছে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজ্যবাসী। চতুর্থ লকডাউন ঘোষণা হয়ে গেলেও দূরের অফিসে যেতে না পেরে কর্মহীনতার আশঙ্কায় ভুগছেন সকলেই।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584