পল্টু ডাকাতের হাত থেকে রক্ষা পেতেই গোয়ালতোড়ের তুতবাড়িতে সন্ন্যাসী বাবার পূজারম্ভ

0
49

নিজস্ব সংবাদদাতা,পশ্চিম মেদিনীপুরঃ

দুর্ধর্ষ পল্টু ডাকাতের আক্রমণের হাত থেকে রেহাই পেতেই গোয়ালতোড়ের তুতবাড়িতে সন্ন্যাসী বাবার পূজারম্ভ হয়।ঝোপ জঙ্গলে ঘেরা তমাল নদীর পাশে চৌতাড় মৌজা। চারিদিকে ধূধূ করা মাঠ আর একপাশে ক্ষীণ শীর্ণকায়া তমাল নদী। সেই তমাল নদীর পাড়ে চৌতাড় মৌজাতে আদি বাসস্থান ছিল গোয়ালতোড়ের মুখ্যাদের।

puja place | newsfront.co
পূজাস্থল ৷ নিজস্ব চিত্র

অনেকদিন আগেকার কথা। যেখানে মুখ্যাদের বাড়ি ছিল সেই এলাকায়, এক পাশে ছিল ধরমপুর শাঁখাভাঙ্গার জঙ্গল অন্য দিকে ধূধূ মাঠ। সূর্য অস্ত গেলেই চারিদিকে নেমে আসতো গভীর নিস্তব্ধতা। ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক আর শিয়ালের হুক্কাহুয়া। তার মাঝে মুখ্যা বাড়িতে জ্বলতো টিম টিম করে রেড়ির তেলের আলো। অবস্থাপন্ন পরিবার হওয়ায় প্রভূত সম্পত্তির মালিক ছিল এই মুখ্যারা।

praying | newsfront.co
আরাধনা ৷ নিজস্ব চিত্র

কথিত আছে, সেই সময় গোয়ালতোড় শালবনীর এই এলাকায় দাপিয়ে বেড়াতো পল্টু নামের এক দুর্ধর্ষ ডাকাত। যিনি রাতের অন্ধকারে হা রে রে করে দল বল নিয়ে এসে নিমেষে গৃহস্থের বাড়ি থেকে সর্বস্ব লুটে নিয়ে রাতের অন্ধকারেই গা ঢাকা দিয়ে দিত। এই পল্টু ডাকাত কোথা থেকেই বা আসতো আর কোথায় যেতো তা কারোরই জানা ছিল না। কিন্তু পল্টু ডাকাতের নাম শুনলেই সবার থরহরিকম্প শুরু হয়ে যেত।

জঙ্গল আর ধূধূ প্রান্তের সীমায় বসবাসকারী মুখ্যারাও এই পল্টু ডাকাতের ভয়ে কাঁপতো। শোনা যায় এক দুবার নাকি পল্টু ডাকাতের শিকারও হয়েছিলেন তারা। তাই পল্টুর সেই জবা ফুলের মতো চোখ আর লম্বা গোঁফ ওয়ালা মুখ মুখ্যাদেরও ভাবিয়ে তুলেছিল। তখনই তাদের এক বয়স্ক ব্যক্তি এই পল্টু ডাকাতের আক্রমণের হাত থেকে নিজেদের সম্পত্তি রক্ষা করতে চৌতাড় মৌজাতে অশ্বত্থ ও তেঁতুল গাছের নীচে সন্ন্যাসী বাবার আরাধনা করার মনস্থির করেন। কিন্তু পুজো করবো বললেই তো আর পুজো করা হয়ে ওঠে না। পুজো করবেন কে? অনেক ভেবে চিন্তে তারা বাইরে থেকে গোয়ালতোড়ে মাঝিদের নিয়ে এসে বসবাস করান এবং তাদের দিয়েই পুজো করান ।

আরও পড়ুনঃ আলিপুরদুয়ারে শ্রমিক মেলার সূচনা

মুখ্যারা চৌতাড় মৌজাতে যে স্থানে দেবতার প্রতিষ্ঠা করা হয় সেই স্থানের নাম দেন তুতবাড়ি। চৌতাড় থেকেই তুতবাড়ি নামকরণ হয়। সেই সময় থেকে এখনও পর্যন্ত তুতবাড়িতে প্রতিবছর মাঘ মাসের ৫ তারিখে নিষ্ঠা সহকারে সন্ন্যাসী বাবার পুজো হয়ে আসছে। যদিও আদি বাসস্থান ছেড়ে পরবর্তী কালে মুখ্যারা গোয়ালতোড়ে গিয়ে বসবাস করতে শুরু করেন।

মুখ্যাদের বর্তমান প্রজন্মের দীপক বিষই জানান, মুখ্যাদের প্রথম কে এখানে বসবাস শুরু করেছিলেন তা জানতে পারিনি। তবে স্বর্গীয় অবনী ভূষণ বিষই বিনোদ বিষই প্রমুখরা এই পুজোর দেখভাল করেছেন পরবর্তী কালে। কিন্তু শোনা যায় সন্ন্যাসী বাবার পুজো শুরু হওয়ার পর থেকেই পল্টু ডাকাতের উপদ্রব অভূতপূর্ব ভাবে কমে যায়।সন্ন্যাসী বাবার বর্তমান সেবাইত সনাতন লোহার জানান আমাদের পূর্বপুরুষ নারায়ণ লোহার পুজো করেছিলেন। পরে বংশপরম্পরায় আমার বাবা জ্যোতি লোহার করতেন। তিনি গত হওয়ার পর আমি করছি।

বাবার সন্তুষ্টির জন্য গাঁজা আর নতুন মাটির হাড়িতে আতপ চাল দুধ, ঘি আর চিনি দিয়ে তৈরি করা ক্ষীর ভোগ দিতেই হয়। আর প্রসাদ বলতে আতপ চালের সঙ্গে চিঁড়ে বাতাসা। দূরদূরান্ত থেকে অনেকেই নিজেদের মনস্কামনা পূরণের আশায় এখানে এসে পুজো দেন।

আরও পড়ুনঃ অল বেঙ্গল চিটফান্ড সাফার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের ডাকে পথসভা মুর্শিদাবাদে

প্রতিবছর ৫ ই মাঘ তুতবাড়িতে সন্ন্যাসী বাবার পুজোর পাশাপাশি মেলাও বসে কয়েক ঘন্টার জন্য এই মেলাতে প্রচুর জনসমাগম ঘটে। স্থানীয় বাসিন্দা দীপক বিষই জানান, “এক সময় গোয়ালতোড় এলাকায় তুতবাড়ির মেলার প্রচুর নাম ডাক ছিল। সকাল থেকেই অসংখ্য ভক্ত পুজো দিতে আসতেন। বসতো হরেক রকমের পসরা।

সবজি, থেকে হাঁড়িকুঁড়ি, মিষ্টির দোকান প্রভৃতি। কিন্তু কালের নিয়মে সেই জৌলুস এখন কিছুটা হলেও কমেছে। পসরার চাপ আর সেরকম নেই। কিন্তু গোয়ালতোড়ের ঐতিহ্যবাহী এই তুতবাড়ির পুজো ও মেলা এখনও গোয়ালতোড়বাসীকে তাদের পুরোনো স্মৃতি উসকে দেয়।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here