আন্তর্জাতিকভাবে বিপন্ন আল কায়দার সাথে মুর্শিদাবাদ যোগ কিভাবে?-উঠছে প্রশ্ন

0
168

নিজস্ব সংবাদদাতা, ওয়েব ডেস্কঃ

শনিবার ভোরে(১৯ সেপ্টেম্বর ) মুর্শিদাবাদ জেলার সীমান্তবর্তী ডোমকল মহকুমা এলাকার প্রান্তিক গ্রাম এবং কেরলের এর্নাকুলামে সন্ত্রাসবাদ দমনে দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সংস্থা এনআইএ-র বিশেষ অভিযানে মোট ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

Al qaeda terrorist | newsfront.co

জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা তাদের প্রেস বিবৃতিতে দাবি করেছে, ধৃতরা আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়দার সাথে যুক্ত এবং রাজধানী দিল্লি-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ধৃতরা নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল। এনআইএ জানিয়েছে, ধৃতদের কাছ থেকে প্রচুর জিহাদি পুস্তক, দেশি আগ্নেয়াস্ত্র, ডিজিটাল ডিভাইস, বিস্ফোরক বানানোর মশলা, দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি বর্ম উদ্ধার করা হয়েছে।

NIA | newsfront.co
এনআইএ সদর দফতর। ছবিঃ বিবিসি

জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার এই দাবিকে পাল্টা প্রশ্ন করেছে মানবাধিকার কর্মীরা। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা বিবিসি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মানবাধিকার কর্মীদের পাল্টা প্রশ্ন, যেখানে আন্তর্জাতিক ভাবেই আল কায়দার অস্তিত্ব বিপন্ন সেখানে কীভাবে ধৃত এই ভারতীয় নাগরিকদের সঙ্গে তাদের যোগ সাজস খুঁজে পাওয়া গেল?

আরও পড়ুনঃ সন্দেহভাজন আরও ২ আল-কায়দা জঙ্গির খোঁজে তল্লাশি এনআইএ’র

Minakshi Ganguly | newsfront.co
মীনাক্ষি গাঙ্গুলি। ছবিঃ বিবিসি বাংলা

বিবিসি প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে পার্লামেন্টে কংগ্রেসের দলনেতা মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরীর বিবৃতিও তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী অধীর বাবু দাবি করেছেন, ‘ধৃতরা যদি আল কায়দার সদস্য হয়েও থাকে, সেটা সরকারের সাম্প্রদায়িক রাজনীতিরই পরিণাম।‘

Adhir Chowdhury | newsfront.co
অধীর রঞ্জন চৌধুরী। ছবিঃ বিবিসি

অপর দিকে বিবিসি বাংলাকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া শাখার প্রধান মীনাক্ষি গাঙ্গুলি জানিয়েছেন, ধৃতরা আল কায়দার সদস্য বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছে। একই সাথে তিনি জানান, “এখন তো আল কায়দা অপারেটই করছে না। আফগানিস্তানে শান্তি আলোচনা চলছে, আমরা তো আল-কায়দার কোনও কাজকর্মই দেখছি না। তাহলে এনআইএ হঠাৎ করে কেন আল কায়দার কথা বলল?”

আরও পড়ুনঃ রাজ্য পুলিশকে না জানিয়ে সরাসরি তল্লাশি, এনআইএ পূর্বাঞ্চলীয় কর্তাকে চিঠি ডিজি বীরেন্দ্রর

শ্রীমতী গাঙ্গুলি আরও বলেন, “আফগানিস্তানে আল কায়দার বিরুদ্ধে লড়তে আমেরিকা যে সেনা মোতায়েন করেছিল সেটাও তারা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।” একই সাথে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পর্যন্ত যেখানে আল কায়দার বিরুদ্ধে ‘ওয়ার অন টেরর’ শেষ করে দিচ্ছেন, সেখানে আমরা এখনও ভারতে আল কায়দা খুঁজে বেড়াচ্ছি এটা একটা অদ্ভুত ব্যাপার নয়?”

যদিও এনআইএ প্রাথমিক তদন্তে দাবি করেছে, পাকিস্তানভিত্তিক আল কায়দা সদস্যরাই নাকি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মুর্শিদাবাদের এই বাসিন্দাদের র‍্যাডিকালাইজ করেছে।

অপরদিকে, পশ্চিমবঙ্গের সুপরিচিত সিভিল রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট নিশা বিশ্বাস বলেছেন, এর আগেও ভারতের পুলিশ বা বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থা নানা জঙ্গী হামলার ঘটনায় শত শত মুসলিম যুবককে আটক করেছে এবং তাদের ইসলামিক স্টেট বা আল কায়দার সদস্য হিসেবে চার্জ এনেছে। কিন্তু প্রায় নব্বই শতাংশ ক্ষেত্রেই তাদের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত কিছুই প্রমাণ হয়নি।

আরও পড়ুনঃ অধিকারের দ্বন্দ্বে শাহীনবাগ মামলার রায়দান সংরক্ষিত রাখল সুপ্রিম কোর্ট

নিশা বিশ্বাস বলেছেন, “আসলে এই সরকারের প্যাটার্নই হল আসল ইস্যু থেকে মানুষের নজর ঘুরিয়ে দেওয়া: মহামারির দায় চাপিয়ে দাও তাবলীগ জামাতের ওপর, শ্রম আইনে সংস্কার নিয়ে সমালোচনা হলে রামমিন্দর দেখিয়ে দাও।”

“এই মুহুর্তে সরকার অনেকগুলো বিল পার্লামেন্টে পাস করানোর জন্য মরিয়া। সেগুলো নিয়ে যাতে বেশি কথাবার্তা না হয়, তার জন্য চালাকি করে কিছু লোককে ধরে অ্যান্টি-ন্যাশনাল বলে দাও – মুর্শিদাবাদে ঠিক সেটাই হয়েছে।”

একই সাথে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নিশা দাবি করেছেন, “এনআইএ সরকারের হয়ে এখন ঠিক এই কাজটাই করছে – বিরোধী রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে তল্লাসি চালানো বা তাদের ভয় দেখানোর জন্য যেভাবে এতদিন সিআইএকে ব্যবহার করা হয়েছে।”

বিবিসি প্রকাশিত প্রতিবেদনে বহরমপুরের পাঁচবারের সাংসদ বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরীর যে বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে তাতে তিনি জানিয়েছেন, “ভারতে বিভিন্ন জঙ্গী হামলার ঘটনায় এর আগেও মুর্শিদাবাদের নাম এসেছে। বাংলাদেশের জামায়েতুল মুজাহিদিন বা জেএমবিরও এই জেলায় ঘাঁটি ছিল।”

“কিন্তু আল কায়দার মতো সংগঠন, ওসামা বিন লাদেন যার নেতা ছিলেন বা যারা আমেরিকার টুইন টাওয়ার ধ্বংস করেছে – এরকম একটা ভয়ঙ্কর, ভয়ানক সংগঠনের সঙ্গে মুর্শিদাবাদের যোগসূত্র? আমার কাছে এটা কিন্তু অত্যন্ত দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে”, মন্তব্য করেছেন তিনি।

অধীর চৌধুরীর দাবি, বর্তমান ভারত সরকার যেভাবে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করছে তাতে দেশের একটা বিরাট সংখ্যক মানুষের কাছে সঠিক বার্তা যাচ্ছে না। আর বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠন হয়তো সেটারই সুযোগ নিয়ে লোকজনকে দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছে।“

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here