শুভময় সেন,নিউজফ্রন্ট:-
সপ্তাহের শুরুতেই সকালবেলা মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদ থানার অর্ন্তগত বালির ঘাট (নলিনী বাগচি )সেতুতে ঘটে যায় এক মর্মান্তিক বাস দুর্ঘটনা। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতু ভেঙে প্রায় ষাটজন যাত্রীসহ ভান্ডাড়দহ বিলে পড়ে যায় উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার বাসটি। শিশু ও মহিলাসহ সরকারি মতে প্রায় ৩৭জনের(বেসরকারি মতে পঞ্চাশ) সলিল সমাধি ঘটে যায় সোমবার।
ঘটনাস্থল থেকে তিন কিলোমিটার দুরের দৌলতাবাদ থানা থেকে পুলিশ পৌছুতে সময় লেগে যায় দুঘন্টারও বেশি। ততক্ষনে মৌমিতা মণ্ডল সহ ন জনের কেউ সাঁতরে, কেউ গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় মানুষজনের প্রচেষ্টায় হাসপাতালে পৌঁছে যায়।পরে পুলিশ এলে বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিলে পুলিশ পিছু হটতে বাধ্য হয়।
এর কিছুক্ষণ পরে পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে বিরাট পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে কয়েক রাউন্ড গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে।
তারপর শুরু হয় উদ্ধারকাজ।ইতিমধ্যে দমবন্ধ অবস্থায় দীর্ঘসময় জলের নিচে থাকার পর মৃত্যু হয় বাকি যাত্রীদেরও- এমনটাই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।এরমধ্যে সরকারের মুখ বাঁচাতে কুয়াশার অজুহাত নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন তৃণমূল কংগ্রেসের যুবনেতা সৌমিক হোসেন।
আহত এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের কথামত একহাতে স্টীয়ারিং ও অন্য হাতে মোবাইল ফোনে কথাবলতে ব্যস্ত ছিলেন বেপরোয়া বাস চালক। যার ফল-এতজন মানুষের মৃত্যু।তারমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মৃতের পরিবার পিছু পাঁচ লাখ, গুরুতর আহতরা এক লাখ, আর জখম প্রত্যেকের জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা ক্ষতিপুরণ পাবে এই ঘোষণা করে সাত তাড়াতাড়ি সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ্য কাজ ফেলে পরিবহণ মন্ত্রী তথা মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমুল কংগ্রেসের পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী, করিমপুরের বিধায়ক মহুয়া মৈত্র, পরিবহন সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে আকাশপথে বহরমপুরে পৌঁছান। তারপর ঘটনাস্থল ঘুরে তিনঘন্টারও বেশি সময় জেলাশাসকের দপ্তরে মিটিং করে যখন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পৌঁছলেন তখন স্বজন হারানোর কান্নায় ভেসে যাচ্ছে হাসপাতালের মর্গ।ছোট বড় গাড়ি করে লাশ এনে জড়ো করা হচ্ছে হাসপাতালের মেঝেতে।চালু করা হয়েছে জেলাশাসকের দপ্তরে হেল্প লাইন ,হাসপাতালের হেল্পলাইন। ।বেদনাদায়ক এই দুর্ঘটনা’র বাইরে আর কোন কথা খরচ করলেন না জনগনের নেত্রী। ঘটনার তদন্ত হবে এর বাইরে সারাদিনে কোন কথা খরচ করেননি সেভ ড্রাইভ সেভ লাইফের প্রচারে ব্যস্ত জেলাশাসক পি ঊলাগনাথন কিংবা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার।বিরোধীদের মুখ বন্ধ করতে মুখ্যমন্ত্রী যতই তৎপরতা থাকুক না কেন সরকারী বাসের যে নিয়মিত পরিচর্যা হয়না এবং চালকরাও যে সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নন সে নিয়ে প্রশ্ন তুললেন তাঁরই দলের কয়েকজন নেতৃস্থানীয় সদস্য। সেভ ড্রাইভ সেভ লাইফ প্রকল্প নিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা যে শুধু খরচই হয়েছে তার বেশি কিছু হয়নি এই দিনের বাস দুর্ঘটনা সেই তত্বেই শিলমহর দিল বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞ মহল।
ইতিমধ্যে শুভেন্দু অধিকারী ও মহুয়াকে দেখভালের দায়িত্ব দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যখন হাসপাতাল ছাড়লেন অপ্রতূল আলোয় তখন উদ্ধারকাজ ব্যহত হওয়ায় এদিনের মত উদ্ধারকাজ বন্ধ রেখেছেন উদ্ধারকারিরা। নিখোঁজ যাত্রীদের আত্মীয় পরিজনদের অনেকেই হাঁসপাতালে তাদের খুঁজে না পেয়ে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় রাত কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন হাসপাতাল চত্বরেই।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584