বিদ্বেষের সাথে আপোষ কেন ফেসবুককে শমন পাঠাবে সংসদীয় কমিটি

0
30

নিজস্ব সংবাদদাতা, ওয়েব ডেস্কঃ

বিজেপির ক্ষেত্রে ফেসবুকের ‘নরম অবস্থান’ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় হুমকি দেওয়া হচ্ছে। করা হচ্ছে গালিগালাজ। এমনই অভিযোগ তুলে রবিবার দিল্লি পুলিশের দ্বারস্থ হলেন ফেসবুকের ভারত, দক্ষিণ এবং মধ্য এশিয়ার ‘পাবলিক পলিসি’-র অধিকর্তা আঁখি দাস। ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনিই নাকি বলেছিলেন, ‘ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দলের রাজনীতিবিদদের (বিধি) লঙ্ঘনে শাস্তি দিলে দেশে (ভারত) সংস্থা ব্যবসার সম্ভাবনা ধাক্কা খাবে।’

Mark Zuckerberg | newsfront.co
মার্ক জুকেরবার্গের সাথে ভারতে ফেসবুকের নীতি নির্ধারন প্রধান আঁখি দাস। ফাইল চিত্র

সম্প্রতি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তারপর থেকেই যুযুধান বিজেপি ও কংগ্রেসের বাকযুদ্ধ তুঙ্গে। মার্কিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের উপর নজর রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংসদের তথ্য-প্রযুক্তি সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান শশী থারুর। তিনি বলেছেন, ‘আমি অবশ্যই বিষয়টি খতিয়ে দেখব। এ বিষয়ে ফেসবুকের মতামত জানতে চাওয়া হবে।‘ সূত্রের খবর যে, সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে উঠে আসা বিষয়ের ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে ফেসবুককে আজই শমন পাঠানো হয়।

ব্যবসার স্বার্থে বিদ্বেষের সঙ্গে আপোসের অভিযোগ খারিজ করল ফেসবুক। সোমবার সংস্থার এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘সমস্ত ধরনের বিদ্বেষমূলক মন্তব্য বা হিংসা ছড়াতে পারে এমন প্রতিবেদনকে আমরা সব সময়ই নিষিদ্ধ করি। বিশ্বজুড়েই আমরা এই নীতি অনুসরণ করে থাকি। এ ক্ষেত্রে কোনও রাজনৈতিক অবস্থান বা দলীয় সহযোগিতা পাওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হয় না।’’

আরও পড়ুনঃ ফেসবুকে বিজেপি প্রভাব সরব রাহুল, পাল্টা টুইট রবির

যদিও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি আজ ইঙ্গিত দিয়েছে, মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে ফেসবুকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হতে পারে। কমিটির চেয়ারম্যান তথা কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর বলেন, ‘‘আমরা অবশ্যই বিষয়টি খতিয়ে দেখব এবং ফেসবুকের কাছে জবাব চাইব।’’

বিদ্বেষ ও হিংসার বিরুদ্ধে কড়া নীতির কথা জানালেও সেই নীতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে খামতি রয়েছে বলে আজ স্বীকার করে নিয়েছেন ফেসবুক মুখপাত্র। তাঁর কথায়, ‘‘তবে আমাদের আরও কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে। সেটা আমরা জানি এবং সেই মতো পর্যালোচনার কাজও চলছে। নিরপেক্ষ এবং ত্রুটিহীন ব্যবস্থা গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।‘ মার্কিন সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের জেরে ইতিমধ্যেই বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে কংগ্রেস-সহ বিরোধী শিবির। অভিযোগের তদন্তের জন্য যৌথ সংসদীয় কমিটি গড়ারও দাবি উঠেছে।

আরও পড়ুনঃ ওডিশা, তেলেঙ্গানায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, রেড অ্যালার্ট জারি মহারাষ্ট্রের ২জেলায়

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদন দাবি করা হয়, ভারতে বাণিজ্যিক ধাক্কার ‘আশঙ্কা’-য় বিজেপি নেতা-নেত্রীদের বিদ্বেষ ও উস্কানিমূলক পোস্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে ‘বিদ্বেষ রোধ আইন’ প্রয়োগে বাধা দিয়েছিলেন এ দেশে ফেসবুকের পাবলিক পলিসি এক্সিকিউটিভ আঁখি দাস। প্রতিবেদনে উল্লেখ, আঁখি দাস সংস্থার কর্মীদের বলেছিলেন, বিজেপি নেতাদের লংঘনকারী হিসেবে শাস্তি দিলে ভারতে ফেসবুকের বাণিজ্যিক ক্ষতি হতে পারে।

অভিযোগ, সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হিংসায় মদত দিতে ফেসবুকে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করেছিলেন তেলেঙ্গানার বিজেপি বিধায়কটি রাজা। কিন্তু সংস্থার বর্তমান ও প্রাক্তন কর্মীদের বক্তব্য অনুযায়ী ফেসবুক ইন্ডিয়ার পাবলিক পলিসি ডিরেক্টর আঁখি দাসের হস্তক্ষেপেই ওই বিধায়কের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের অভিযোগ উঠেছিল কপিল মিশ্র, অনন্ত হেগড়ে-সহ একাধিক বিজেপি নেতার বিরুদ্ধেও। কিন্তু সংস্থার কর্মীদের আঁখি স্পষ্ট বলে দেন, বিজেপি নেতাদের আইনভঙ্গকারী হিসেবে শাস্তি দিলে ভারতে ফেসবুকের ব্যবসায়িক ক্ষতি হতে পারে। এই বিষয়টিকে শাসক দলের প্রতি সংস্থার ‘পক্ষপাতিত্বমূলক পদক্ষেপ’ বলেই ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

সোমবার আঁখি দাস হুমকি পাচ্ছেন বলে অভিযোগ। তিনি দিল্লি পুলিশের সাইবার সেলে অভিযোগ জানিয়েছেন, তাঁর পরিচয় প্রকাশ্যে আসার পর একাধিক লোক তাঁকে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। আঁখির বোন রশ্মি দাস দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে এবিভিপির সভানেত্রী ছিলেন। এই পরিস্থিতিতে পুরো বিষয়টি নতুন মাত্রা পেয়েছে। কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেন আজ বলেন, ‘‘জেএনইউ-র প্রাক্তন এবিভিপি সভানেত্রী রশ্মির সঙ্গে আঁখির কী সম্পর্ক, বিজেপি সেটা প্রকাশ্যে জানাক।‘

রাহুল গান্ধীও বিজেপি এবং আরএসএস ফেসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপ নিয়ন্ত্রণ করছে বলে রবিবার অভিযোগ করেন।

কংগ্রেসের তোলা অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে রাহুল গান্ধীকে নিশানা করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ জানিয়েছেন, ‘যে হেরো কংগ্রেস নিজেদের দলের লোকেদেরও প্রভাবিত করতে পারে না, তারাই এক জিনিস বারবার বলতে থাকে যে সারা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করে বিজেপি এবং আরএসএস। ভোটের আগে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা এবং ফেসবুকের সঙ্গে তথ্য ব্যবহারের জন্য প্রকাশ্যে ধরা পড়েছিলেন আপনি। আর এখন আমাদের প্রশ্ন করার হঠকারিতা আসছে?’ ফেসবুকের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ নতুন নয়। এর আগেও মার্কিন কংগ্রেস ও ভারতীয় সংসদে সংস্থাকে তলব করা হয়েছে।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here