নিজস্ব সংবাদদাতা,পূর্ব মেদিনীপুরঃ
করোনার অতিমারি দাপটে বিশ্ব আজ দিশেহারা। দেশে দেশে মৃত্যুমিছিল। বিপর্যস্ত মানব সভ্যতা। অজানা শত্রু মারণ ভাইরাসের সাথে জীবন-যুদ্ধে ভীত আতঙ্কিত মানুষ আজ ঘরবন্দি। যে লড়াইয়ের অন্যতম হাতিয়ার লকডাউন।
ঠিক সেই সময় পাড়ায় পাড়ায়, মানুষের ঘরে ঘরে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনস্বাস্থ্য পরিষেবায় সম্মুখ সমরে আশাকর্মীর মহিলারা। প্রসূতি থেকে নবজাতকদের দীর্ঘমেয়াদী দেখভাল ও সরকারি পরিষেবার আওতায় আনার বিষয়তো ছিলই ,এর সাথে যোগ হয়েছে করোনার মত মহামারী প্রতিরোধে এক অসম লড়াই।
প্রতিটি বাড়িতে পৌঁছে প্রত্যেকটি মানুষের খোঁজখবর নেওয়া থেকে তাদের শারীরিক অবস্থার হালহকিকৎ বুঝে নিয়ে এলাকার সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো, পরীক্ষা-নীরিক্ষা সহ চিকিৎসার বিস্তারিত তথ্য, দিনক্ষণ ইত্যাদি নানা বিষয়ে দিনরাত এক করে আশাকর্মীরা খেটে চলেছেন খুবই স্বল্প মাসমাইনের বিনিময়ে।
আরও পড়ুনঃ রক্তের সংকটে এগিয়ে এল দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পুলিশ
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কোলাঘাট রাধামাধব মন্দিরে এদিন এলাকার বড়িশা, বাড়বড়িশা, কোলা,সাহাপুর সহ পনেরোটি গ্রামের পঞ্চাশজন আশাকর্মীদের সংকেত ক্লাবের পক্ষ হতে ‘বীরাঙ্গনা’ সম্মানে সম্মানিত করা হল। চন্দনের ফোঁটা, ফুলের মালা পরিয়ে শরীরে নতুন শাড়ি জড়িয়ে, শঙ্খ ও উলুধ্বনির মাধ্যমে প্রত্যেকের হাতে তুলে দেওয়া হয় করোনা-যুদ্ধে অ্যাম্বুলেন্স চালক শহীদ রাজু মন্ডল স্মৃতি স্মারক। সাথে ছিল মিষ্টি।
উল্লেখ্য, করোনা রোগীকে হাসপাতালে ভর্তির পথে কিছুদিন আগে এই এলাকারই যুবক অ্যাম্বুলেন্স চালক রাজু মন্ডল সহ এক করোনা রোগী পথ দুর্ঘটনায় মারা যান। এদিন রাজুর একমাত্র বোন ও ছোটভাই উপস্থিত থেকে আশাকর্মীদের হাতে তাদের মৃত দাদা রাজুর ছবি সম্বলিত সুদৃশ্য শোলার তৈরি রাখী পরিয়ে দেন।
বড়িশা গ্রামের আশাকর্মী তথা গৃহবধূ অনিতা মুখার্জি বলেন, “আমরা এখন যে লড়াইটা লড়ছি একজন যে কোন মহিলার কাছে খুবই কঠিন। মানুষের ঘরে ঘরে স্বশরীরে পৌঁছে কেবল করোনা নয়, তার সাথে নানা রকম ভিত্তিহীন গুজব-ভয়-ভীতি-আতঙ্ক ও কুসংস্কারের মতো সামাজিক ব্যধির সাথেও লড়তে হচ্ছে, মানুষকে প্রয়োজনে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠাতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কোন সময়সীমাও নেই, জরুরীভিত্তিতে রাতেও আমাদের ঘুরতে হচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ জামশেদ আলী স্মরণে স্মরণসভার আয়োজন
আমাদের নিয়ে আজকের এই আয়োজন ও সম্মানে অবশ্যই উৎসাহবোধ করছি।” এলাকার আর এক আশাকর্মী খাদিজা খাতুন বলেন,”শুধু এই এলাকার কেবল আমাদের নয়, চিকিৎসক ও নার্সদের বাইরে, গ্রামে ঘুরে ঘুরে আশাকর্মীরা দেশজুড়ে যে গুরুদায়িত্ব পালন করে চলেছেন তার জন্য প্রতিটি আশাকর্মীকে উৎসাহিত করা উচিত। এর জন্য এই উদ্যোগী সংস্থাকে ধন্যবাদ।”
আয়োজকদের পক্ষে উত্তম মুখার্জি বলেন,”গত বিশে মার্চ থেকে আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী করোনা জনিত যে বিরামহীন কর্মযজ্ঞ চলছে, তারই অঙ্গস্বরূপ এই জীবাণু-যুদ্ধে সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ আশাকর্মীদের সম্মান জানাতে এই বীরাঙ্গনা সম্মান প্রদান। আগামীদিনে আরও দেড়শজনকে আমরা এই সম্মান জানিয়ে তৃপ্ত হতে চাই।”
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584