শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের পদধ্বনি শুরু হতেই বিদ্রোহের সুর ধীরে ধীরে চড়া হচ্ছে শাসক দল তৃণমূলে। আমফানের পর পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে গাছ কাটার করাত প্রসঙ্গে আক্রমণ করে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছিলেন ক্রেতা সুরক্ষামন্ত্রী সাধন পাণ্ডে। তবে সাধনের বিদ্রোহী মনোভাব দলের কাছে খুব একটা অজানা নয়।

কিন্তু এবার আচমকা নাম না করে দলের বিরুদ্ধে বোমা ফাটালেন বনমন্ত্রী তথা ডোমজুড়ের বিধায়ক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, ‘কাজ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু করতে দেওয়া হয়নি।’ দলকে তাঁর পরামর্শ, ‘ধরতে হলে চুনোপুঁটিদের ছেড়ে রাঘববোয়ালদের ধরুন।’ আর দলের মধ্যেই এই বাউন্সারে বেশ কিছুটা বেকায়দায় তৃণমূল।
সম্প্রতি হাওড়া পঞ্চায়েত স্তরের তিন তৃণমূল নেতাকে আমফান দুর্নীতির অভিযোগে সাসপেন্ড করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বিষয় রাজীববাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘চুনোপুটিদের ধরে কিছু হবে না। যারা বড় এবং আসল, মাথা এর পিছনে রয়েছে তাদের সামনে আনতে হবে।
আরও পড়ুনঃ ফিরহাদের বিধায়কপদ খারিজ নয় কেন? মুখ্যসচিবকে চিঠি জাতীয় নির্বাচন কমিশনের
প্রচুর রাঘব-বোয়াল, রুই-কাতলা, ইলিশ আছে। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা সত্যি হয়তো যোগ্যতার সঙ্গে কাজ করতে চায়, অনেক জায়গায় হয়তো তাদেরকে ঠিকভাবে সেই সুযোগটা করে দেওয়া হয় না। যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী যে মাপকাঠিতে বিচার করা উচিত, তারা সেভাবে বিচার্য হয় না।’
তিনিও যে কাজ করতে চেয়েও যথার্থ কাজের সুযোগ পাননি, সেই চাপা ক্ষোভও এদিন চেপে রাখেননি বিধায়ক। তিনি বলেন, ‘অস্বীকার করব না, কিছুটা হলেও আমার ভিতর চাপা আক্ষেপ, দুঃখ, বেদনা রয়েছে। আমি তো মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমায় করতে দেওয়া হয়নি।’
আরও পড়ুনঃ লজ্জা থাকলে ক্ষমা চান! মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ অধীরের
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভা গঠন হওয়ার পর থেকে যে কয়েকজন মন্ত্রী কাজ করে নজর কেড়েছিলেন, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের মধ্যে অন্যতম। সরকারের প্রথম দফায় সেচমন্ত্রী হয়ে খুব অল্প সময়েই প্রচুর ভাল কাজের নিদর্শন রাখেন তিনি। কিন্তু দলের অভ্যন্তরীণ লবিবাজির জেরে বনমন্ত্রী করে দেওয়া হয় রাজীবকে। ভাল কাজ করাই সবক্ষেত্রে মাপকাঠি নয়, সেটাই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল।
তবে রাজীব যে এভাবে বোমা পাঠাবেন, সেটা আশা ছিল না তৃণমূলের। রাজীবের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মন্ত্রী অরূপ রায়কে সাফাই দেন, ‘দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় দলেই জানানো উচিত। এভাবে প্রকাশ্যে বলা ঠিক নয়। এতে দল অস্বস্তিতে পড়তে পারে।’ অন্যদিকে পুরমন্ত্রী তথা হাওড়া জেলা তৃণমূল পর্যবেক্ষক ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘দলের বিষয় দলের মধ্যেই থাকলেই ভালো।’ কিন্তু দলে কোণঠাসা রাজীবের কথা যে দল শুনবে না, সেটা সবচেয়ে ভাল বুঝে গিয়েছেন রাজীবই। তাই নিজের বক্তব্যে বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই তাঁর।
অন্যদিকে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা শুনে উৎফুল্লে বিজেপি শিবির। এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘ওখানে থেকে যে কাজ করা যায় না, সেটা উনিই পরিষ্কার করে জানিয়ে দিলেন।’
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584