পিতৃশোক কাটিয়ে বাবার স্বপ্ন পূরণের দিকে এগিয়ে যেতে চায় রিয়া

0
80

নিজস্ব সংবাদদাতা,পশ্চিম মেদিনীপুরঃ

পরীক্ষায় মাত্র কয়েক মাস বাকি৷ সেই সময়েই জীবনের চরমতম আঘাত পেয়েছিলেন চন্দ্রকোনা রোডের এ বছরের উচ্চমাধ্যমিক পরিক্ষার্থী রিয়া পাত্র। গত বছর আগষ্ট মাসে বাবা চঞ্চল পাত্র ব্রেন হেমারেজে মারা যান। রেখে যান স্ত্রী, দুই মেয়ে আর এক শিশু পুত্র কে। ফলে চরম সমস্যায় পড়েন রিয়ার পরিবার ।

riya patra | newsfront.co
রিয়া পাত্র৷ নিজস্ব চিত্র

সেই আঘাত কাটিয়ে উঠে রিয়া এবার ডাবচা নবকাল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সফল হয়েছে। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪১৩। তার এই সাফল্যে খুশী রিয়ার মা ঝুম্পা দেবী থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকা প্রায় সকলেই।পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা রোডের সাঁতবাঁকুড়ার চঞ্চল পাত্র এলাকার লরি ব্যাবসায়ী হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। আয়ও ভালোই করতেন।

আরও পড়ুনঃ রাত পোহালেই শহীদ দিবস, চলছে রাত জেগে প্রস্তুতি

ফলে স্ত্রী ঝুম্পা, দুই মেয়ে পূজা, রিয়া আর এক ছেলে অর্পণ কে নিয়ে সুখের সংসার ছিল। স্বপ্ন ছিল ছেলে মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে। সেই মতো বড়ো মেয়ে পুজাকে নার্সিং পড়তে ভিন রাজ্যে পাঠান। আর রিয়া কেও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর ডাক্তার করার স্বপ্ন বুনছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়৷ চঞ্চল বাবু ইন্টারনাল ব্রেন হেমারেজ হয়ে মারা যান৷

মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে রিয়ার মায়ের। তিন ছেলে মেয়েকে নিয়ে কি করবেন ভেবেই পাচ্ছিলেন না। স্বামী যে টুকু আয় করেছিলেন তা স্বামীর চিকিৎসার জন্য প্রায় শেষ। অবশেষে স্বামীর রাখা তিন খানা লরি বিক্রি করে সংসারের হাল ধরেন রিয়ার মা৷ বড়ো মেয়ে কে নার্সিং পড়ানোর খরচের পাশাপাশি রিয়া এবং তার ভাইয়ের ও পড়াশুনো চালিয়ে যান।

আরও পড়ুনঃ প্রাকৃতিক কারনে মার খাচ্ছে চা পাতার উৎপাদন

এদিকে বাবার মৃত্যুর আর কয়েক মাস পরেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। ফলে মানসিক দিক দিয়ে ভেঙ্গে পড়ে রিয়া। পরে বাবার মৃত্যু শোক কাটিয়ে বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে মনের জোর নিয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করে সে। বাবার বিদেহী আত্মার কথা স্মরণ করেই পরীক্ষায় বসে এবং নজর কাড়া সাফল্য এনে বাবার স্বপ্ন পূরণের দিকে একধাপ এগিয়ে যায়। কিন্তু এবার?রিয়ার মা ঝুম্পা দেবী জানান, স্বামীর স্বপ্ন ছিল রিয়া ভবিষ্যতে ডাক্তার হোক৷ কিন্তু তাঁর অবর্তমানে তাঁর স্বপ্ন পূরণ কিভাবে হবে? কারণ ডাক্তারী পড়তে অনেক খরচ৷ স্বামী মারা যাওয়ার পর সংসারের আয় বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

আরও পড়ুনঃ বিজেপির জেলা যুব মোর্চার সভাপতি পদ থেকে অপসারিত অনুরণ

লরি বিক্রির যে টাকা পেয়েছিলেন সেটাও প্রায় শেষের মুখে। তার উপর ছেলে রয়েছে একটি। কিভাবে স্বপ্ন পূরণ করবেন সেই দুশ্চিন্তা ই গ্রাস করছে ঝুম্পা দেবীকে৷রিয়ার বক্তব্য অনুযায়ী বাবা স্বপ্ন দেখতেন তার ডাক্তার হ ওয়ার ,কিন্তু তাদের পরিবারের বর্তমানে যে আর্থিক অবস্থায় রয়েছে তা ডাক্তারী পড়া দিবাস্বপ্নের মতো। তাই বাবার স্বপ্ন খানিকটা হলেও পূরণ করতে সে ফার্মাসিস্ট নিয়ে পড়তে চায়। বড়ো হয়ে এলাকার অসহায় মানুষের সেবা করতে চায়।

ডাবচা নবকলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, “রিয়া খুবই মেধাবী ও বিনয়ী ছাত্রী। ওর কাছে আমরা আরও ভালো ফল আশা করেছিলাম। কিন্তু পরীক্ষার কয়েক মাস আগেই বাবা মারা যাওয়াতে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে। সেই অবস্থাতেও যে ফল করেছে তাতে আমরা সকলেই খুশী ও গর্বিত।”

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here