শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
নিজের রাজ্যের প্যাকেজ নয়, সুরক্ষাহীনতাই তাদের চাকরিতে ইস্তফা দিতে বাধ্য করেছে। মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য তারা এই পেশা বেছে নিলেও তাদের সুরক্ষার বিষয়ে একবারও ভাবেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সোমবার পর্যন্ত প্রায় ৬০০ নার্স ইস্তফা দেওয়ার পর নার্সদের তরফে বিবৃতি দিয়ে এমনটাই জানানো হয়েছে সংবাদমাধ্যমকে।
ওই প্রেস বিবৃতি পত্রে তারা পরিষ্কার জানিয়েছেন, মণিপুর সরকারের দেওয়া কোনও প্যাকেজ তাদের ইস্তফা দিতে বাধ্য করেনি বা নিজের রাজ্যে ফিরে যেতে আকর্ষণ করেনি। বরং এ রাজ্যে যত দিনের পর দিন সংক্রমণ বেড়েছে, ততটাই ব্যক্তিগত ভাবে ঝুঁকি বেড়ে গিয়েছে তাদের। এমনকি তারা সামাজিক ভাবেও বিভিন্ন সমস্যার শিকার হয়েছিলেন। সেই কারণেই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ ঝড়ের রাতে কন্ট্রোল রুমেই থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী, জানালেন নিজেই
ফলে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ভেঙে পড়েছে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালগুলির পরিষেবা। এদের মধ্যে রয়েছেন মণিপুর, ত্রিপুরা, কেরালা, কর্ণাটক, ওড়িশা-সহ আরও একাধিক রাজ্যের নার্স। কি কি সমস্যা হচ্ছিল নার্সদের? ওই বিবৃতিতে তারা পরিষ্কার জানিয়েছেন, তাদের সামাজিক ভাবে পৃথকীকরণ করা হচ্ছিল। শ্রেণিগত থেকে লিঙ্গগত সমস্ত বৈষম্যের তাঁরা স্বীকার হচ্ছিলেন। যেখানে পিপিই, মাস্ক, গ্লাভসও দ্বিতীয় বার ব্যবহার করার কথাই নয়, সেখানে তাঁদের ফেলে দেওয়া পিপিই, মাস্ক, গ্লাভস ব্যবহার করতে বাধ্য করছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যার ফলে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ছিল।
আরও পড়ুনঃ শ্রীনগর এনকাউন্টারে দুই জঙ্গি নিহত
অনেকক্ষেত্রে চিকিৎসকদের ছাড় দিয়ে পুরোপুরি নার্সদের অতিরিক্ত ডিউটি দেওয়া হচ্ছিল। যেসব জায়গায় কলকাতায় তারা পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকেন, সেই জায়গাতেও অপমানের শিকার হতে হচ্ছিল। করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নিযুক্ত নার্সদের আলাদা থাকার ব্যবস্থা করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যার ফলে আমাদের হাসপাতাল থেকে ফিরে হস্টেলেই থাকতে হচ্ছিল। এর ফলে হস্টেলে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা ছিল।
কিছু হাসপাতাল আচমকা বন্ধ করে দেওয়া হলেও তাদের বেতন মিটিয়ে দেওয়া হয়নি। ভিন রাজ্যে তারা বিনা বেতনে থাকবেন বা খাবেন কিভাবে? এমনকি হাসপাতালে যথেষ্ট খাবার ছিল না। নার্সরা রেশন কার্ড হোল্ডার না হওয়ায় তারা সরকারি কোন খাদ্য সামগ্রী ও পেতেন না। অন্তত সরকার বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অথবা সাধারণ মানুষের সমর্থন থাকলে তারা শহর ছাড়ার কথা ভাবতেন না। কষ্টার্জিত জীবিকা সহজে কেউ ছেড়ে যেতে চায় না। মণিপুর সরকারের তরফে কোনও ভাতা বা প্যাকেজ দেওয়া হয়নি তাঁদের। একই কথা জানিয়েছেন সেরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং।
তিনি বলেন, ‘নার্সদের ফিরে যেতে বলেনি তাঁর সরকার। তাদের কোনও ভাতা বা প্যাকেজ দেওয়ার কথাও হয়নি। কিন্তু কেউ যদি কলকাতায় থাকতে অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তাহলে আমরা তো তাকে জোর করতে পারি না।‘
সোমবার নবান্নে ভিনরাজ্যের নার্সদের কলকাতা ছাড়া নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, মুখ্যসচিবের সঙ্গে বেসরকারি হাসপাতালগুলি কথা বলে বিকল্প পথ খুঁজে বার করতে হবে। দরকারে ৭ দিনের প্রশিক্ষণ দিয়ে হেলপার হিসেবে নিয়োগ করতে হবে স্থানীয় পুরুষ ও মহিলাদের। প্রয়োজনে এই দুর্দিনে অবসরপ্রাপ্ত নার্সরা কাজে যোগ দিতে চাইলে তাদের নিয়োগ করবে সরকার।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584