নিজস্ব সংবাদদাতা, ওয়েব ডেস্কঃ
উত্তর প্রদেশ আর দিল্লির বর্ডার অঞ্চলে লোনিতে একমাত্র ছেলে সলমনকে নিয়ে থাকতেন পেশায় সবজি বিক্রেতা আয়ুব আনসারী। ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে দাঙ্গা শুরু হয় দিল্লিতে, স্বাভাবিক ভাবেই আয়ুব আনসারির ও রোজগার বন্ধ হয়। ২৮ তারিখ অব্দি কোনরকমে চললেও আর কোনো রসদ না থাকায় বাধ্য হয়ে সবজি বিক্রি করতে বের হন শিব বিহার এলাকায়।
এক ঘন্টার মধ্যে ছেলে সলমনের কাছে পৌঁছয় বাবার রক্তাক্ত দেহ, শেষ যেকটি কথা তিনি বলতে পেরেছিলেন তা হলো, দুর্বৃত্তরা তাঁর নাম জানতে চায় বারেবারে তিনি হিন্দু না মুসলমান জানার জন্য; নাম জানার সাথে সাথেই ছুরির আঘাত নেমে আসে কারণ তিনি ধর্মে মুসলমান।
১৮ বছরের কিশোর সলমন বাবাকে হারিয়ে প্রায় স্মৃতিভ্রষ্ট, যেটুকু সে মনে করতে পারে তা হলো ২৮ তারিখে বাবার সাথে শেষ দেখা এবং তার বাবার বলা শেষ কথাগুলো। সলমন জানায়, বহুবার বারণ করা সত্বেও ওই দিন বাবা সবজির গাড়ি নিয়ে বেরোতে বাধ্য হন- বলেন কতদিন অভুক্ত থাকা সম্ভব? তারপরেই ফিরে আসে তাঁর রক্তাক্ত দেহ ।
আরও পড়ুনঃ বিচারব্যবস্থার অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ
সলমনের স্মৃতিতে পাঁচ মাস আগের ক্ষত এখনো রক্তাক্ত, তার বাবাকে কোন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি তাদের বাড়ির সামনে যখন ফেলে দিয়ে যায় দেখা যায় সারা শরীর রক্তে ভাসছে, অসংখ্য ছুরির আঘাত , মাথার খুলি ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। ১৮ বছরের কিশোর কখনও এই মানসিক আঘাত থেকে কোনদিন বেরিয়ে আসতে পারবে কিনা এই উত্তর সম্ভবত কারুর কাছেই নেই।
আরও পড়ুনঃ স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে শ্রীনগরে জঙ্গি হামলায় নিহত ২ পুলিশ কর্মী
দিল্লি সরকার যদিও দাঙ্গায় নিহতদের জন্য ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করে, কিন্তু তার জন্য যা কিছু প্রমাণ প্রয়োজনীয় তা সলমনের কাছে ছিলোনা। পরবর্তী কালে তার আধার নম্বর, প্যান কার্ড, ব্যাংকের খাতা তৈরি হয় এবং আপাতত সলমন সেই ক্ষতিপূরণ পাওয়ার প্রতীক্ষায়।
ঘটনার পাঁচ মাস কেটে গেছে, সলমন আজও জানেনা বিচার কি। আদৌ বিচার পাবে কি সে? সলমন নিজে তেমন পড়াশুনা জানে না, কে বোঝাবে তাকে কোর্ট, বিচারের গূঢ়তত্ত্ব। ১৮ বছরের কিশোর হয়তো দাঙ্গার মানে বুঝেছে, রক্তের মানে বুঝেছে। কিন্তু বিচারের দুরূহ মানে কি সত্যিই কোনোদিন বুঝবে সলমন?
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584