ওয়েব ডেস্ক, নিউজফ্রন্টঃ
আধার নম্বরের সঙ্গে রেশন কার্ড সংযুক্ত না থাকায় প্রায় তিন কোটি রেশন কার্ড বাতিল করে দেয় কেন্দ্র বলে অভিযোগ। সমস্যায় পড়েন বহু মানুষ। এই পরিস্থিতিতে পড়ে রেশন পাননি ঝাড়খণ্ডের এক দলিত পরিবার। ওই দলিত পরিবারের দুই মহিলা সদস্য কৌলি দেবী এবং তাঁর বোন গুড়িয়া দেবী দাবি করেন রেশন না পেয়ে অভুক্ত থাকার কারণে ক্ষুধামৃত্যু হয়েছে কৌলি দেবীর মেয়ে সন্তোষীর। এ নিয়ে দেশের শীর্ষ আদালতে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন তাঁরা।
বুধবার এই মামলায় পর্যবেক্ষণে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, আধার নম্বরের সঙ্গে রেশন কার্ডের সংযুক্তিকরণ না করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার প্রায় ৩ কোটি কার্ড বাতিলের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়ে কেন্দ্র ছাড়াও রাজ্য সরকারগুলির জবাব চেয়ে নোটিস পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে এই নোটিসের জবাব দিতে হবে বলেও বুধবার জানিয়ে দেয় আদালত।
সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এস এস বোবদের নেতৃত্বাধীন বিচারপতি এএস বোপান্না এবং বিচারপতি ভি রামসুব্রহ্মণ্যমের বেঞ্চের কাছে ওই দলিত পরিবারের আইনজীবী কলিন গঞ্জালভেসের আর্জি, রেশন কার্ড বাতিল করাটা মুখ্য বিষয় হলেও এর সামগ্রিক প্রতিক্রিয়ার বিষয়টিতেও নজর দেওয়া উচিত আদালতের। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল আমন লেখি পাল্টা দাবি করেছেন, রেশন কার্ড বাতিলের ফলে দেশে ক্ষুধামৃত্যুর মতো কোনও ঘটনা ঘটেনি। বৈধ আধার রয়েছে এমন কাউকে রেশন দেওয়া থেকে বঞ্চিতও করা হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকার এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই তাদের বক্তব্য জানিয়েছে। তবে কৌলি দেবীদের আইনজীবীর মতে, সম্পূর্ণ বিষয়টি একমাত্রিক প্রেক্ষাপটে বিচার না করে, বৃহত্তর বহুমাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে বিচার করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বলেন, “আধার নম্বরের বিষয়টি জড়িত থাকার কারণে আমরা কেন্দ্রের জবাব চাইছি। এটি পৃথক কোনও মামলা নয়। এ বিষয়ে চূড়ান্ত শুনানি হবে। ৪ সপ্তাহের মধ্যে নোটিসের জবাব দিতে হবে।” আদালত আরো বলে যে, ২০১৩ সালের জাতীয় খাদ্যসুরক্ষা আইনের ১৪, ১৫ এবং ১৬ ধারার আওতায় এ ধরনের অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য ঠিক কি কি পদক্ষেপ করা হয়েছে,বিশেষভাবে সেই বিষয়টি আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে জানাতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর, বৈধ আধার নম্বর না থাকায় ক্ষুধামৃত্যুর অভিযোগ নিয়ে সমস্ত রাজ্য সরকারের কাছে জবাব তলব করে সুপ্রীম কোর্ট। কেন্দ্র এ প্রসঙ্গে দাবি করে যে রিপোর্ট প্রকাশিত, রেশন না পেয়ে অনাহারে মৃত্যুর ঘটনাগুলি ঘটেনি। অন্যদিকে, ঝাড়খণ্ডের সিমদেগা জেলার বাসিন্দা কৌলি দেবী এবং গুড়িয়া দেবীর দাবি, তাঁদের পরিবারের কাছে বৈধ আধার নম্বর না থাকার কারণে মার্চ, ২০১৭ থেকে তাঁদের রেশন দিতে অস্বীকার করা হয়। তার জেরে ২০১৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর অনাহারে মারা যায় কৌলি দেবীর ১১ বছরের মেয়ে সন্তোষী। তাঁদের আইনজীবী দাবি করেছেন, আধারের সঙ্গে রেশন কার্ডের সংযুক্তিকরণ না করার কারণেই ওই গরিব দলিত পরিবারেকে রেশনের খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়নি। প্রধান বিচারপতি বোবদে বলেন, “এ ধরনের একটি মামলা বম্বে হাইকোর্টে উঠেছে। আমার মনে হয়, সংশ্লিষ্ট হাইকোর্টে এ বিষয়ে মামলা দায়ের করাই উচিত।”
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584