শ্যামল রায়,কালনাঃ
আসন্ন লোকসভা ভোটে এই প্রথম ভোট দিতে চলেছেন কালনার যৌনপল্লীর যৌনকর্মীরা।বিগত কয়েক বছর কেউ, পাঁচ বছর, কেউ দশ বছর আবার কোনও যৌন কর্মীরা কুড়ি বছর পরেই এই লোকসভা ভোটে প্রথম নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চলেছেন।
তাই খুশির হাওয়া বইছে কালনার যৌন কর্মীদের মধ্যে।দীর্ঘদিন ধরে কালনার কদম তলায় যৌনপল্লিতেই তাঁরা বসবাস করলেও তাঁদের নিজের পরিচয় বলতে ছিলনা কোনও ভোটার পরিচয় পত্র।যার জন্যই ভোট দানের অধিকার থেকেই বঞ্চিত ছিলেন তাঁরা। গণতান্ত্রিক ভারতের নাগরিক হয়েও নির্বাচনের দিন কিছুই করার থাকত না চামেলি, সোনালি,রেশমিদের(নাম পরিবর্তিত)।
আরও পড়ুনঃ পরিযায়ী শ্রমিকের কর্মস্থলে ভোটদানের আহ্বান জানিয়ে জেলা নির্বাচন আধিকারিকের চিঠি
কিন্তু নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে সম্প্রতি একাধিক যৌনকর্মীর নাম ভোটার তালিকায় নথিভুক্ত হয়েছে নাম পেয়েছেন সচিত্র পরিচয়পত্র।ফলে কদমতলার যৌনপল্লী এখন সরকার নির্বাচনে তাদের অধিকার প্রয়োগের অধিকার পেয়ে উৎফুল্ল।
রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে ভাগ্যচক্রে এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে উঠেছেন বেশ কয়েক জন যৌনকর্মী।বহু বছর ধরে তাঁরা এখানেই বাস করে আসছেন।ফিরে যাননি অন্য কোথাও।ঘর, সংসার বলতে সবই এখানে। কিন্তু আদি বাসিন্দা না হওয়ায় এত দিন তাঁদের ছিলই না কোনও ভোটার পরিচয়পত্র।
লোকসভা নির্বাচন হোক আর বিধানসভা কিংবা পৌরসভা নির্বাচনের অংশ গ্রহণ করার অধিকার পাননি কখনো তাঁরা।শুধু তাই নয়,ভোটার কার্ড না থাকায় প্রয়োজনীয় সরকারি সাহায্য থেকেও বঞ্চিত হয়েছে তাঁরা।অবশেষে এই সমস্ত যৌনকর্মীদের ভোটাধিকার দিল জেলা নির্বাচন দফতর।গত কয়েক মাস আগেই এই এলাকার ৬৩ জন মহিলারা তাঁদের ভোটার কার্ড হাতে পেয়েছে।
এর আগেও ২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত সময়ে ওই এলাকার একাধিক মহিলা ও পুরুষ ভোটাধিকার পেয়েছেন। যারা সকলেই এই প্রথমবাবের জন্য ভোট দিতে যাবেন।এই যৌন কর্মীদের মধ্যেই চামেলি, সোনালি,রেশমিরা জানালেন, তাঁরা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে এসে বসবাস করছেন।চামেলি দেবী ৩০ বছর আগেই এখানে এসেছেন।এতদিন বহু ছোটাছুটি করেও পাননি ভোটার কার্ড।সোনালিদেবীও আছেন ১২ বছর ধরে।
অনেকবার ভোটার কার্ড করার জন্য সরকারি অফিসে গেলেও ভোটার কার্ড পাননি তিনি।কিন্তু প্রশাসনের উদ্যোগে এই বারই প্রথম ভোটার কার্ড পেলেন তাঁরা।যা নিয়েই খুশি হাওয়া এলাকায়। স্থানীয় কাউন্সিলর সুনীল চৌধুরী বলেন,” এই মহিলারা দীর্ঘদিন আমাদের এলাকায় রয়েছেন।তাঁরা ভোট দানের অধিকার পাওয়ায় আমরা খুবই খুশি।” কালনা মহকুমা শাসক নীতেশ ঢালী বলেন,” সমস্ত ভোটারদের ভোট দানের অধিকার দেওয়া হচ্ছে।কেউ বাদ যাবেনা।”
এর কয়েক মাস আগেই বর্ধমানের মহাজুন্টুলিতেও নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে ক্যাম্প করে যৌন কর্মীদের ভোটার পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে।যা নিয়েই প্রশাসনের বক্তব্য ভোট দানের অধিকারের বাইরে যাতে কেউ না থাকে।প্রসঙ্গত, এই বছর পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনের নির্বাচনী আইকন হয়েছে ভোট্টু।যেখানে সকলকে ভোট দানে এগিয়ে আসতে বলা হচ্ছে।প্রথম ভোট দেবেন যৌনকর্মীরা তাই অনেকের কাছেই যেন এটা খুশির খবর হয়ে উঠছে। অর্থাৎ কালনার যৌন পল্লীতে যারা ভোট দেবেন তাদের মধ্যে আলাদা একটা অনুভূতির ছোঁয়া লক্ষণীয়।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584