একসাথে এতো পরিযায়ী শ্রমিক ফেরত পাঠালে রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি বিগড়াবেঃ মুখ্যমন্ত্রী

0
49

শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ

রাজ্যের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই একের পর এক পরিযায়ী শ্রমিকদের ট্রেন পাঠাচ্ছে কেন্দ্র সরকার। ভিন‌‌ রাজ্য থেকে যাঁরাই আসছেন, তাঁদের অনেকেই সংক্রমিত। একসঙ্গে এত লোককে পাঠালে পরীক্ষা করাও সম্ভব হবে না। ফলে রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি বিগড়ে যেতে পারে এবং তার দায় থাকবে কেন্দ্রীয় সরকারেরই। রাজ্যের সঙ্গে পরিকল্পনা করে এ বিষয়ে পদক্ষেপ করা উচিত ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের। বুধবার নবান্নে জেলাশাসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের পর প্রশাসনিক বৈঠকে এমনটাই বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Mamata Banerjee | newsfront.co
ছবিঃ মমতা ব্যানার্জি ফেসবুক পেজ থেকে স্ক্রিনশট

এ দিন প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করা হচ্ছে। সিইএসসি জানিয়েছে, ৩৩ লক্ষ গ্রাহকের মধ্যে বুধবার সন্ধ্যার মধ্যে ৩২ লক্ষ ৭ হাজার গ্রাহকের বাড়িতে বিদ্যুৎ ফিরবে। দ্রুত নদীবাঁধ মেরামত করা হচ্ছে। জেলায় জেলায় টাস্ক ফোর্স গঠন করা হচ্ছে। টাস্ক ফোর্সে বিডিও-আইসি-বিধায়কেরা থাকবেন। ত্রাণসামগ্রী সমস্ত মানুষদের কাছে পৌঁছে দিতে বলেছি জেলাশাসকদের।

এর পরেই রাজ্যের করোনা পরিস্থিতির সাম্প্রতিক অবনতির জন্য কেন্দ্রকে দায়ী করলেন মুখ্যমন্ত্রী। আক্রমণ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকেও। তিনি বলেন, করোনা নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা হচ্ছে। আমাদের সঙ্গে কথা বলে কেন্দ্র পরিযায়ীদের নিয়ে পরিকল্পনা করতে পারত। তা না করেই পর পর ট্রেন পাঠানো হচ্ছে। আমফান পরবর্তী সময়ে আমরা কিছুদিন বন্ধ রাখতে বলেছিলাম। কিন্তু একসঙ্গে ৩৬টি ট্রেন মুম্বই থেকে ছাড়া হচ্ছে বলে জানলাম।

আরও পড়ুনঃ দিলীপকে ওপেন চ্যালেঞ্জ রাজীবের

ভিন রাজ্য থেকে যাঁরাই আসছেন, তাঁদের অনেকেই সংক্রমিত। এত লোককে পরীক্ষা করব কী করে? রাজ্যে করোনা সংক্রমণ বাড়লে দায় কে নেবে? এভাবে চললে রাজ্যের করোনা-পরিস্থিতি ফের খারাপ হতে পারে। সংক্রমণ ঠেকাতে রেল মন্ত্রকের কোনও দায় নেই? একসঙ্গে লক্ষ লোক এলে কী করা যাবে? রাজ্যে ইতিমধ্যেই ৫ লক্ষ লোক এসে গিয়েছে। মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, চেন্নাই, দিল্লি থেকে পরিযায়ীরা আসছেন। এ সব জায়গা থেকে এলেই হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। এ ছাড়া স্কুলে স্কুলে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।

এর পরেই তিনি সরাসরি আক্রমণ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে। তিনি বলেন, ‘আমি তো বলেছিলাম অমিত শাহকে, এত টিম পাঠাচ্ছেন পাঠান। কিন্তু আপনার যদি মনে হয়, ওয়েস্ট বেঙ্গল গভর্নমেন্ট করতে পারছে না তাহলে আপনি নিজে নিন না। উনি বলেছেব সরকার ফেলব না। ওরা আমাদের পলিটিক্যালি ডিসটার্ব করতে গিয়ে বাংলার সর্বনাশ কেন করে জানি না। আমাকে যত খুশি ডিসটার্ব করুন। একটা প্ল্যানিং তো করতে টাইম দেবেন।

আরও পড়ুনঃ ৩০শে জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে রাজ্যের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: শিক্ষা মন্ত্রী

তিনি বলেন ‘একদিকে দুর্যোগ, একদিকে করোনা, আর একদিকে একসাথে সব পাঠিয়ে দিচ্ছেন। আমাদের সঙ্গে পরামর্শ না করে এটা করেছেন। আমরা যে লিস্ট করে দিয়েছি সেই লিস্ট আপনারা মানেননি। আপনারা আপনাদের রাজনৈতিক মর্জি মতো গায়ের জোরে এই কাজগুলো করছেন। তাতে রাজ্যের বিপদ বাড়ছে বুঝতে পারছেন না? এতবড় দুর্যোগ। দুর্যোগ সামলাবো না আপনাদের চাপিয়ে দেওয়া রাজনীতি সামলাবো? সব কিছু অতিরিক্ত করছেন আপনারা। এত লক্ষ লক্ষ লোককে কোয়ারেন্টাইন করার মেশিনারি আমার কোথায়? কেন্দ্রীয় সরকারেরও কি এত লোককে কোয়ারেন্টাইন করার পরিকাঠামো রয়েছে?’

এর পরই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘আমি যদি না পারি সেন্টার নিজে টেক কেয়ার করুক না এই কোয়ারেন্টাইন সেন্টারগুলোকে। আমি তো বলেছিলাম অমিত শাহকে, এত টিম পাঠাচ্ছেন পাঠান। কিন্তু আপনার যদি মনে হয় ওয়েস্ট বেঙ্গল গভর্নমেন্ট করতে পারছে না তাহলে আপনি নিজে নিন না। আপনি নিজে করোনাটাকে সামলান, আমার কোনও আপত্তি নেই। তিনি সেদিন আমাকে বলেছিলেন, নেহি নেহি, কুছ নেহি হুয়া গভর্নমেন্টকো হম কেয়সে তোড় সাকতা হ্যায়। তোমরাই লকডাউন করেছিলে। এখন এভাবে এত পরিযায়ী শ্রমিক পাঠিয়ে দিলে করোনা পরিস্থিতি বিগড়ে গেলে সেই দায় এড়াতে পারবে না কেন্দ্র সরকার।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here