নিউজফ্রন্ট, ওয়েবডেস্কঃ
ইরানের কুদস বাহিনীর প্রধান এবং ওই দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি জেনারল কাসেম সোলেইমানির মৃত্যুর পর দেশ জুড়ে নেমে এসেছে হিংসার বাতাবরণ এবং অরাজকতা। নিজের দেশে বিপুল জনপ্রিয় ছিলেন সোলেইমানি। দেশের লোক চোখ বন্ধ করে আল্লাহ বলতে বুঝত সোলেইমানিকেই। সেই মাসিহাকে যখন আমেরিকার সিআইএ যুদ্ধবিমান দিয়ে ঝাঁঝরা করে দিল, তারপর স্বাভাবিকভাবেই প্রতিহিংসার খুন জমেছে শত শত ইরানি সফেন বুকে।
সোলেমানি নিজেও জানতেন তিনিই মধ্যপ্রাচ্যে সিআইএ-র ১ নম্বরের টার্গেট, তবু একের পর এক আমেরিকা বিরোধী সশস্ত্র সংগঠন তৈরি করা থেকে পিছু হঠে আসেননি। একদিকে তিনিই ছিলেন গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ও পারস্য উপসাগর এলাকায় ইরানের প্রধান স্ট্র্যাটেজি নির্মাতা। পাশাপাশি হিজবুল্লা, হামাস-সহ আমেরিকা বিরোধী সব সশস্ত্র গোষ্ঠীর ক্যাপ্টেনের ভূমিকাও ছিল তাঁর।
প্যালেস্তাইন, সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন, লেবানন জুড়ে সোলেমানির গোপন কর্মকাণ্ড বিস্তৃত ছিল। একটানা ২২ বছর ধরে তিনি কুদস বাহিনীকে সুসংহত করেছেন। আমেরিকা যাদের ঠেকাতে বারবার হিমশিম খেয়েছে, সেই কুদস বাহিনী দায়িত্ব নিয়ে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে একের পর এক শিয়া মিলিশিয়া বাহিনী তৈরি করেছে।
ইরানকে শায়েস্তা করতে হিমশিম খেয়েছে আমেরিকা, ইজরায়েল, সৌদি আরব। এই তিনটি দেশের মধ্যে গোপনে তথ্য সংগ্রহকারী ছড়িয়েছিলেন সোলেইমানি। সিরিয়ায় আইএস-কে হঠানোর যুদ্ধে তাঁর নির্দেশিত পথেই যুদ্ধ করেছে শিয়া মিলিশিয়া বাহিনী ‘পপুলার মবিলাইজেশন ইউনিট’। সোলেইমানি নিজে সেই সময়ে বিভিন্ন যুদ্ধফ্রন্টে উপস্থিত হয়ে সাহস জুগিয়েছেন লড়াই করার।
কোনও একটি স্বাধীন দেশের প্রধান বা সেনাপ্রধানকে অন্য দেশে নিয়ে গিয়ে খুন করা কার্যত সন্ত্রাসমূলক কাজ। সোলেমানির কাজকর্ম আমেরিকার কাছে অগ্রহণযোগ্য বা অপ্রাসঙ্গিক মনে হলেও তাঁকে অতর্কিতে হত্যার অধিকার তাদের কারও নেই। সোলেইমানির মৃত্যুতে দেশের আপামর জনসাধারণ খেপে উঠেছে।
সোলেইমানির হত্যার পরই ইরাকের তদারকি সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে সেদেশের পার্লামেন্টে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের দাবিতে প্রস্তাব পাশ করানো হয়েছে। যদিও আমেরিকা সেনাবাহিনীর বহর বাড়িয়ে সেনাকর্মীদের ঝামেলা বাড়িয়েছে। আসলে সোলেইমানিকে হত্যা করে ইরাকে মোতায়েন নিজেদের সেনাকর্মীদেরই ঝামেলা বাড়িয়েছে আমেরিকা।
এদিকে ইরাক জুড়ে বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া গোষ্ঠীর দাপট বেড়েছে গত কয়েক বছরে। তারাই দৈনন্দিন চোরাগোপ্তা হামলায় ব্যস্ত রেখেছে মার্কিন বাহিনীকে । সোলেইমানি হত্যার বদলা নিতে এই মিলিশিয়া বাহিনীগুলো ইরাক-সহ গোটা মধ্যপ্রাচ্যেই তাদের আমেরিকা বিরোধী সশস্ত্র কার্যক্রম এখন আরও বৃদ্ধি করবে সেটাই প্রত্যাশিত ।
রাজনৈতিক মহলের অনেকেই এবং ইতিহাসবিদরা জানাচ্ছেন, ট্রাম্প ২০১৮ সালে একপেশে ভাবেই ইরানের সাথে পারমানবিক চুক্তি বাতিল করেন। পাশাপাশি একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইরানের উপর। এসব নিয়েই ইরানবাসীরা খেপে ছিল দীর্ঘদিন ধরে। তারপরে জেনারল কাসেম সোলেইমানির হত্যা তাদের সুপ্ত যন্ত্রণা এবং জ্বালাকে উস্কানি দেয়। ফলত আমেরিকার বিরুদ্ধে ক্ষোভ এবং সোলেইমানির মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে প্রতিবাদে নামে তারা।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584