মান ভাঙল না বৈশাখীর, মিছিলে অনুপস্থিত শোভনও! অস্বস্তিতে বঙ্গ বিজেপি

0
64

উজ্জ্বল দত্ত, কলকাতাঃ

খিদিরপুর থেকে শুরু হয়েছিল বিজেপির মিছিল। পুলিশ বিজেপির বাইক মিছিল করতে অনুমতি না দিলেও পায়ে হেঁটে মিছিল করতে মৌখিক সম্মতি দিয়েছিল। এই মিছিলে মধ্যমনি থাকার কথা ছিল শোভন চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

bjp member | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

কিন্তু দু’জনেই এদিন এই রোড শো কে এড়িয়ে যান। অথচ মিছিলের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে সপ্তাহ দুয়েক আগেই রাজ্যে ঘুরে গিয়েছেন অমিত শাহ। ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার বার্তা দিয়ে গিয়েছেন।

কিন্তু খিদিরপুরে বিজেপি-র পূর্ব নির্ধারিত মিছিলে ঠিক তার উল্টো ছবিটাই ধরা পড়ল। যে মিছিলকে গেরুয়া শিবিরে শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘গ্র্যান্ড’ লঞ্চ হিসেবে ধরা হচ্ছিল, ‘মান-অভিমান দেখাতে গিয়ে’ নিজেরাই তাঁরা তা ভেস্তে দিলেন। তাতে শোভন-বৈশাখীর কতটা ক্ষতি হল, তা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও, নির্বাচনের আগে এই মিছিল বিজেপি-র বিড়ম্বনা বাড়াল।

সোমবার বিজেপির এই মিছিলের আসল উদ্দেশ্য ছিল গেরুয়া শিবিরে শোভন-বৈশাখীকে প্রতিষ্ঠা দেওয়া। কারণ দেড় বছর আগে দলে যোগ দিলেও, এখনও পর্যন্ত বিজেপির কোনও কর্মসূচিতে সক্রিয় ভাবে অংশ নিতে দেখা যায়নি তাঁদের। কলকাতা জোনে শোভনকে পর্যবেক্ষক এবং বৈশাখীকে সহ-আহ্বায়ক নিযুক্ত করে গতমাসে সেই গেরো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেন বিজেপি নেতৃত্ব।

আরও পড়ুনঃ শোভনের নেতৃত্বে মিছিল শুরু হতে চলেছে কলকাতায়, তৈরি পুলিশও

কিন্তু মিছিল ঘিরে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি যখন তুঙ্গে, সেইসময় রবিবার রাতেই তাল কাটে। ভুবনেশ্বর থেকে ফিরেই মিছিলে যোগ দেওয়া নিয়ে বেঁকে বসেন বৈশাখী। কলকাতা জোনের কমিটিতে তাঁর পাশাপাশি শঙ্কুদেব পণ্ডাকে কেন সহ-আহ্বায়কের পদ দেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

পরিস্থিতি সামাল দিতে রাতেই তাঁদের গোলপার্কের বাড়িতে ছুটে যান দেবজিৎ সরকার, রাকেশ সিংরা। যান শঙ্কুদেব নিজেও। কিন্তু বৈশাখী সাফ জানিয়ে দেন, শঙ্কুদেব থাকলে মিছিলে অংশ নেবেন না তিনি। বৈশাখী বেঁকে বসায় শোভনও এই মিছিলে যোগদেননি বলে খবর।

আরও পড়ুনঃ ২০২০-তে নারী নির্যাতনের রেকর্ড অভিযোগ! বেশিরভাগই গার্হস্থ্য হিংসা, শীর্ষে যোগী রাজ্য

তবে শোভন-বৈশাখী থাকুন বা না থাকুন, শঙ্কুদেব পণ্ডা এই মিছিলে আসছেন বলেই গতকাল রাত পর্যন্ত জানতেন বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু সোমবার সকালে মিছিল বেরনোর আগে বেঁকে বসেন শঙ্কুদেবও। তাতেই নাস্তানাবুদ হয়ে পড়েন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব।

সকাল থেকে হেস্টিংসে বিজেপির কার্যালয়ে শুধু ঘর-বার করতে দেখা যায় রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়ও সেখানে এসে উপস্থিত হন। পালা করে ফোনে শোভন, বৈশাখী এবং শঙ্কুদেবের মান ভাঙানোর প্রচেষ্টা শুরু হয়। শেষমেশ হস্তক্ষেপ করতে হয় এ রাজ্যে বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ-পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেননকেও।

আরও পড়ুনঃ ছবি তুলে হাতে-হাতে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড মানিকপাড়ায়

কিন্তু শত চেষ্টা করেও তিন জনের কারও মান ভাঙানো যায়নি। এ দিকে বাইরে তখন আবেগে ভাসছেন বিজেপি সমর্থকরা। তাই শেষমেশ শোভন, বৈশাখী এবং শঙ্কুদেবকে ছাড়াই সাড়ে ৩টেয় মিছিল বার হয়। তাতে যোগ দেন বাংলায় দিলীপ, মুকুল, এ রাজ্যে বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহ এবং অন্যান্যরা।

প্রথমে মিছিলে না থাকার সিদ্ধান্ত নিলেও, পরে মিছিলে যোগ দেন দেবজিৎও। শোভন-বৈশাখীর মিছিলে না থাকা নিয়ে প্রশ্ন করলে কৈলাস বলেন, ‘‘মিছিলে কে এল, কে না এল, তা বড় কথা নয়। এটা বিজেপির মিছিল। আমার আমন্ত্রণ রয়েছে, তাই যাচ্ছি।’’ তবে ভোটের আগে রাজ্য নেতৃত্বের মধ্যে এই সামঞ্জস্যের অভাব বিজেপির অস্বস্তি বাড়ল বলেই মনে করা হচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ পাঁশকুড়ায় বনমালী কলেজে ফি-মুকুবের দাবিতে পড়ুয়াদের অবস্থান বিক্ষোভ

এদিন বিজেপির সুসজ্জিত এই ‘আর নয় অন্যায়ের’ মিছিল যখন এগিয়ে চলছিল, পুলিশ এই মিছিলের অনুমতি না দিলেও আগাগোড়া মিছিলকে ঘিরে ছিল কলকাতা পুলিশ কর্মী ও পুলিশের জওয়ানরা। মিছিলের মাঝখানে ছিল একটি লরি। সেই লরিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীদের নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন মুকুল-কৈলাস-অর্জুন-দেবজিৎরা। এই পায়ে হাঁটা মিছিলের পিছনে পিছনে ছিল বিজেপির সুসজ্জিত বাইক বাহিনী।

এই মিছিল এগিয়ে যাবার সময়ে একবারই তাল কাটে। সেটা হল মিছিলটি যখন খিদিরপুরের ওয়ার্ল্ড মোড়ের কাছে আসে। সেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের লোকজন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ও কলকাতার মেয়র ও মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের ছবি নিয়ে মাইকে বাজিয়ে গান বাজাতে থাকে।

আরও পড়ুনঃ কাটোয়া মহকুমা জুড়ে বন্ধ এটিএম পরিষেবা, হয়রানির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা

সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে।কিন্তু যখন মুকুল রায় ও কৈলাসদের নিয়ে গাড়ি এই মঞ্চের পাস দিয়ে যাচ্ছিল, তখন তৃণমূলের এই অনুষ্ঠান স্থল থেকে ইঁট পাটকেল, ও জুতো ছোঁড়া হয় এই গাড়িতে বলে অভিযোগ। মুকুল-কৈলাসদের নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের ঢাল দিয়ে জুতো ও ঢিল থেকে নেতাদের রক্ষা করেন। এরপর বিজেপির এই মিছিল নিরাপদেই তাদের নির্বাচন অফিস(হেস্টিংস অফিসে) এ পৌঁছে যায়।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here