ঈপ্সিতা নায়ক
বাড়ির চার দেওয়ালের মাঝেই এখন আটকে জনজীবন। করোনার করাল গ্রাসে শহর কলকাতাও এখন অসুস্থ, পৃথিবীর মতোই। তার স্বাভাবিক গতি হারিয়ে স্তব্ধ সে এখন। শুধুই হতাশা, আতঙ্ক ঘিরে ধরছে তিলোত্তমাকে।আর এই সময়ে তাকে সুস্থ করে তুলতে মানুষের একমাত্র করণীয় হল লকডাউনকে সমর্থন করা।কোয়ারেন্টিনের দিনগুলো হয়তো সহজ নয় কিন্তু এটাই নিরাময়ের একমাত্র উপায়।
ঘরবন্দি হয়ে দিন কাটাতে আদতে ভালো লাগছে না কারোরই। এই দমবন্ধকর পরিবেশে শিশুমন ঠিক ততটাই বিচলিত। আমরা আমাদের মনকে সান্ত্বনা দিলেও শিশুদের কাছে যেন এই সময় দুর্বিষহ, গ্রহণ লেগেছে তাদের মজা-দুস্টুমির দিনগুলোতে। তাদের দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে স্কুল-টিউশন-পড়াশুনা-খেলাধূলার মাধ্যমে। কিন্তু সবই যে এখন বন্ধ। তাদের এই অবস্থা থেকে বের করতে পারেন অভিভাবকরাই। আপনারাই হয়ে উঠতে পারেন তাদের কোয়ারেন্টিন প্লেমেট। তাদের সময়কে যেন তারা নষ্ট নয় সদ্ব্যবহার করতে পারে তা নজরে রাখতে পারেন আপনারাই।
১. তাদের সাথে খেলতে পারেন কম্পিটিটিভ স্পোর্টস গেম। হাতে স্মার্ট গ্যাজেট নিয়ে দিনের বেশিরভাগ সময় তাতে মত্ত যাতে আপনার ছেলে বা মেয়ে না হয়ে থাকে তার দায়িত্বভার নিতে হবে আপনাদেরই। সন্ধ্যেবেলায় তাদের নিয়ে খেলতে পারেন ইন্ডোর গেমস। অথবা ছাদে খেলতে পারেন ব্যাডমিন্টন জাতীয় খেলা। এতে তার চাঞ্চল্য হারিয়ে যাবে না, বজায় থাকবে বরং।
২. তৈরী করতে পারেন দুর্গ, সন্তানদের খেলার নতুন জায়গা সাজিয়ে দিত পারেন আপনি। লাঠি, চাদর, বালিশের সাহায্যে সহজেই তৈরী হয়ে যাবে দুর্গ। অপ্রতিরোধ্য না হলেও সময় কাটানোর জন্য এক্কেবারে উপযুক্ত এটি। এখানে বসে একসাথে সিনেমা দেখা, খেলা ইত্যাদি করা বাজেটেই পারে।
৩. স্কুলে ফ্যান্সি ড্রেস কম্পেটিশনে অংশগ্রহণ করুক বা না করুক এই সুযোগ কিন্তু আরো একবার পেয়ে গেল আপনার সন্তান। তাকে তার পছন্দের সাজে সাজিয়ে তুলুন। সাজগোজ-হাসিমজা মনে করিয়ে দেবে সম্পর্কের সম্পূর্ণতা।
৪. আপনার সন্তানের কিছু না কিছু সুপ্ত ট্যালেন্ট তো রয়েছেই। হয়তো কেউ আঁকতে পারদর্শী, কেউ নাচ করতে ভালবাসে আবার কেউ বা গান করতে। তার ভালবাসাকে খুঁজে তা তার অভ্যাসে পরিণত করতে সাহায্য করুন। অংশ নিন আপনিও। আপনি তাতে পারদর্শী না হলেও আপনার অংশগ্রহণ তার উৎসাহকে করবে দ্বিগুন।
৫. খেলতে পারেন নানাবিধ মেমোরি গেম। এভাবেই খেলার ছলে তার পড়ার কিছু জিনিসও ঝালিয়ে দিতে পারেন।
৬. বাচ্ছা হলেই বা কি! বছরটা কিন্তু তাদেরও ব্যস্ত সিডিউলেই কাটে। এই লকডাউনের সুযোগে তাদের প্যাম্পার করার সুযোগ পেয়ে যাবেন। চুলের, ত্বকের যত্ন নিতে যে কোনো মেয়েই ভালোবাসে, ছোট থেকে বড় সকলেই। এছাড়া তাদের ঘর সাজিয়ে দিন তাদের মতো করে। পুরোনো কিছু জামাকে ইম্প্রোভাইজ করে তাদের জন্য তৈরী করুন নতুন স্টাইল। বেজায় খুশি হবে তারা।
৭. বিভিন্ন ডি.আই.ওয়াই জিনিস তৈরী করতে পারেন সহজেই। তা দিয়ে ঘর সাজানো যাবে দিব্যি। একদিকে যেমন ঘর হয়ে উঠবে সুন্দর তেমনি হাতের কাজে পটু হবে আপনার সন্তান।
৮. মায়েদের ড্রেস-মেকআপ কিটের প্রতি আকর্ষণ থাকে সব মেয়েদের। আপনার সামগ্রী দিয়ে তাকেও আপনার মতো সাজিয়ে তুলতে পারেন। একসাথে করতে পারেন ফটো সেশন।
৯. কোয়ারেন্টিনে সিনেমার জুড়ি মেলা ভার। সন্তানের সাথে বসে দেখে ফেলতে পারেন ডিজনি বা অ্যানিমেটেড মুভির কালেকশন। এছাড়াও যে কার্টুন চরিত্রগুলি সম্পর্কে এই জেনারেশনের ছেলেমেয়েদের ধারণা কম অথচ তা শিল্পীর অনন্য সৃষ্টি হিসাবে বিশ্বের দরবারে গণ্য- পরিচয় করতে পারেন সেই সকল চরিত্রের সঙ্গে।
১০. লুকোচুরি থেকে চাইনিজ চেকার, মনোপলি থেকে ইকির-মিকির যে খেলাগুলো সময়ের সাথে সাথে প্রায় হারিয়ে যাওয়ার পথে তাকে জায়গা করে দিতে পারেন আপনার খুদের মনে। বয়স অনুযায়ী খেলতে পারেন তাদের সাথে এই জাতীয় বিভিন্ন খেলা।
এভাবে কোয়ারেন্টিনকে কাজে লাগিয়ে কাটাতে পারেন আপনার সন্তানের বোরডম। সঙ্গে সময় কাটবে আপনারও।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584