পিয়ালী দাস,বীরভূমঃ
সকাল হলেই মকর সংক্রান্তি।পূণ্য স্নানে ডুব দেবে লক্ষ লক্ষ পূণ্যর্থী।মকর-স্নান উপলক্ষ্যে কাতারে কাতারে পুণ্যার্থীর সমাগম হবে জয়দেব-কেন্দুলিতে।ইতিমধ্যেই বাউল,কীর্তনের দল এসে হাজির হয়েছে আখড়ায় আখড়ায়।প্রশাসনের তরফে প্রস্তুতিও তুঙ্গে।কথিত আছে কবি জয়দেব প্রতি বছর মকর সংক্রান্তিতে মকরস্নান করতে যেতেন কাটোয়ার গঙ্গায়।একবার তিনি এমন অসুস্থ হয়ে পড়েন যে এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি।রাতে তিনি স্বপ্ন দেখেন তাঁর জন্য মা গঙ্গা উজান বেয়ে অজয় নদে এসে মিলিত হবেন।তাই অজয় নদে স্নান করলেই গঙ্গাস্নানের ফল পাবেন জয়দেব।এই কাহিনির বিস্তারেই মকর সংক্রান্তিতে কেন্দুলির মেলাকে বাঙালি উৎসর্গ করেছে কবি জয়দেবের স্মৃতি তর্পণে।
বীরভূম–বর্ধমান জেলার সীমান্ত বরাবর বয়ে চলা অজয় নদের ধারে কেন্দুলি গ্রাম।কথিত আছে, এখানেই ছিল রাজা লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি জয়দেবের নিবাস।অনেকে যদিও মনে করেন জয়দেবের আদি নিবাস ছিল ওড়িশায়। রাধাগোবিন্দের মন্দির সহ কেন্দুলিতে জয়দেবের স্মৃতিধন্য বহু দ্রষ্টব্য থাকলেও কেন্দুলির সব চেয়ে বড় পরিচয় পৌষ সংক্রান্তির মেলা,যাকে কেন্দ্র করে কেন্দুলির কথা আজ দেশের সীমানা ছাড়িয়েছে।প্রাচীনত্ব ও জনপ্রিয়তার নিরিখে এ মেলা আজ দেশের অন্যতম প্রধান মেলা হিসেবে পরিগণিত হয়।এই একবিংশ শতকেও সমাগম হয় লক্ষাধিক মানুষের।ঐতিহাসিকদের মতে গঙ্গাবোধে অজয়ে মকরসংক্রান্তি স্নান উপলক্ষ্যে এই মেলার সূচনা হয়েছে সুদূর অতীতে।পরে তার সঙ্গে জয়দেবীয় ঐতিহ্যধারা যুক্ত হয়ে হয়েছে জয়দেবের মেলা।কেন্দুলির জয়দেবের মেলা সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র মেলা,যেখানে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের এক বিচিত্র সমাবেশ ঘটে।বিশেষত সমাজের বিদ্বজনের উপস্থিতি এখানে লক্ষ্য করার মতো।জেলার তো বটেই,এমনকী রাজ্যের অন্যান্য অংশের সঙ্গে কলকাতার সাহিত্যিক,গবেষক,অধ্যাপক, সাংবাদিক,লোকশিল্প-বিশারদ,শিল্পী, সমালোচকদের নিত্য আনাগোনা এ মেলায়।ভিনদেশীদের আসা-যাওয়াও প্রায়ই লক্ষ্য করা যায় এই মেলায়।সাহিত্যবাসর এ মেলার এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।সেখানে সারা রাত ধরে চলে কবিতা পাঠ,সাহিত্য আলোচনা।মেলা উপলক্ষ্যে প্রকাশিত হয় অসংখ্যা পত্রপত্রিকা।পাশাপাশি কীর্তন ও বাউল গানের আকর্ষণে ছুটে আসা হাজার হাজার মানুষ সারা রাত জেগে কাটায় আখড়ায় আখড়ায়।আজ জয়দেব মেলার অন্যতম পরিচয় বাউল মেলা হিসেবে।
এ মেলার আর এক বিশেষত্ব অন্নসুত্রগুলিতে। মন্দির চত্বর ছাড়িয়ে স্নানঘাটের রাস্তার দু-ধার বরাবর কৃপাপ্রার্থী নিরন্ন অসহায় মানুষের ঢেউ এসে মেশে শীতের শীর্ণ অজয়ের বালুচরে।
এ সবের সঙ্গেই মেলায় থাকেন ব্যবসায়ীরা। পাথরের বাসন,লোহার সামগ্রীর সঙ্গে এ মেলায় সব চেয়ে বেশি বিক্রি হয় কলা।এ ছাড়া তো রয়েছেই নাগরদোলা,সার্কাস,পুতুলনাচ।সরকারি ভাবে মেলা ৩ দিনের হলেও মেলা চলে প্রায় ১৫ দিন।আন্তর্জাতিক আঙিনায় পৌঁছেলও এ মেলা আসলে গ্রামীণ মেলা।তাই মিলবে না কোনও হোটেল,লজ বা অতিথিশালা।ভরসা কেবল গৃহস্থদের ঘরভাড়া নেওয়া ও বাউলদের আখড়া।
আরও পড়ুনঃ গঙ্গাসাগরের মেলায় উপচে পড়ছে পুণ্যার্থীদের ভিড়
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584