শুভদীপ ভট্টাচার্য, বহরমপুরঃ
তালাক বিচ্ছেদ ও ‘হালালা নিকাহ’ এর শিকার হওয়া সমস্ত স্তরের নির্যাতিতা নারীর সামাজিক স্বনির্ভরতা ও তালাক বন্ধে সরকারী আইনের দাবীতে জেলা তথা রাজ্যজুড়েই নির্যাতিতাদের পক্ষে বলিষ্ঠ কন্ঠস্বরের নাম খাদিজা বানু। বিগত দশ বছরের ধর্মীয় নানা আইনের বিরুদ্ধে নানাভাবে সুর চড়িয়েছেন তিনি। কখনো লড়েছেন আইনি লড়াই, কখনও বা জেলা থেকে জেলা নিয়ে গেছেন আন্দোলনের সংবাদ, গড়ে তুলেছেন সংগঠন, রাতের পর রাত অনিদ্রা যাপনে কাটিয়েছেন গ্রাম-শহরের নির্যাতিতাদের সঙ্গে, সংগ্রামী আহ্বান রেখেছেন, সাড়া পেলে জনতার ক্ষোভ বঞ্চনা নিয়ে আছড়ে পড়েছেন রাজপথে, নিয়েছেন রাজপথের দখল।
‘মিছিল নগরী’র প্রান্তে প্রত্যন্তে পৌঁছেছেন মুসলিম মৌলবাদী আইনের শিকার হওয়া নারীদের কান্নার প্রতিবেদন নিয়ে। সভামঞ্চ থেকে সওয়াল ছুঁড়েছেন-তালাকের বিরুদ্ধে, অসহায়াদের তরফে। দীর্ঘ লড়াইয়ের পথ চলাতে, তিল তিল করে গড়ে ওঠা সংগ্রামের খবর নানা মহলে পৌঁছতে খাদিজা বানুর লড়াইয়ে স্বেচ্ছায় সঙ্গী হয়ে উঠেছেন বিচারপতি মলয় সেনগুপ্ত বা সাংবাদিক সাহানা নাগ চৌধুরিদের সঙ্গেই অসংখ্য অধ্যাপক অধ্যাপিকা শিক্ষক কবি বুদ্ধিজীবীরা। দিয়েছেন পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি। আবার একই সাথে সঙ্গী হয়েছেন নাসিমা বানু, রেহেনা খাতুনরা। যারা সরাসরি শিকার এই প্রথার। অঙ্গীকার করেছেন তারা মৌলবাদের বিরুদ্ধে, কাধেঁ কাঁধ রেখে নিয়েছেন লড়াইয়ের শপথ।
সেই শপথের ভাস্করে উজ্জ্বল ‘বীরাঙ্গনা’দের সম্বর্ধনা জ্ঞাপনে ‘রোকেয়া নারী উন্নয়ন সমিতি’ এবং ‘সৃজনী’ সাহিত্য পত্রিকার উদ্যোগে এক মহতী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে। উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি মলয় সেনগুপ্ত, প্রাক্তন অধ্যাপিকা সুজাতা দে বসু, রানী ধন্যাকুমারী কলেজের অধ্যক্ষ অজয় অধিকারী, ডাক্তার ও সমাজসেবি আলি হাসান সহ শহরের বিশিষ্ট নাগরিক ও জেলার বিভিন্ন প্রান্তের তালাকপ্রাপ্তা, স্বামী পরিত্যক্তা নারীর ও তাদের শিশু সন্তানেরা। তালাকপ্রাপ্তা, নির্যাতিতাদের জীবনের দুর্বিসহ যন্ত্রণা ও ভারতীয় আইনের প্রহসনের শিকার হওয়া এইসব নারীদের অসহায়তার টুকরো টুকরো কাহিনী তুলে ধরেন জাস্টিস মলয় সেনগুপ্ত। এই সব নারীদের মানসিক, পারিবারিক, রাজনৈতিক নির্যাতনের শ্বাসরোধকর বর্ণনা দের সংগঠনের সম্পাদিকা খাদিজা বানু। দীর্ঘ পথ চলাতে সহায়ক বন্ধু শুভানুধ্যায়ী প্রতি বারবার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন এবং গ্রাম গঞ্জের বলিষ্ঠ বীরাঙ্গনা দের লড়াই সচিত্র বর্ণনা উঠে আসে সম্পাদিকার ভাষণে।
লড়াইয়ের দীর্ঘ চড়াই উৎড়াই এর পথে কান্না শোক দুঃখ যন্ত্রণা লাঞ্ছনা অপমানের এক অবর্ণনীয় চিত্র তুলে ধরেন তালাক প্রথার শিকার মুসলিম নির্যাতিতা নারীরা। কথা বলতে বলতে কান্নায় ফেটে পড়েন নাসিমা বানু। লাঞ্ছনার শিকারের দিনগুলি রাতগুলির কথা বলতে গিয়ে কন্ঠস্বর কেঁপে কেঁপে ওঠে তার। চোখের জলেই তখন শপথের কথা শোনাচ্ছেন নাসিমা। হলভর্তি সমব্যাথী তখন অবাক বিশ্ময়ে তাকিয়ে নাসিমা’র দিকে।
নাসিমা, রেহানাদের এখনঔ চলার দীর্ঘ পথ বাঁকি। কিন্তু হতাশ নন তারা, আশাহতও নন। মৌলবাদের আইনের শিকার নারীদের হয়ে তালাক প্রথা ও হালালা নিকাহ বিরুদ্ধে এর সামাজিক রাষ্ট্রিক আইনের দাবীর লড়াইয়ে লড়াইয়ে অবিচল থাকতে চান তারা। নাসিমা রেহানাদের লড়াইয়ের প্রেরণা নিয়েই ঘরে ফিরলে শত শত নাসিমা রেহানা’রা।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584