পিয়ালী দাস,বীরভূমঃ
কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মা তারার ভক্তগন ভিড় জমিয়েছে তারাপীঠে। ভগবতী মা, যিনি মহাশক্তি জগৎ জননী, যিনি দুর্গতিনাশিনী, তিনিই আবার বিপদতারিণী তারা মা। এই তারা আবার দশমহাবিদ্যার দ্বিতীয় বিদ্যা।
লোককথা সাধক বামদেব মনের দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে তার ‘বড় মা’কে ডেকে ডেকে যখন দেখা পেলেন না, তখন একদিন রাগে ক্ষোভে দুঃখে সেই শিলামূর্তি ধরে কাঁদলেন। সেই রাতে মা স্বপ্নে বললেন, “কৌশি অমাবস্যার রাত্রে কুশের আসনে বসে আমার পূজা করবি। আমি তোর কাছে আসব।” সেই মতো বামদেব পূজা করলেন। এই কোশি অমাবস্যা রাত্রে সেই শিলামূর্তি থেকে মা তাঁর সন্তান বামদেবকে প্রথম দেখা দিয়েছিলেন। সেই থেকেই সম্ভবত এই কৌশি বা কৌশিকী অমাবস্যাকে তারাপীঠের তারা মায়ের আবির্ভাব তিথি বলে ধরা হয়।এই কৌশি অমাবস্যা রাত্রে মায়ের বিশেষ পূজা আরতি হয়ে থাকে। আজও রাতে মহাশ্মশানে বহু দূর-দূরান্ত থেকে প্রচুর ভক্ত, সাধক ও তান্ত্রিকরা আসেন। পূজা পাঠ হোম যজ্ঞ করেন। মায়ের কৃপায় সকলের মনস্কামনা পূরণ হয়। কৌশি অমাবস্যায় তারাপীঠে প্রচুর ভক্তের সমাগম হয়। চারিদিকে একটা হই চই ব্যাপার। সর্বদা মায়ের নাম গান চলছে। তারাপীঠ যেন জেগে ওঠে, নতুন ভাবে সেজে ওঠে। মনে হয় মা বিপপত্তারিণী তারা যেন দু’-হাত তুলে আমাদের ডাকছেন। আমাদের অভয় প্রদান করে বলছেন, আমি আছি তোদের ভয় কিসের? তারাপীঠ মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, যদি মনের কোনও আশা থাকে, একমনে মাকে জানান, পূজা দিন। হোম-যজ্ঞ মায়ের জন্য বিশেষ আহুতি প্রদান করুন। দেখবেন, মা খালি হাতে ফেরাবেন না। কৌশি অমাবস্যা রাত্রে যাদের ঘরে তারা মায়ের ছবি-মূর্তি-পদযুগল যাই থাকুক না কেন, সেটিকে কুশের আসনে রেখে পূজা করবেন।
একটি শ্বেত পদ্ম নিয়ে ১০৮ বার তারা নাম করে যে কোনও মনকামনা নিয়ে মায়ের পায়ে দিন। পূরণ হবেই হবে।
এদিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই আচমকাই একটি বেসরকারি লজের সামনে পরিতক্ত ব্যাগকে ঘিরে আতঙ্ক ছড়ায় খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে বীরভূম জেলা পুলিশের কর্তব্যরত আধিকারিক বৃন্দ। ডাকা হয় বোম স্কোয়াডকে, বোম স্কোয়াড ব্যাগটিকে পরীক্ষা করে কিছুই না পাইনি।
পরিত্যক্ত ব্যক্তিকে ঘিরে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় কিন্তু বীরভূম জেলা পুলিশের তরফে দ্রুত এলাকা ফাঁকা করে দিয়ে আগত পর্যটকদের আশ্বস্ত করা হয় ব্যাাগে বিস্ফোরক জাতীয় কিছুই পাওয়া যায়নি কে বা কারা ব্যাগটি ফেলে আতঙ্ক তৈরি চেষ্টা করেছে তা নিয়ে ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে তারাপীঠ থানার পুলিশ।
বীরভূম জেলার পুলিশ সুপার শ্যাম সিং জানান, কৌশিকী অমাবস্যার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েক লক্ষ মানুষ মা তারা দর্শন এ আসেন তাই নিরাপত্তার কোন ফাঁক রাখা হয়নি আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে। তারাপীঠ চত্বরকে সিসিটিভি ক্যামেরা সহ ড্রোণ ক্যামেরায় মুড়ে ফেলা হয়েছে সর্বক্ষণ একটি পাঁচ সদস্যের দল নজরদারি চালাচ্ছে ক্যামেরার ওপরে কোথাও কোনরকম সমস্যা তৈরি হলে দ্রুততার সাথে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবার জন্য রাখা হয়েছে কুইক রেসপন্স টিম। এক কথায় বলতে গেলে অতন্দ্র প্রহরীর মতো বীরভূম জেলা পুলিশ তারাপীঠকে নজরদারিতে নজরবন্দি করে রেখেছে।
আরও পড়ুনঃ কর্ণজোড়ায় সাইবার ক্রাইম থানার উদ্বোধন
আগত ভক্তদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে মন্দির কমিটির তরফ রায় ৫০০ জন বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে বলে মন্দির কমিটি সূত্রে খবর।
এলাকার দূষণ রুখতে এবারে উনুনের সাহায্যে মায়ের ভোগ স্থগিত রেখে সৌরচালিত উনুনে তারা মায়ের ভোগ তৈরি হবে বলে জানাচ্ছেন মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায়।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584