শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
লুকিয়ে চুরিয়ে নয় বরং বিএসএফকে দেখানোর পরেও সীমান্তে পাচার হয়ে যায় প্রচুর সংখ্যক গরু। আর বিএসএফের চোখের সামনে গরু পাচার করার একাধিক কৌশল রয়েছে পাচারকারীদের। সাম্প্রতিককালে গরু পাচার কান্ডের তদন্তে নেমে এমন বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর পন্থা হাতে এসেছে সিবিআই গোয়েন্দাদের।
গরু পাচার কাণ্ডের সঙ্গে কয়লা মাফিয়া থেকে শুরু করে ভুয়ো ব্যবসায়ীদের যোগসূত্র পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু সীমান্তে যেভাবে বিএসএফ কমান্ড্যান্টদের হাতিয়ার করে গরু পাচার করা হয়, তা রীতিমতো চাঞ্চল্যকর বলেই দাবি গোয়েন্দাদের।
প্রসঙ্গত রাতের অন্ধকারে গরু পাচার বা সীমান্তের কাঁটাতার বা নিরাপত্তার ফাঁক পেরিয়ে গরু পাচারের ঘটনা এখন অতীত। কারণ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে পাচারকারীরা দেখতে পেয়েছে, আচমকা ধরা পড়লে তাতে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি থাকে। তাই একদম আনকোরা পাচারকারী ছাড়া বাকি সকলেই বিএসএফের সঙ্গে যোগসাজশ করে তবেই গরু পাচার করার পদ্ধতি অবলম্বন করেন।
আরও পড়ুনঃ বিধানসভা ভোটের আগে বড়সড় রদবদল কলকাতা পুলিশে
বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত এলাকা ৪৯০৭ কিলোমিটার, কয়েক মাস আগে পর্যন্ত এখানকার প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ এলাকা গরু পাচারের জন্য বেছে নিয়েছে পাচারকারীরা। বছরে গড়ে প্রায় দেড় লক্ষ গরু পাচার হওয়ার আগেই ধরা পড়ে যায় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর হাতে।
বস্তুত সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাছে ধরা দেওয়ার জন্যই ওই গরুগুলোকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী সেই গরুগুলিকে নিজেদের বিওপি (বর্ডার আউট পোস্ট)-তে নিয়ে যান জওয়ানরা। কিছুদিন রাখা হয় সেখানে। তারপর কাস্টমসের মাধ্যমে সেই বাজেয়াপ্ত করা গরু নিলাম করে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুনঃ ভুয়ো চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট কাণ্ডে এবার আয়কর দফতরের শীর্ষ কর্তাকে তলব লালবাজারের
কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে এ প্রক্রিয়া সহজ মনে হলেও আসল প্রক্রিয়া এত সহজ নয়। গরু পাচার সরাসরি বিএসএফের নজরে রয়েছে তা দেখানো হলেও অনেক ক্ষেত্রেই ঘুষ দিয়ে গরুকে বাছুর বানিয়ে কম শুল্ক দিয়ে সেই গরু আবার চলে যায় পাচারকারীদের হাতে। বিষয়টা অনেকটাই হাত ঘুরে কালো টাকা সাদা করে ফেলার মতো। আর ঠিক এখানেই নাম উঠে এসেছে বিএসএফ কমান্ড্যান্ট জিবু ম্যাথিউ সতীশ কুমার নামে একাধিক বিএসএফ কমান্ড্যান্টের।
বীরভূমের ইলামবাজার কিংবা উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরে এখনও সপ্তাহে একদিন করে গরুর হাট বসে। সেখান থেকে ওই সব গরু কিনে নিয়ে পাচার চক্রের কাজ শুরু হয়। এক্ষেত্রে তাদের সুবিধা হল রাজস্থান বা উত্তরপ্রদেশ থেকে ত্রিপলে ঢেকে একটি লরিতে কুড়ি/পঁচিশটি করে গরু আনতে হয় না।
আরও পড়ুনঃ কেশপুরে বাইক দুর্ঘটনায় তৃণমূল নেতার মৃত্যু
আর কোন ক্ষেত্রে যদি বাইরের রাজ্য থেকে গরু আনতেই হয়, তবে তা এনে কোনও একটি জায়গায় জমা করা হচ্ছে। প্রথমে তারপর দামী গাড়িতে করে বেশ কয়েকটি ছোট ছোট ট্রিপে গরু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সীমান্ত এলাকায় যাতে কারও সন্দেহ না হয়। আর রাজ্য পুলিশের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু আলাদা।
রাজ্য পুলিশের এক কর্তা জানান, ‘গরু বাজেয়াপ্ত করার পর বিভিন্ন থানার খাটাল মালিকের সঙ্গে কথা বলে গরু জমা রাখার জায়গা রয়েছে। তবে সীমান্তবর্তী অধিকাংশ থানার ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে তাদের গোয়ালে গোরু নেই। ঠিক যেমন দেখা গিয়েছে, শিলিগুড়ির কাছে ফাঁসিদেওয়া এলাকায় পুলিশের যে গরু রাখার ব্যবস্থা রয়েছে সেই খাটালে কার্যত কোনও গরু নেই। সামান্য কিছু সময়ের জন্য রেখে তারপর তা দ্রুত পাচার করে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ ধর্মঘটে গ্রেফতার ছাত্রী, পরীক্ষা দিলেন অপরাধী সেলে বসে
প্রসঙ্গত গরু পাচারের পদ্ধতি এক এক জেলায় এক এক রকম। সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদ এবং বীরভূমের যে গরু পাচার হয়, তা ইলামবাজার দিয়ে হুগলির পান্ডুয়া হয়ে চলে যাচ্ছে উত্তর চব্বিশ পরগণার সীমান্তে। আবার মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি এবং লালগোলা সীমান্ত পেরিয়ে গরু চলে যাচ্ছে ওপারে। এসব গরু পাচার করার জন্য এপারে যে এলাকা তা পরিচিত ঘাটে নামে। এক একজন ঘাট মালিক প্রতি গরু পিছু পান দু’হাজার টাকা।
একটা সময় দীর্ঘদিন ধরে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে বাঁশের কপিকল দিয়ে গরু পাচার করা হত। পাচারকারীদের কাছে ওই কৌশলকে বলা হত ‘আরকি’। কিছুদিন আগে ভিডিওতে সেই ছবি ভাইরাল হয়ে যেতেই নদীপথকে ব্যবহার করা শুরু করেছে পাচার চক্র। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিএসএফ এবং পুলিশের সঙ্গে যোগসাজশ করে চলেই পাচার চক্র, এমনটাই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584