নবনীতা দত্তগুপ্ত, বিনোদন ডেস্কঃ
বছর ঘোরেনি এখনও। তার আগেই বন্ধ হতে চলেছে ধারাবাহিক ‘ফিরকি’। এমনই খবর টলিপাড়ায়। সূত্রের খবর অনুযায়ী চ্যানেলের তরফে ১৮ ডিসেম্বর কলাকুশলীদের জানিয়ে দেওয়া হয় ধারাবাহিকের শেষ শুটিং ২৪ ডিসেম্বর। আর শেষ সম্প্রচার ২ জানুয়ারি।
চ্যানেল নাকি সমীক্ষা করে জানিয়েছে তৃতীয় লিঙ্গদের পর্দায় দেখলেই চ্যানেল ঘুরিয়ে দিচ্ছে দর্শক। তাই এমন সিদ্ধান্ত।
প্রসঙ্গত, সমাজে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদেরও সমান সম্মান আছে- এই দিকটা দেখাতে চেয়েছিল ‘ফিরকি’র প্রযোজনা সংস্থা ‘অ্যাক্রোপলিশ এন্টারটেইনমেন্ট’। এমনকী ধারাবাহিক ঘিরে যে সাংবাদিক সম্মেলন করা হয়, সেখানে ট্যাগলাইন ছিল ‘সমান সম্মান’। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। চিত্রনাট্য ও গল্পের বাঁক শিকেয় তুলে বন্ধ করতে হচ্ছে ধারাবাহিক। কারণ চ্যানেলের কথা অনুযায়ী দর্শক ধারাবাহিকটি দেখছে না তৃতীয় লিঙ্গের চরিত্ররা পর্দায় এলেই। অথচ গত সপ্তাহের টি আর পি রেট ৬.৪। তাহলে কী ভাবে দর্শক ফিরকি দেখছে না তা ভাবতে পারছে না পার্বতী, রানি, লক্ষ্মীরা। এই প্রসঙ্গে কথা বলতে ফোন ঘোরাই সুজি ভৌমিক এবং কুসুম সামন্তকে।
আরও পড়ুনঃ ‘ক্যালকাটা ইন্টারন্যাশনাল শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এ সৌমিত্র সম্মানে ঋত্বিক চক্রবর্তী
গল্পের পার্বতী অর্থাৎ কুসুম সামন্ত নিউজ ফ্রন্টকে জানান- “সমান সম্মান হল কোথায়? চ্যানেলের কথায় তারা সার্ভে করে দেখেছে তৃতীয় লিঙ্গের চরিত্ররা পর্দায় এলেই লোকে নাকি চ্যানেল ঘুরিয়ে দিচ্ছে। তা হলে ৬.৪ রেট এল কী ভাবে? এদিকে ৬.৪ ওদিকে দর্শক নিচ্ছে না। অঙ্কটা মিলছে না। খুব সুন্দরভাবে থার্ড জেন্ডারদের নিয়ে কথা বলছিল ‘ফিরকি’।
আরও পড়ুনঃ নওয়াজের প্রাপ্তি
আমাদের জন্য অনেক আইন, সুবিধা এসেছে সমাজে। আমাদের মধ্যে কেউ অভিনয় করি, কেউ পড়াই, কেউ গান বা নাচ শেখাই। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে ধারাবাহিকটি বন্ধ হয়ে যাওয়া ফের মনে করিয়ে দিল আমরা সমান সম্মান আজও পাইনি। আজও সমাজ আমাদের বাঁকা চোখেই দেখে। তাই আমাদের দেখলেই চ্যানেল ঘুরিয়ে দেয়।
আরও পড়ুনঃ ‘অভিযাত্রিক’-এর জোড়া প্রাপ্তি
খুব আশা নিয়ে কাজটা শুরু করেছিলাম। রোজগারও হচ্ছিল। আমার অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল না। তাও বলব, টাকাই শেষ কথা নয়। সম্মানটাও জরুরি। রাস্তায় লোকে দেখে মানুষ পার্বতী মাসি বলে ডেকে ওঠে। এ কি কম পাওয়া? আর হয়ত ডাকবে না। এটা ভেবেই কষ্ট হচ্ছে। একটা ভাল কাজ পেয়ে খুশি ছিলাম। নিজেদেরকে সমাজের একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ভাবত শুরু করেছিলাম। থমকে গেল সব। আবারও হাসির খোরাক হয়ে যাব হয়ত।
আমরা টাকার থেকেও সম্মানের কাঙাল বেশি। কোনও কাজই ছোট নয় যেমন, তেমন সব কাজ করাও যায় না। আমি সেটা পারব না। আমার অনুরোধ প্লিজ আমাদের কথা একটু ভাবুন। আমাদের নিয়ে গল্প বাঁধুন। আমরা মনে প্রাণে কেউ অভিনেতা কেউ অভিনেত্রী। আমাদেরও অভিনয় করার অধিকার আছে অন্যদের মতো।”
গল্পের রানি মাসি অর্থাৎ সুজি ভৌমিক জানান- “সমান সম্মান পেতে গিয়ে অপবাদের ভাগি হয়ে গেলাম। চ্যানেল বলছে আমাদের নাকি দর্শক নিচ্ছে না।
আরও পড়ুনঃ করোনা আক্রান্ত অভিনেতা আবির চ্যাটার্জি-সহ গোটা পরিবার
তাহলে শুরুতে রেট ৭.৮ হয় কীভাবে? আর গত সপ্তাহে তা ৬.৪ হয় কী ভাবে? কত ধারাবাহিক তো ২/৩ রেট নিয়েও বছরের পর বছর চলে। হঠাত করে এভাবে আমাদের কারণে সিরিয়াল লোকে দেখছে না এমন অপবাদ দিয়ে ‘ফিরকি’ বন্ধ করে দেওয়া যে আমাদের জন্য কত বড় অপমান তা চ্যানেল বুঝল না। শুধু অভিনয়টুকু শিখেছি৷ অভিনয় করে নিজেদের কমিউনিটিকে রিপ্রেজেন্ট করছিলাম আমরা। এখন তো আমাদের কমিউনিটির কাছেও আমরা খাটো হয়ে গেলাম।
তারাও বলবে আমরা পারিনি। তাই আমরা হেরে গেছি। আমাদের দেখে আরও পাঁচজন এগিয়ে আসত কাজ করতে। তারাও আর আসবে না। আজ এমন একটা নামী চ্যানেল যদি আমাদের এহেন অপবাদ দেয়, আর কোনও প্রোডাকশন হাউজ কি আমাদের নিয়ে কাজ করবে? করবে না। তা হলে আমরা কী করব? আমরা তো হিজরে ঘরে যাব না, ভিক্ষাবৃত্তিও করব না। তাহলে কি সেক্স ওয়ার্কার হব? তার জন্যও তো তৈরি নই আমরা। ভদ্র পরিবেশে, ভাল পরিবারে বেড়ে উঠেছি আমরা। আমাদের নিয়ে লোকে অনেক কথা বলে। আমাদের পেটের জ্বালা কেউ বোঝে না। আমরা অন্য কাজ খুঁজতে গেলে লোকে বলবে, আমরা তো অভিনেত্রী। অন্য কাজ করব কেন? এহেন আরও কত কথাই না শুনতে হবে আমাদের।
আরও পড়ুনঃ দুঃস্থ যুবকের চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন সাংসদ মিমি
ধারাবাহিকটা শুরু থেকে ভাল রেট পেলেও ব্রাত্য হয়েছি প্রতি সময়ে আমরা। সোনার সংসারে আমাদের ডাকা হয়। কিন্তু কোনও সিট বরাদ্দ করা হয় না আমাদের জন্য। লক্ষীকে পরিচয়ও করানো হয় না সেখানে। লক্ষ্মীর অপমান মানে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদেরও অপমান।
জি বাংলার জন্মদিনের কেক লক্ষ্মীর বাড়িতে আসে না। মানে যেখানে আমাদের শুটিং হয়। সেই কেক যায় ফিরকির শ্বশুরবাড়িতে। আজ অবধি আমাদের দিদি নম্বর ওয়ানে ডাকেনি চ্যানেল। সব থেকে অবাক লাগে, উবের-এ উঠলে ড্রাইভার আমাদের মাস্ক পরে থাকলেও চিনতে পারে।
তারা নাকি শুধু ফিরকিই দেখে ফোনে। আমি আমাদের প্রযোজনা সংস্থা অ্যাক্রোপলিশ এবং স্নিগ্ধা দির কাছে চিরকৃতজ্ঞ। যা আমাদের বাবা-মা দেয়নি কখনও তা স্নিগ্ধা দি দিয়েছেন। আমার আয়ু স্নিগ্ধা দি পাক। তবে, চ্যানেলের তরফে আমাদের সঙ্গে যেটা হল সেটা ভাল হল না। সার্ভে রিপোর্ট দেখতে চাই।”
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584