পিয়া গুপ্তা,উত্তর দিনাজপুরঃ
উত্তর দিনাজপুর জেলার বাসিন্দাদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে রয়েছে রাজবাড়ীর পুজো।লোকমুখে বাহিন রাজবাড়ির পুজো বলে খ্যাত হলেও আদতে তা জমিদার বাড়ির পুজো।
জমিদারি প্রথা তো আর নেই।তাই পুজোর দায়িত্বেও আর নেই বাহিনের জমিদার বাড়ির পরিবার।একদা বাড়ির পুজো তাই আজ সার্বজনীন।বর্তমানে স্থানীয় বাসিন্দারাই এই পুজোর দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন।
বিহার-বাংলা সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত বাহিন জমিদার বাড়ির পুজো একসময় জাঁকজমক করে হতো।জমিদার বাড়ির পেছনে দিয়ে বয়ে যাওয়া নাগর নদী এখানে বাংলা ও বিহারকে ভাগ করেছে।জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকা ঐতিহ্যবাহী বাহিন রাজবাড়ীর ঠাকুরদালানে আজও পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে দুর্গাপুজো করা হয়।
রায়গঞ্জ শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে বাহিন জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো রায়গঞ্জ সহ গোটা উত্তর দিনাজপুরেই পরিচিত।এই বাড়িতে এখন আর জমিদার পরিবারের কেউ থাকেন না।ভগ্ন জরাজীর্ণ জমিদার বাড়ির পাশেই পুরনো সিংহবাহিনী মন্দির।সেখানেই প্রতিবছরের মতো এবারও দুর্গাপুজো হবে।
সিংহ বাহিনীর সোনার মূর্তি বহুদিন আগেই চুরি হয়ে গিয়েছে।কিন্তু এখনও সিংহ বাহিনীর থানে নিত্যপুজোর রীতি চালু রেখেছেন গ্রামবাসীরা। পুজোতে জৌলুস না থাকলেও নিষ্ঠাভরে এখানে পুজো হয়। পুজোর টানে সংলগ্ন রাজ্য বিহার থেকেও অনেকেই বাহিনের ঐতিহ্যমণ্ডিত পুজো দেখতে ভিড় জমান।
একসময় এই জমিদার বাড়ি সংলগ্ন সিংহবাহিনীর মন্দিরের পাশে রাখা হতো হাতি-ঘোড়া।এখনও এদিক-ওদিক খুঁজলে কয়েকটি কংক্রিটের হাতি বাঁধার খুঁটি নজরে আসবে।তবে সেসব এখন অতীত।তবে পুজোকে বাঁচিয়ে রাখতে সাধারণ মানুষ এবং এলাকাবাসী উদ্যোগ নিয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ বালুরঘাটে বোইদুলের চৌধুরী বাড়ির ১০৯ বছরের দুর্গা পুজো
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও সিংহ বাহিনীর মন্দিরে সাধ্যমত দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হবে।সব নিয়ম মেনেই দুর্গাপুজো করা হয়।সোনার সিংহবাহিনী মূর্তিটি প্রায় ১৫ বছর আগে এখান থেকে চুরি হয়ে গিয়েছে।তবে বর্তমানে যে থানটি রয়েছে সেখানে এখনও নিত্যপুজো হয়।
গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন,এক সময়ে ইটাহারের চূড়ামন রায়চৌধুরী পরিবারের শরিকরা এই জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন।তবে সেটা কত পুরনো তা সঠিকভাবে জানা যায় না। জমিদার বাড়ি নির্মাণ করার পরেই সেখানকার ঠাকুরদালানে দুর্গাপুজো শুরু হয়।
বহু বছর আগে শুরু হওয়া এই দুর্গাপুজোর বয়সও কেউ বলতে পারেন না।অতীতে পুজোর সময় বা অন্যান্য সময়ও জমিদার বাড়ির সামনে বড় বাগানে হাতি বাঁধা থাকত।গ্রামবাসীদের দাবি,এখানে চার-পাঁচটি হাতি সবসময়ই বাঁধা থাকত।সেই হাতির পিঠে চড়ে জমিদারি পরিদর্শনে যেতেন জমিদারেরা।
জমিদার বাড়ির পিছন দিয়ে বয়ে যাওয়া নাগর নদীর ধারে যে পাকা ঘাটটি রয়েছে,তার অবস্থা এখন খুবই খারাপ।তবুও পুজোর টানে ওপার থেকে এপারে আসেন বহু দর্শনার্থী।প্রতি বছর পুজোর আগে নদীর উপরে অস্থায়ীভাবে সেতু তৈরি করা হয়।
আগে সিংহবাহিনী মন্দির চণ্ডীপাঠ ও দুর্গাপুজো করতেন জনা তিনেক পুরোহিত। তবে এখন আর সেসব আড়ম্বর নেই।কালের নিয়মে জমিদারবাড়ির জৌলুসের সঙ্গে সেসব কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছে।তবে কোনওভাবেই পুজোর আনন্দ,পুজোর নিষ্ঠা এবং পুজোর নিয়ম থেকে একচুলও সরে আসেননি বর্তমান উদ্যোক্তারা।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584