শ্যামল রায়,কালনাঃ
কালনায় ফণী তার ফনা তুলে দংশন করার আগেই মৃত্যু হল এক কৃষকের।মৃতচাষীর নাম শংকর ঘোষে (৬৮)।বাড়ি কালনা থানার আনুখাল গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বড় দারিয়াটন গ্রামে।প্রাকৃতিক দুর্যোগে আগেই তাঁর আলু নষ্ট হয়েছে মাঠে,এবার ফণীতে মাঠেই বোরো ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় বৃহস্পতিবার রাত্রে গাছে গলায় দড়ি দিয়ে তিনি আত্মঘাতী হন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে ব্যাঙ্ক তো বটেই,স্থানীয় মহাজনের কাছেও তাঁর ঋণ রয়েছে।শুক্রবার কালনা মহকুমা হাসপাতালে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়।বাংলার ভাতঘর বলে খ্যাত বর্ধমান জেলায় পরিবর্তন সরকারের আমলে শংকর ঘোষকে নিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে আত্মঘাতী কৃষকের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫৩ জন।গত তিন মাসে এই জেলায় আত্মঘাতী কৃষকের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৬ জন।গোটা রাজ্যে আত্মঘাতী কৃষকের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২১২ জন।
আরও পড়ুনঃ পারিবারিক অশান্তির জেরে আত্মঘাতী যুবক
মৃত শংকর ঘোষের পুত্র বলাই ঘোষ, নাতি প্রদীপ ঘোষ এবং ভাইপো সতীশ ঘোষরা জানান, উনার বিঘে পনেরো চাষের জমি রয়েছে।সাড়ে ছয় বিঘা আলু চাষ করেছিলেন।আলু তোলার মুখে বৃষ্টিতে তা প্রায় সবটাই নষ্ট হয়ে যায় ,যে কয়েক বস্তা আলু পাওয়া গিয়েছিল, তা বিক্রি হয়েছে মাত্র একশো ত্রিশ টাকা বস্তা (৫০ কেজি)।ফলে আলুর উৎপাদন খরচ ওঠাতো দূরের কথা মাঠ থেকে আলু তুলে বস্তাবন্দি করার খরচটুকু উঠেছে মাত্র।
ফলে ব্যাঙ্ক, স্থানীয় মহাজনের নিকটদের লক্ষাধিক টাকা তাঁর ঋণ হয়ে গিয়েছিল।তার উপর আরো ঋণ নিয়ে আট বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছিলেন।মাঠে ধান ভালোই হয়েছিল।ভেবেছিলেন ধান কেটে ঋণ শোধ করে দেবেন কিন্তু তার আগেই বজ্রঘাতের মতো তাঁর কানে এসে পৌঁছায় ফণী নামক ঘূর্ণি ঝড়ের খবর।কৃষি দপ্তর থেকে পরামর্শ দেওয়া হয় যথাশীঘ্র ধান কেটে ফেলার।
কিন্তু উনি ধান কাটতে পারেননি,কারন ধান তেমনভাবে পাকেনি।পাশাপাশি জমিতে এখনো জল।তিনি খুব অস্থির হয়ে পড়েছিলেন।সময়মত খাওয়া দাওয়া না করে প্রায় সব সময় মাঠ ও বাড়ি পায়চারি করতেন।অভ্যাস মতো তিনি একটা গামছা নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে মাঠের দিকে বেরিয়ে যান।সন্ধ্যার পরও বাড়ি ফিরছেন দেখে বাড়ির লোকজন তাঁকে দেখতে যায়। মাঠে গিয়ে দেখা যায় একটি কদমগাছে তাঁর দেহ ঝুলছে।সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার করে তাঁকে কালনা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।এই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে পরিবারের উপর।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584