বিশ্বভারতীতে আক্রমণকারীরা উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ, দাবি পড়ুয়াদের

0
61

পিয়ালী দাস, বীরভূমঃ

রক্তাক্ত বিশ্বভারতী, ছাত্রদের উপর নারকীয় হামলা । জে.এন.ইউ-এর পরে এবার বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাসে রাতের অন্ধকারে বাম ছাত্রদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠল। শুধু ক্যাম্পাসেরই নয়, অভিযোগ হামলাকারীরা হাসপাতালে ঢুকেও মারধর করেছে বাম ছাত্রদের। এস.এফ.আইয়ের দাবি, এবিভিপির তরফেই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

আক্রমণকারী। সংবাদচিত্র

এবিভিপি অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলছে অভিযুক্তরা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত ছিল। এবিভিপিকে দায়ী করছে তৃণমূলও। ছাত্রদের একাংশ আবার আঙুল তুলছেন উপাচার্যের দিকে। তাঁদের মতে, অভিযুক্তরা উপাচার্যের ছায়াসঙ্গী, যা হয়েছে তাতে মদত রয়েছে উপাচার্যেরই। তাঁরা বলছেন, ক্যাম্পাসে এনআরসির সমর্থনে হওয়া সভার বিরোধিতারই মাশুল দিতে হচ্ছে বামছাত্রদের।

আক্রমণ। সংবাদচিত্র

বুধবার রাতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একাধিক পোস্টে জানা যায়, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যাভবন সিনিয়র বয়েজ় হস্টেলে ঢুকে অন্তত দু’জন ছাত্রকে বেধড়ক মারধর করে বহিরাগতেরা। রাতেই হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় আহতদের। সেখান থেকেও ভিডিয়ো পোস্ট করে এক ছাত্র দাবি করেন, রড-উইকেট-কাঠের তক্তা দিয়ে প্রথমে পূর্বপল্লির রাস্তায় এবং পরে হস্টেলে ঢুকে তাঁদের মারা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওয় মারমুখী বেশ কয়েক জনকে দেখাও গিয়েছে ভাঙা উইকেট ইত্যাদি হাতে। বিশ্বভারতীর পিয়ার্সন মেমোরিয়াল হাসপাতাল সূত্রে খবর, সেখানে ভর্তি স্বপ্ননীল মুখোপাধ্যায় ও শুভ নাথ নামে দুই ছাত্র। অভিযোগ, ক্যাম্পাসে এই ঘটনা ঘটিয়ে হাসপাতালেও পৌঁছে যায় দুষ্কৃতীরা এই দুই ছাত্রকে মারতে। হামলা ঠেকাতে হাসপাতালের মেন গেটে তালা দিয়ে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বুধবার রাতে হামলার ঘটনায় উঠে এসেছে তিনজনর নাম। অচিন্ত্য বাগদি, সাবির আলি ও সুলভ কর্মকার। বেশ কয়েকটি ভিডিওতেই তাদের দেখা যাচ্ছে। জল্পনা তাদের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়েই। বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই বলছেন, অভিযুক্তদের শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের পতাকা হাতেই দেখা গিয়েছে শেষ কয়েক বছর। কেউ আবার বলছেন, উপাচার্য ঘনিষ্ঠতাই এদের সবচেয়ে বড় পরিচয়। যা হয়েছে তাঁর দায় উপাচার্যেরই।

আক্রান্ত। নিজস্ব চিত্র

সঙ্গীতভবনের ছাত্রী মৌমিতা চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘অভিযুক্তরা ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ। তাঁরা আগে তৃণমূল করত। কিন্তু এখন এবিভিপিতে নাম লিখিয়েছে ওরা। যা হয়েছে তা উপাচার্যের প্ররোচনাতেই হয়েছে।’’ অনেকে বলছেন, হামলাকারীরা ক্যাম্পাসে ঢোকার কিছুক্ষণ আগেই সেখানে উপাচার্যের গাড়ি ঢুকেছিল। এ দিনের ঘটনায় পুলিশি নিস্ক্রিয়তারও অভিযোগ তুলছেন বিশ্বভারতীর কয়েকজন ছাত্রছাত্রী। এসএফআই-এর ছাত্র নেতা সোমনাথ সৌ জানায় , গত ৮ তারিখ বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তকে কেন বিশ্বভারতী ছাত্রছাত্রীরা ঘেরাও করে রেখেছিল দীর্ঘক্ষণ তারই জবাব চেয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা চালায় এই এবিভিপির ছাত্ররা। এন.আর.সি, সি.এ.এ এবং এন.পি.আর বিরোধিতা করে বিশ্বভারতী ছাত্র-ছাত্রীরা যে গণআন্দোলন গড়ে তুলেছে তা ভেঙে দিতেই উপাচার্য তার লেঠেল বাহিনী ছাত্র-ছাত্রীদের পেছনে লেলিয়ে দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার আক্রান্ত ছাত্রদের অভিযোগের ভিত্তিতে শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ অচিন্ত্য বাগদি ও সাবের আলিকে গ্রেফতার করে বোলপুর মহকুমা আদালতে পেশ করলে বিচারক দশ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। অভিযুক্ত দুই ছাত্রনেতা অচিন্ত্য বাগদি ও সাবির আলির বিরুদ্ধে শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ ৩৪১, ৩২৩, ৩২৬, ৩০৭, ১২০ বি, ৩৪ আইপিসি ধারায় মামলা রুজু করে। আক্রান্ত ছাত্র স্বপ্ননীল মুখোপাধ্যায় জানায় কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী আইন সিএএ-র বিরুদ্ধে দেওয়াল লিখনের ব্যস্ত ছিলাম তখন আচমকাই মদ্যপ অবস্থায় আসে অচিন্ত্য বাগদী ও তার দলবল। অশ্রাব্য ভাষায় গালি দিতে শুরু করে। মারধরের সময় তারা একটা কথাই বলছিল কেন আমরা এনআরসির বিরোধিতা করে বিশ্বভারতী জুড়ে প্রচার করছি, কেন স্বপন দাশগুপ্ত কেঘেরাও করে রেখেছিলাম। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে বিশ্বভারতীর উপাচার্য দিল্লির বিশ্ববিদ্যালয় জেএনইউ ছাত্র হামলার ঘটনাকে বিশ্বভারতীতে আমদানি করতে চাইছেন। যা আমরা কখনোই বিশ্বভারতীতে হতে দেবো না।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ছাত্রছাত্রীরা এই হামলার প্রতিবাদে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে একটি গণ স্মারকলিপি জমা দেয়। কেন হোস্টেলে বিশ্বভারতীর পড়ুয়ারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে। এরপর ছাত্রছাত্রীরা একটি প্রতিবাদ মিছিল করে বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় অফিস থেকে শুরু করে রবীন্দ্রভবন অব্দি।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here