নিজস্ব সংবাদদাতা, দিল্লিঃ
দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মধ্যস্থতা নিয়ে আবহাওয়া এখনও সরগরম।
গত ১৬ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্র সংসদের ঘর খালি করতে বলে একটি নোটিশ পাঠায়। সেই নোটিশ অবমাননা করে ছাত্র সংসদ জানান, কোনও অবস্থাতেই ইউনিয়ন রুম খালি করা সম্ভব নয়। এই ঘটনার জেরেই এ দিন ক্যাম্পাস জুড়ে চলে বিক্ষোভ।
ভিডিও সৌজন্যঃ ফেসবুক
জেএনইউয়ের ডিন অব স্টুডেন্টস অধ্যাপক উমেশ অশোক কদম এ দিন নোটিশে জানিয়েছিলেন, ছাত্র সংসদরে ঘর বিকেল ৫টার মধ্যে খালি করে দিতে হবে।
ওই নির্দেশে আরও বলা ছিল যে, এই শিক্ষাবর্ষ এবং ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ গঠনের আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি। কারন তারা লিংডো কমিটির প্রস্তাবনাগুলি মানেননি। চলতি শিক্ষাবর্ষের ছাত্র সংসদ নিয়েও আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি ঘোষণা হয়নি।
নোটিশে আরও জানানো হয়, উপরোক্ত কারনগুলির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাদের সম্পত্তির অপব্যবহার রুখতে ছাত্র সংসদের ঘরটি তালাবন্ধ করে দেওয়া হবে। পরবর্তী সময় ছাত্র সংসদ নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি হলে তালাবন্ধ অবস্থাতেই ঘরটি ফিরিয়ে দিতে হবে।
এখন প্রশ্ন হলো, জেএনইউ ক্যাম্পাসের গণতান্ত্রিক আবহাওয়া পালটে দিতেই কি প্রশাসনের এরকম নির্দেশ? এর আগেও গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য লড়াই করেছেন জেএনইউ এর ছাত্রছাত্রীরা।
আরও পড়ুনঃ দেশের পরবর্তী বিচারপতি পদে বোবদের নাম প্রস্তাব
যে কোনও বিক্ষোভের সমাবেশেই তাঁরা শেষে ‘আজাদির’ প্রশ্নটা বারবার তুলেছেন। অধিকার লড়াই করে ছিনিয়ে নেওয়ার কথা বলেছেন। তাহলে কি ছাত্রছাত্রীদের লক্ষ্যের মূলস্রোত থেকে ফিরিয়ে দিতেই প্রশাসনের এই আইনি পদক্ষেপ, প্রশ্ন উঠছে ছাত্র মহলে।
এ দিন দুপুর ৩ঃ৩০ থেকে সমস্ত ছাত্ররা ইউনিয়ন রুমের বাইরে প্রতিবাদে নেমেছিল। লক্ষ্য ছিল প্রশাসনকে উচ্ছেদ করতে যদি শারীরিক ভাবেও এগোতে হয়, তাও এগোবেন তারা।
এ দিন নবনির্বাচিত ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি সাকেত মুন জানান, ৫ টা নাগাদ রক্ষীরা এসেছিল কিন্তু ছাত্ররা প্রচুর সংখ্যায় জড়ো হওয়ায় ওরা কিছু করতে পারেনি।
কোনও অবস্থাতেই ঘর ছাড়া যাবে না। ছাত্র সংগঠনের তরফ থেকে আরও জানা যায় যে, প্রশাসন ক্যাম্পাসের গণতান্ত্রিক পরিসরগুলি ইতিমধ্যেই কেড়ে নিয়েছে। মেস, ধাবা, স্টুডেন্ট হলগুলির উপর অধিকার আপামর ছাত্র সমাজের আছে কিন্তু বর্তমানে সেই জায়গাগুলি বরাদ্দ করা হয়েছে ভিসির পলিটিক্যাল ফ্রন্টের জন্য।
অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনও এ বিষয়ে একটি বিবৃতি জারি করেছে এবং ইউনিয়ন কার্যালয়ের তালাবন্ধের ঘটনাটি সংসদে তালা বন্ধ হওয়ার সাথে তুলনা করেছে, ‘ভাবুন কেউ সংসদে তালা দিয়ে দিলে তাতে যেমন কেবল নির্বাচিত প্রতিনিধিদেরই নয় সমগ্র জনগণকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে, আমাদের ইউনিয়ন রুমের ক্ষেত্রেও কথাটি একইভাবে প্রযোজ্য।’
একটি সর্ব ভারতীয় গণমাধ্যম থেকে জানা গিয়েছে, আইসার সদস্যরা আরও বলেন, ‘এ বছর প্রশাসন চলতি বছরের ফি বাবদ ১৫ টাকা না নিয়ে ক্যাম্পাসে ছাত্রদের ব্যক্তিগত অধিকারটুকু দমিয়ে দিতে চাইছে।
বছরের প্রথম থেকেই প্রশাসন ছাত্রদের অধিকারের বিরুদ্ধেই কথা বলে গিয়েছে। জেএনইউএসইউ এর নির্বাচনী প্রক্রিয়া হোক অথবা ভোটের ফলপ্রকাশ হোক, প্রশাসন ছাত্র সংগঠন কে সাহায্য না করে, তাকে সংবিধিবদ্ধ কমিটির অংশ না করে বিরুদ্ধাচরণ করে চলেছে। আর এখন প্রশাসন চায় প্রায় ৮,৫০০ ছাত্রের দাবি দমিয়ে দিতে। এসবই পূর্ব পরিকল্পিত।’
১৭ অক্টোবর এ সমস্ত ঘটনার প্রতিবাদে রাতে ক্যাম্পাসে জেএনইউএসইউ টিএফএফএলএএস অফিসের বাইরে আনন্দ পটবর্ধনের ‘রাম কে নাম’ ছবিটি দেখানো হয়। স্ক্রিনিংয়ে ভিড় হয়েছিল ভালই।
প্রশ্ন উঠছে ১৬ অক্টোবরে ঘটে যাওয়া আন্দোলনের অনল কি এখনই স্তিমিত, নাকি অন্য কোনও সূত্র ধরে আবার প্রশ্ন উঠবে গনতান্ত্রিক অধিকারের। এর উত্তরের জন্য লড়াই জেএনইউ ক্যাম্পাসে বরাবরই হয়ে এসেছে। একাধারে দেখতে গেলে খন্ড খন্ড লড়াইয়ের যে অধ্যায় শুরু হয়েছিল ইতিহাস থেকে, তাতে দাঁড়ি পড়েনি এখনও।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584