শ্যামল রায়,কালনাঃ
রবিবার কালনা পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর সিরিয়াল কিলারকে সোমবার সকালে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সাংবাদিক সম্মেলনের পর কালনায় ফিরিয়ে এনে আদালতে তোলা হয়।তদন্তকারী অফিসার হোসেন পারভেজের আবেদনের ভিত্তিতে কালনা অতিরিক্ত মুখ্য দায়রা আদালতের বিচারক অভিযুক্তের জামিন নাকচ করে দিয়ে বারো দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
উল্লেখ্য,রবিবার শিকারে বেরিয়ে কালনা পুলিশের হাতে অস্ত্র সমেত ধরা পড়ে যায় সিরিয়াল কিলার কামরুজ্জামান সরকার। পুলিশের দাবি নাদনঘাট থানার নসরতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত চর-গোয়ালপাড়ার এই অপরাধী তাদের কাছে তার অপরাধের সব কথা স্বীকার করে নিয়েছে।এই অপরাধীর নেশা ছিল,বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মচারী সেজে লাল মোটর বাইক নিয়ে বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ানো।
আরও পড়ুনঃ কামা ছয় ছয়টা মহিলাকে খুন করেছে বিস্মিত রাণীনগর
মিটার দেখার নাম করে বিভিন্ন বাড়িতে দিনের বেলাতেই প্রবেশ করতো।বাড়িতে মহিলাকে একা পেলেই তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ধর্ষণ করে গহনা লুঠ করতো।তারপর প্রমান লোপাটের জন্য প্রথমে মাথায় রডের আঘাত করে অজ্ঞান,শেষে গলায় সাইকেলের চেন পেঁচিয়ে মহিলার মৃত্যু নিশ্চিত করেই বাইক নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যেত।পুলিশের দাবি বিগত কয়েক মাসে কালনা থানা সহ পাশাপাশি থানাগুলিতে ১২ থেকে ১৪টি অপরাধের ঘটনা ঘটিয়েছে এই অপরাধী।
গত বৃহস্পতিবার বিকালে কালনা থানা এলাকায় এক দশম শ্রেণীর ছাত্রীকে পাশবিক অত্যাচারের পর হত্যা করার চেষ্টা করা হয়। বর্তমানে তাকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজে ভেন্টিলেশনে রেখে চিকিৎসা চলছে।
পুলিশ সূত্র থেকে জানা যায়, আক্রান্ত মহিলাদের থেকে খোয়া যাওয়া কিছু গহনা রবিবার গভীর রাতে অপরাধীর বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
যদিও পুলিশের এই দাবি নাকচ করে দেন অভিযুক্তর স্ত্রী জাহানারা বিবি।তিনি জানান,রবিবার রাত তিনটে নাগাদ পুলিশ তাদের বাড়িতে হানা দিয়ে যে গহনাগুলি নিয়ে গেছে তা ইমিটেশন ও রুপোর। ওগুলি আমি এবং আমার তিন ছেলে মেয়ে ব্যবহার করতাম।তিনি আরও জানান, আমার স্বামী সকালে বেরিয়ে সন্ধ্যায় ফিরে আসতো।কিন্তু এদিন আর ফিরে আসেনি। রাতে বাড়িতে হানা দেওয়া পুলিশের মুখেই খবরট পাই যে,তার স্বামীকে কালনা থানায় আটকে রাখা হয়েছে।
অভিযুক্ত কামারুজ্জামানের আইনজীবী শুভ্র রায় জানান, তার মক্কেল একজন মানসিক রুগী।সে মুর্শিদাবাদের নিজের বাড়ি ছেড়ে দিয়ে শ্বশুরবাড়িতে থাকতো।তার স্ত্রী ও শাশুড়ির আয়েই সংসার চলতো।তিনি কালনা পুলিশ প্রশাসনের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,নিজেদের অকর্মণ্যতা ঢাকতেই তার মক্কেলকে ফাঁসানো হয়েছে।
পুলিশের গ্রেপ্তারের দাবিকে মন থেকে মেনে নিতে পারেননি আক্রান্ত ছাত্রীর এলাকার মানুষজনও।
সোমবার সকাল ৯ টা থেকে বেলা সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত সিঙ্গারকোন বাজারে বৈচি- কালনা সড়ক অবরোধ করে রাখে এলাকার সহস্রাধিক সাধারণ মানুষ।মাঝে একবার জোর করে অবরোধ তুলতে গিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে পুলিশ।ঘটনাস্থলে পুলিশ সংখ্যা বাড়ানো হলেও শেষে সাধারণ মানুষের দাবিকে মান্যতা দিতে হয় পুলিশকে। মাইকে পুলিশ ঘোষণা করে আহত ছাত্রীর চিকিৎসার ব্যাপারে তারা সম্পুর্ন দায়িত্ব নেবে।পাশাপাশি ধৃত ব্যক্তির অপরাধের ব্যাপারে কি কি জানা গেল, তাও জানানো হবে।
পথ অবরোধ উঠে যাওয়ার পর কালনা-২ ব্লকের বিডিও দপ্তরের সামনে আক্রান্ত পরিবারের ক্ষতিপূরণের দাবিতে দুই ঘন্টা অবস্থান বিক্ষোভ চলে।শেষে বিডিও-র আশ্বাস পেয়ে অবস্থান বিক্ষোভ উঠে যায় |
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584