খালি হাতে আত্মরক্ষার কৌশল

0
1030

তপন চক্রবর্তী,উত্তর দিনাজপুরঃ

the strategy of self defense
ক্যারাটে প্রশিক্ষণ । নিজস্ব চিত্র

শিশুদের মধ্যে প্রথম থেকেই আত্মরক্ষা,সুস্থ সবল শারীরিক ও মানসিক দৃঢ়তা তৈরীতে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ মার্শাল আর্ট ক্লাবের জুড়ি মেলা ভার।নিয়মিতভাবে সমাজের স্বার্থে এই বেসরকারি রায়গঞ্জ মার্শাল আর্ট ক্লাব একটি নিবেদিত প্রাণ।রায়গঞ্জ মার্শাল আর্ট তাদের এই প্ৰকৃত মানুষ গড়ার কাজ সমাজের স্বার্থে শুরু করেছিল ২০ বছর পূর্বে ১৯৯৯ সালের কোন এক শুভলগ্নে।

the strategy of self defense
নিজস্ব চিত্র

প্রশিক্ষক উৎপল দাস বলেন তাদের সংস্থা রায়গঞ্জের ভারত সেবাশ্রম সংঘ,রায়গঞ্জের দেবশ্রী ব্যায়ামাগার,রায়গঞ্জ স্টেডিয়াম এবং কালিয়াগঞ্জ শহরে ক্যারাটের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে।শুধুমাত্র কালিয়াগঞ্জে শতাধিক কচিকাঁচারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে বললেন রায়গঞ্জ মার্শাল আর্ট ক্যারাটে সংস্থার প্রশিক্ষক উৎপল দাস।উৎপল বাবু বলেন, “অভিভাবকরা তাদের ছেলেমেয়েদের ক্যারাটের প্রশিক্ষন দেবার জন্য এখন অনেক সচেতন হয়েছে।

আগে আমাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্যারাটে কি জিনিস বোঝাতে হিমশিম খেতে হত।আর এখন অভিভাবকেরা আমাদের সংস্থায় চলে আসে তার ছেলে মেয়েদের নিয়ে।পার্থক্যটা এখানেই।”
ক্যারাটে আর্ট খালি হাতে খেলার একটি পদ্ধতি।এই খেলায় খেলোয়াড়রা কোনো রকম অস্ত্র ব্যবহার করেন না।অর্থাৎ প্রতিযোগিকে খালি হাতে লড়তে হয়।

আরও পড়ুনঃ আত্মরক্ষার প্রশিক্ষনের লক্ষ্যে মার্শাল আর্ট ট্রেনিং

খালি হাতে শত্রুর হাত থেকে বাঁচার জন্য ক্যারাতে মানুষকে রক্ষা করে।এই শিক্ষা একজন খেলোড়ারকে অতিপটু করে তুলতে পারে বলেই খেলোড়ারদের মধ্যে গড়ে ওঠে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস সাফল্যের অর্জনের রহস্য গূঢ়তত্ত্ব।এই খেলাটি শারিরীক যোগ্যতার সাথে সাথে মানসিক বুদ্ধিমত্তার উপর নির্ভরশীল।ধরে নেওয়া হয় এই আত্মরক্ষামূলক কৌশলকে কাজে লাগাতে শারিরীক যোগ্যতার প্রয়োজন ৪০% এবং বুদ্ধির প্রয়োজন ৬০%।

বিকেএসপিতে কারাতে বিভাগ শুরু হয় ২০১১ সালে। ১২ জন শিক্ষার্থী এবং ১ জন প্রশিক্ষক দিয়ে। এই খেলা বরিশাল আঞ্চলিক কেন্দ্রে শুরু হয়। ১ বছর অনুশীলন করার পর তারা বরিশাল বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়। ভারতে শুরু হয় এ খেলা ৩য় শতাব্দীতে কিন্তু এর শুরু এবং বিশ শতকের খেলার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।এটি একটি আত্মরক্ষামূলক কৌশল।

এটি চীনে শুরু হয়েছিল দু’জনের মধ্যে যুদ্ধ বা মারামারি করার কৌশল হিসেবে। এই মারামারির কৌশল থেকে ক্যারাটে শিক্ষণের শুরু হয়েছিল,যেটির নাম বর্তমান নাম কংফু।ক্যারাটে শিক্ষার্থীর প্রশিক্ষণ শুরু হয় ডযরঃব ইবষঃ দিয়ে এবং শেষ হয় ইষধপশ ইবষঃ দিয়ে।

আর এ খেলায় ইষধপশ ইবষঃ হলো সর্বোচ্চ সম্মানসূচক বেল্ট।ক্যারাটের ভেতর মোট সাতটি বেল্ট রয়েছে যা প্রশিক্ষণার্থী তার অনুশীলন, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে অর্জন হয়।ক্যারাটে শিক্ষার উপর ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্বে আজ থাকছে- ওয়ার্ম আপ, কিবাডাসী ও সোডন সখী।

একজন প্রশিক্ষার্থীর প্রশিক্ষণের শুরুতে প্রথমে একটু ওয়ার্ম আপ করে নিতে হয় তারপর হাতও পায়ের ব্যায়াম করে নিলে ভাল।কিছুক্ষণ ব্যায়ামের পর তারপর ছালাম, বো ও কিবাডাসী এর মাধ্যমে ক্লাস শুরু হয়।শিক্ষার্থী তাঁর দক্ষতা ও কৌশল দিয়ে রপ্ত করে নেবে প্রতি খবংংড়হ. প্রথমে কোমড়ের দু’পাশে হাত রেখে দু’পা হাটু ভেঙে দাঁড়ানোর নাম কিবাডাসী।

কিবাডাসী হলো ক্যারাটের দাঁড়ানো একটি পজিশনের নাম।আর এ কিবাডাসী অবস্থায় অর্থাৎ হাটু ভেঙে যখন দু’হাত কোমড়ের দু’পাশে থাকে তখন পায়ের এবং হাটুর শক্তি বৃদ্ধি পায় সেই সাথে যখন প্রতিপক্ষকে সোডনসখী অর্থাৎ সিঙ্গেল পাঞ্চ করে তখন ঘুসির ওজন অনেক বেড়ে যায়। হাতগুলো পুরোপুরি মুষ্টি করে বৃদ্ধা আঙ্গুলটি শাহাদত,মধ্যমা, অনামিকা,তর্জনির মাঝখানে থাকবে।

তারপর মুষ্টিবন্ধ হাত দুটি কোমড়ের দু’পাশে রেখে প্রথমে ডান হাত সজোরে কোমড় থেকে সোজা বুক বরাবর মারতে হবে মুষ্টি দ্বারা। কোমড় থাকা হাতটি ঘুরে সোজা সজোরে পাঞ্চ করতে হবে। অর্থাৎ স্বাভাবিক অবস্থায় একটি ঘুষি মারলে যতটুকু শক্তি না পাওয়া যাবে তার চেয়ে অধিক শক্তি তৈরি হবে যখন প্রশিক্ষণার্থী কিবাডাসী থেকে সোডনসখী মারবে।

আর সোডনসখীর মাধ্যমে একজন প্রশিক্ষনার্থী কিবাডিসী থেকে সোডনসখী মারবে।আর সোডন সখীর মাধ্যমে একজন প্রশিক্ষার্থীর পেশীর শক্তি বৃদ্ধি পায়। সোডনসখী মারার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে হাতের ও পায়ের পজিশন ঠিক থাকে এবং বুক টান থাকবে, ঘাড় বা মাথা নড়বেনা সোজা থাকবে।যখন ডান হাত সোডন সখী মারা হবে তখন বাম হাত কোমড়ে মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় থাকবে। আবার যখন বাম হাতে মারবে তখন ডান হাত কোমড়ে থাকবে।

এভাবে দীর্ঘ মেয়াদী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রশিক্ষনার্থী ধারাবাহিকভাবে রপ্তকরণের প্রতিটি বিষয় পর্যায়ক্রমে শিক্ষার্থীকে তার ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী সোডন সখী প্রতিনিয়ত অনুশীলনের মাধ্যমে বাড়ানো যেতে পারে।যত বেশি নিষ্ঠার সাথে প্রশিক্ষণ নেবে তত নিপুণ হবে তার প্রতিটি কৌশল।
এ বিদ্যার দৈহিক শক্তি কৌশলের সাথে থাকা চাই উপস্থিত বুদ্ধি।

যা বেশি উপকারে আসে। খেলা হিসেবে ক্যারাটে দর্শকদের কাছে আকর্ষণীয় বটে। আর একজন খেলোয়াড়ের কাছে ক্যারাটে হচ্ছে শারীরিক ফিটনেসের রক্ষা কবজ। একজন ভাল প্রশিক্ষক প্রশিক্ষনার্থীর প্রতিটি কৌশল আয়ত্বে যতক্ষন না আসবে অর্থাৎ চবৎভবপঃ না হবে ততক্ষণ প্রশিক্ষার্থীর পরবর্তী খবংড়হ পাবে না।
একজন শিক্ষার্থী ইষধপশ ইবষঃ পেলেই তাকে প্রশিক্ষক হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। ১৯৭০ সালে যখন মি.পারভেজ মিস্ত্রি জাপান থেকে ভারতে ফিরে আসেন তখনই ভারতে খেলাটি পুনর্জন্ম লাভ করে। তাঁর প্রশিক্ষণেই ভারতের ৯৫% খেলোয়াড় ক্যারাটে খেলায় প্রশিক্ষিত হয় এবং তিনি এখনো ভারতে কারাতে জগতে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব।

এই খেলায় প্রধান কৌশলগুলো হলো ঝঃৎরশরহম করপশরহম এবং চঁহপযরহম এগুলো করা হয় শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ দিয়ে, এখানে শরীরের বিভিন্ন অংশই অস্ত্র হিসেবে কাজ করে। প্রতিপক্ষের সাথে যুদ্ধ করার প্রধান অস্ত্রই হলো হাত এবং পা।একজন ইষধপশ ইবষঃ প্রাপ্ত ব্যক্তি হাত অথবা পা দিয়ে ১৫০ কেজি ওজনের বরফের টুকরো অথবা একটির উপর একটি রাখা তিনটি ইট ভাঙতে পারবে।দর্শকরা এটাকে মনে করেন একটি কৌশল কিন্তু একজন প্রশিক্ষণার্থী কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমেই এই যোগ্যতা অর্জন করে থাকে। একজন প্রশিক্ষণরত ক্যারাটে খেলোয়াড়দের কিছু সুবিধাও রয়েছে।

সে নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস ও সাহস নিয়ে শহরে চলাফেরা করতে পারে। নিজেকে রক্ষা করার কৌশল হিসেবে অসংখ্য মহিলা সারা পৃথিবীতে এই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে। পুরুষের শক্তির সাথে পেরে ওঠার এটাই মহিলাদের একমাত্র উপায়। গোটা পৃথিবীতে পুলিশ ও আর্মিদেরকেও এখন ক্যারাটে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
কারাতে ও অন্য খেলার মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে এখানে বয়সের বিষয়টি মোটেই বিবেচ্য নয়।

অপেক্ষাকৃত বেশি বয়স্ক শিক্ষার্থীরাও বিভিন্ন কৌশল শিখতে পারে। এগুলো তারা তাদের বুদ্ধির মাধ্যমে সে অর্জন করে থাকে। কারাতে হলো একটি শিল্প কৌশল,আত্মবিশ্বাস এবং প্রতিপক্ষকের আক্রমণ বা আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার একটি উপায়।

আজ সারা বিশ্ব জুড়ে ক্যারাটের জয় জয়কার। বিশেষ করে আত্মরক্ষার কথা ভেবে সবাই এই খেলাটির প্রতি ঝুঁকে পড়েছেন।শুধু তাই নয়, শারীরিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এর কোনো জুড়ি নেই। ক্যারাটে হলো সুস্থ সবল ও সুন্দর শরীর গঠনের রক্ষাকবচও।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here