তপন চক্রবর্তী,উত্তর দিনাজপুরঃ
মা অনেকদিন আগেই ছেড়ে চলে গিয়েছেন বহুদূরে, যেখান থেকে আর কোনওদিনই ফিরতে পারবেন না।বাবা ছিলেন,সম্প্রতি সেও তাদের ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে৷ একেবারে অনাথ হয়ে পড়েছে তিন খুদে বালক-বালিকা। নিজেরাই প্রায় ভিক্ষাবৃত্তি অবলম্বন করে হাত পুড়িয়ে সেদ্ধভাত খেয়ে কোনওরকমে প্রাণে বেঁচে আছে বছর ১১ -এর রাতিকা,৯ বছরের মুনিপ, এবং ৭ বছর বয়সের শুভশ্রী।
উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের ধনকৈল গ্রামপঞ্চায়েতের এই তিন খুদে বাসিন্দার অসহায়তার কথা জানতে পেরে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এল তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত কালিয়াগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলাপরিষদ তৃণমূল সদস্য এবং কালিয়াগঞ্জ ব্লক বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আধিকারিকেরা।
পিতৃমাতৃহীন অনাথ শিশুদের হাতে কিছু অর্থ,জামাকাপড়, চাল ডাল তুলে দেওয়া হল। আগামী দিনগুলিতে তাদের ঘর তৈরি থেকে খাদ্য ও শিক্ষার ব্যবস্থার দায়িত্ব নিল কালিয়াগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতি।
মা শুমারি দেবশর্মা মারা গিয়েছেন বছর পাঁচেক আগেই,দিনমজুর বাবা বাবলু দেবশর্মা সম্প্রতি তিন নাবালক শিশুদের ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন।তারপর থেকেই একেবারে অনাথ হয়ে পড়েছে রাতিকা ( ১১), মুনিপ ( ৯) ও শুভশ্রী ( ৭)।ক’দিন আগে ঝড়ে ভেঙে পড়েছে মাথা গোঁজার আশ্রয়টুকুও।উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ ব্লকের ধনকৈল গ্রামপঞ্চায়েতের দৌলতবাটি গ্রামে ওই ভাঙা ঘরেই তিনটি অনাথ শিশু প্রায় অভুক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
এদিন খবর পেয়েই দৌলতবাটি গ্রামে ছুটে আসেন কালিয়াগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দীপা সরকার,এলাকার তৃণমূল জেলাপরিষদ সদস্য দধীমোহন দেবশর্মা, কালিয়াগঞ্জ ব্লক বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আধিকারিক বিকাশ মজুমদার।অসহায় পিতৃমাতৃহীন অনাথ শিশুদের পাশে দাঁড়াতে সর্বতভাবে সাহায্য ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন তারা।
সাময়িকভাবে তাদের হাতে কিছু অর্থ,চাল ও জামাকাপড় তুলে দেওয়ার পাশাপাশি সমাজের মূল স্রোতে তাদের ফিরিয়ে আনতে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা এবং সর্বোপরি খাদ্যের ব্যাবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিলেন কালিয়াগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি।
বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মাধ্যমে তাদের আশ্রয় ঘরবাড়ি মেরামত করে তাদের থাকার ব্যাবস্থা করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ করলেন তারা।এই তিন শিশুর মধ্যে বড় মেয়ে রাতিকা জানায়,সে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশুনা করে। বাবা বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার পর রাতিকাই ছোট ছোট ভাই বোনেদের খাবারের ব্যবস্থা করতে এদুয়ারে ওদুয়ারে যাচ্ছে। আবার নিজেই নিজেই হাত পুড়িয়ে ভাত ফুটিয়ে তাদের মুখে অন্ন জোগাচ্ছে। তারা চায় আর পাঁচটা ছেলেমেয়ের মতো খেয়ে পড়ে বাঁচতে,লেখাপড়া করতে।
আরও পড়ুনঃ টিফিনের খরচ বাঁচিয়ে অনাথ আশ্রমকে আর্থিক সাহায্য প্রদান পড়ুয়াদের
আজ এই অনাথ শিশুদের পাশে এসে দাঁড়াল তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত কালিয়াগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতি ও এলাকার জেলাপরিষদ সদস্য। অনাথ শিশুদের অন্ন বস্ত্র বাসস্থান ও শিক্ষার ভার তুলে নিলেন নিজেদের কাঁধে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584