বছরের প্রথম দিনেই গৃহবন্দী ছিলেন তিন প্রাক্তন কাশ্মিরী মুখ্যমন্ত্রী

0
52

শরীয়তুল্লাহ সোহন, ওয়েব ডেস্কঃ

নতুন বছরের প্রথম দিনেই গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছিল জম্মু-কাশ্মীরের তিন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে। তাঁদের বাড়ির দরজায় রেখে দেওয়া হয়েছিল পুলিশের ভারী ট্রাক। শিকলও লাগানো হয়েছিল সদরে এমনটাই জানা গিয়েছে। বিধানসভা আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে নেতারা যাতে শান্তিপূর্ণ ধরনায় বসতে না পারেন, সে জন্যই এ ব্যবস্থা করা হয়েছিল। প্রশাসনের এই ‘জুলুম’–এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছে উপত্যকার সব রাজনৈতিক দল। ব্যতিক্রম অবশ্যই দেশের শাসক দল বিজেপি।

Jammu Kashmir
সৌজন্যেঃ এনডিটিভি

গতকাল শনিবার শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়েছিল পাঁচদলীয় জোট গুপকর অ্যালায়েন্স। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ জোটের এই কর্মসূচির কথা জানিয়ে বলেছিলেন, শান্তিপূর্ণভাবে তাঁরা ‘ডিলিমিটেশন কমিশন’–এর প্রস্তাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবেন। রাজ্য দ্বিখণ্ডিত হওয়ার পর এই কমিশন জম্মু ও কাশ্মীরের বিধানসভার সীমানা পুনর্গঠনের কাজে হাত দেয়। গত ডিসেম্বর মাসে এই কমিশন সুপারিশ করে, নতুন এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বিধানসভার মোট আসন বাড়িয়ে করা হবে ৯০। এর মধ্যে জম্মু অঞ্চলে বাড়বে ৬টি আসন। ৩৭ থেকে বেড়ে এই অঞ্চলের মোট আসন হবে ৪৩।

কাশ্মীর অঞ্চলে একটি আসন বেড়ে হবে ৪৭। এই প্রস্তাব কার্যকর হলে জম্মু ও কাশ্মীরের মধ্যে আসনসংখ্যার ব্যবধান ৯ থেকে কমে ৪-এ দাঁড়াবে। উপত্যকার রাজনীতিকদের অভিযোগ, সরকার গঠনে সাম্প্রদায়িক দ্বি-মেরুকরণের মাধ্যমে জম্মুকে সুবিধা পাইয়ে দিতে বিজেপি এই ব্যবস্থায় এগোচ্ছে।

উপত্যকার সব রাজনৈতিক দল এই আসন বিন্যাসের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। কমিশনের প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেছে। শনিবার ওই প্রস্তাবের বিরোধিতার জন্য শান্তিপূর্ণ ধরনার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল। তা বানচাল করতেই তিন সাবেক মুখ্যমন্ত্রীকে গৃহবন্দী করা হয়েছিল।

শনিবার সাতসকালেই গৃহবন্দিত্ব নিয়ে টুইট করেছিলেন ওমর আবদুল্লাহ। নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘নতুন বছর শুরু হলেও কিছু কিছু জিনিস বদলায় না। জম্মু-কাশ্মীরে বেআইনিভাবে মানুষজনকে গৃহবন্দী করে রাখছে। সাধারণ স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক আন্দোলনকেও প্রশাসন ভয় পাচ্ছে। আমাদের বাড়ির ফটকের সামনে পুলিশ তাদের ট্রাক দাঁড় করিয়ে রেখেছে, যাতে জোটের নেতারা শান্তিপূর্ণ ধরনায় বসতে না পারেন।’ ওমর টুইটের সঙ্গে ট্রাকের ছবিও জুড়ে দিয়েছিলেন।

সেই সঙ্গে দিয়েছেন আরও একটি ছবি, যাতে দেখা যাচ্ছে তাঁর বাবার বাসভবনসংলগ্ন এক ফটকে চেইন লাগানো রয়েছে। ওই ফটক দিয়ে ফারুক আবদুল্লাহ তাঁর মেয়ের বাসভবনে যাওয়া-আসা করেন। ওমর আবদুল্লাহ টুইটে লিখেছেন, ‘তবু দেশের নেতারা গলা উঁচিয়ে বিশ্বকে শোনান যে ভারত বৃহত্তম গণতন্ত্র! বিস্ময়!’

টুইট করেছিলেন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতিও। তিনি লেখেন, ‘সরকার ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল ও রাজ্য দ্বিখণ্ডিকরণের ঢাক অহরহ পিটিয়ে চলেছে। অথচ এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতার প্রশ্নে অসহিষ্ণু। অসংখ্যবার আমাদের গৃহবন্দী করা হচ্ছে। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দেখাতে দিচ্ছে না।’ মেহবুবা এই সঙ্গে অভিনন্দন জানিয়েছেন, বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক কর্মী-সমর্থকদের, যাঁরা দমন–পীড়ন অগ্রাহ্য করে শনিবার শ্রীনগরের বিভিন্ন স্থানে কেন্দ্র পুনর্বিন্যাস প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ করেছেন।

আরও পড়ুনঃ ইসরায়েলি সেনার গুলিতে আবারও নিহত সাধারণ ফিলিস্তিনি

গুপকর জোটের বাইরের রাজনৈতিক দলগুলোও গৃহবন্দী রাখার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। জোটত্যাগী দল পিপলস কনফারেন্স নেতা সাজ্জাদ লোন টুইট করে বলেছেন, ‘নেতাদের বন্দী রাখার কোনো যুক্তিগ্রাহ্য কারণই আমি দেখতে পাচ্ছি না। শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক বিক্ষোভকে এভাবে দমানো হলে সহিংস বিক্ষোভকেই উৎসাহিত করা হবে।’

আরও পড়ুনঃ যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোতে ভয়াবহ দাবানলে পুড়ল ১০০০ বাড়ি, জারি জরুরি অবস্থা

জম্মু-কাশ্মীর প্রদেশের কংগ্রেস সভাপতি গুলাম আহমেদ মির গৃহবন্দী রাখার বিষয়কে ‘অগণতান্ত্রিক ও অনৈতিক’ জানিয়ে বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত দেশের গণতান্ত্রিক রীতিনীতির পরিপন্থী। সাবেক মুখ্যমন্ত্রীদের কেন গৃহবন্দী করা হয়েছে, এর কোনো ব্যাখ্যা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি এখনও পর্যন্ত। বিজেপির উদ্যোগে গঠিত সরকারপন্থী দল জম্মু-কাশ্মীর আপনি পার্টি আসন পুনর্বিন্যাস প্রস্তাবের বিরোধিতা আগেই করেছে। দলের নেতা আলতাফ বুখারি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে জানিয়েছিলেন, কিছুতেই তাঁরা এই বিন্যাস মানতে পারবেন না। তিনি সরাসরি বলেন এখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের ওপর সংখ্যালঘুদের শাসন কায়েম হতে দেওয়া যাবে না।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here