অনির্বাণ দে, বহরমপুর, ১৬ই সেপ্টেম্বর-
বাড়ি বলেছিল – না, প্রতিবেশীরা, সমাজ বলেছিল- না।
অন্যদিকে জেদ কম নয় মেয়ে তিনটের, কম জেদী নয় স্কুলের বড়দি মুর্শিদাদি, ট্রেনার মিলনতারা দি। ওরা সবাই মিলে বলেছিল- হ্যাঁ। জিত হল জেদের, জিত হল হ্যাঁ-এর।
এবার অন্য লড়াই, এবার মাঠের লড়াই লড়তে ১৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার হাওড়া থেকে ট্রেনে উঠবে সুরাইয়া সুলতানা, সুরজাহান খাতুন, সাদিয়া ফারহান। রাজ্যের প্রতিনিধি হিসেবে ১৪ তম ন্যাশানাল মাউন্টেন বাইক চ্যাম্পিয়ানশিপে যাবে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গার দেবকুন্ডু শেখ আব্দুর রাজ্জাক মেমোরিয়াল গার্লস হাই মাদ্রাসার এই তিন ছাত্রী।
সকলের চোখেমুখেই চ্যাম্পিয়ান হওয়ার প্রত্যয়।
কিন্তু কেমন ছিল, স্কুলের রোজকার জীবন থেকে এই সাইক্লিস্ট হওয়ার দৌড়টা ?- ট্র্যাক খুব সুখকর নয়।
গরীব মুসলমান পরিবারের মেয়েদের পড়াশোনা করার, স্কুলে যাওয়ার লড়াইটা লড়ছিল ওরা রোজই। মাথায় মাঠের লড়াই লড়ার আকাঙ্ক্ষা এনেদিন স্পোর্টস ট্রেনার মিলনতারাদি, কোচ মিলনতারা খাতুন। মিলনতারা জীবন মানে অন্য এক আখ্যান। মেলেনি চাকরি, সরকারি সাহায্য তাও এলাকার ছেলে মেয়েদের মাঠমুখী করাই তার একমাত্র স্বপ্ন। নিজেও একজন প্লেয়ার, ফাইটার। ১৩ টি ন্যাশানাল ইভেন্টে কমপিট করেছেন মির্জাপুরের বাসিন্দা এই যুবতী। পাওয়া বলতে, অন্যের জয়ে নিজের যুদ্ধ জয়ের স্বাদ আর ছাত্রছাত্রীদের ভালোবাসা। এই মিলনতারার কাছেই শুরু হয় সাইকেলের ট্রেনিং।
বাড়ির বাধা কাটিয়ে শুরু হল প্র্যাকটিস।
অভাব মাঠের। মাঠ ছাড়তে রাজী নয় কেউ। মেয়েরা প্র্যাকটিস করবে! মেনে নিতে আপত্তি ছিল সমাজের মাথাদের। অবশেষে স্কুল থেকে বেশ কিছু দূরে সি আর জি এস স্কুলের মাঠ, সেখানেই আপাতত ঘুরছে সাইকেলের চাকা। বিশেষ সাইকেল দিয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল সাইক্লিস্ট এ্যাসোসিয়েশন। সেই সাইকেল নিয়েই চলছে কন্যারত্ন দের ফাইট।
ছাত্রীদের জন্য গর্বিত স্কুলের সকলেই। মাদ্রসায় শিক্ষক শিক্ষিকার অভাব, ক্লাসরুমের অভাব। তবু সব অভাবের মধ্যেই ছাত্রীদের সাফল্য আনছে লড়াই করার বার্তা।
এবছর মাদ্রাসা বোর্ডের পরীক্ষায় ১০০ শতাংশ ছাত্রী পাশ করছে। খুদে সাংবাদিকের জাতীয় স্তরের সেমিনার হোক বা জেলার কবাডি টিম- পড়াশোনার সাথে সাথে সব যায়গাতেই অংশ নিচ্ছে এই মাদ্রাসার ছাত্রীরা। সামাজিক বাধা কাটিয়ে ছাত্রীদের মধ্যে নেতৃত্বদানের ক্ষমতা বিকাশ করাই মাদ্রাসার লক্ষ্য, জানাচ্ছেন মাদ্রসার প্রধান শিক্ষিকা মুর্শিদা খাতুন। আর এই লক্ষ্যপুরনে ছক ভেঙ্গে সাফল্য এনে দিচ্ছে মাদ্রাসার মেয়েরা।
বাধা অনেক আছে তবে, সুরাইয়া সুলতানা, সুরজাহান খাতুন, সাদিয়া ফারহানদের দেখে খেলার মাঠে নামার লড়াইতে নাম লেখাচ্ছে স্কুলের বাকি ছাত্রীরাও।
আর মাঠের লাইনে দাঁড়িয়ে খিদ্দার মতো, মিলনতারা বলছেন,- ‘ফাইট কোনি, ফাইট’।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584