শান্তনু সাহা
আপনি কি বিশ্বজুড়ে এই লকডাউন পরিস্থিতিতে ঘরে বসে একঘেয়েমি বোধ করছেন? এতগুলো দিন ঘরে বসে কি করবেন তাই ভাবছেন? তবে এখানে রয়েছে আপনার জন্য কিছু সহজ উপায় যার মাধ্যমে এই সময়টা আপনি ঘরে বসেই অবসাদমুক্ত সুস্থ স্বাভাবিকভাবে কাটাতে পারেন।
প্রথমত মারণ ভাইরাস করোনা প্রতিরোধের জন্য গোটা বিশ্বে এখন লকডাউন চলছে। এবং এই মারাত্মক ভাইরাস সংক্রমণের হাত থেকে নিজেদের এবং সমাজকে রক্ষার জন্য এই সময়টা ঘরের মধ্যে থাকাই যথার্থ।
যদিও এখন আমাদের সব দৈনন্দিন কাজকর্ম বন্ধ তাও এই সময়টা আমরা বাড়ির মধ্যে পরিবারের সকলের সাথে থেকেই এমন কিছু কাজ করতে পারি যার ফলে শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে সুস্থ এবং হাসি-খুশি থাকা যায়।
এইরকম ৮ টি সহজ উপায় আপনার জন্য-
(১) বই পড়ুন
বিশেষজ্ঞরা বলেন যে-কোনো অভ্যাস গড়তে বা ভাঙতে ২১ দিন সময় লাগে। বই পড়া হল এমন একটি অভ্যাস যা আপনার জীবন পরিবর্তন করে দিতে পারে। সমস্ত সফল ব্যক্তিদের কাছেই এটা অনস্বীকার্য যে তাদের সাফল্যের পেছনে বই এর অবদান বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
আর এই বিষয়টি বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত যে বই পড়লে একাগ্রতা বাড়ে এবং মানসিক চাপ দূর হয়। তাই এই সময়টাতে আপনি বই পড়ার মতো অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন যা আপনার জ্ঞান বিস্তার ও জীবনে চলার পথে অনেক ক্ষেত্রেই সাহায্য করবে।
(২) মেডিটেশন
‘when you can’t go outside, go inside’
আপনি যদি এই সময়টা নিজেকে সুস্থ এবং আরও প্রোডাকটিভ করতে চান তাহলে সবার প্রথমেই যেই কাজটি আপনাকে বেছে নিতে হবে সেটা হল মেডিটেশন। দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততার জন্য আপনি হয়তো রেগুলার মেডিটেশন এর সময় পেয়ে থাকেন না।
কিন্তু এখন আপনার হাতে যথেষ্ট সময় রয়েছে মেডিটেশনের মতো নতুন কিছু অনুভব করা। প্রতিদিন নিয়মিত কিছুটা সময় মেডিটেশন করুন যার ফলে আপনার শরীর ও মনের শান্তি বজায় থাকবে এবং শরীরের ইমিউনিটিও বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া মেডিটেশন মানসিক চাপ কমাতে, কর্মশক্তি বাড়াতে এবং শরীর ও মনকে সুস্থ রাখতে অনেকভাবেই সাহায্য করে। মেডিটেশন করার সহজ কিছু পদ্ধতি আপনি ইউটিউবে দেখে নিতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ বাড়িতেই বানান স্যানিটাইজার
(৩) নিয়মিত ব্যায়াম
ব্যায়াম যেটা মানব শরীরকে সুস্থ এবং কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া শরীরে ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্য ভালো খাওয়ার এর সাথে সাথে নিয়মিত ব্যায়াম অপরিহার্য।
এখন যেহেতু বাড়িতেই থাকতে হচ্ছে তাহলে নিয়ম করে রোজি কিছুটা সময় সকাল বা সন্ধ্যে নিজের শরীরচর্চার কাজে লাগান যার ফলে আপনার শরীর ও মন দুই সতেজ থাকবে। কেও যদি নিজের ওজন কমাতে বা বাড়াতে চান এই সময়টা রেগুলার ব্যায়াম করুন। মানসিক চাপ কমিয়ে মনকে খুশি রাখতেও ব্যায়াম অনেকাংশে সাহায্য করে।
(৪) স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দৈনন্দিন কাজের ব্যস্ততার জন্য ঘরের খাবারের চেয়ে বাইরের রেস্তরাঁর খাবারের উপরি নির্ভর করতে হয়। সেক্ষেত্রে অনেক সময় স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া হয়না। এখন এই অবসর সময়ে আপনারা বাড়িতে থেকেই বিভিন্ন রকম স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন যার ফলে আপনার শারীরিক ইমিউনিটিও বৃদ্ধি পাবে এবং শরীর সুস্থ থাকবে।
তাছাড়া আপনি এখন যথেষ্ট সময় পাচ্ছেন এই সময়ে বাড়ির সকলের সাথে রান্না করতে পারেন। সকলে মিলে বাড়িতে রান্না করার আলাদাই মজা, যেটা বেশিরভাগ সময় অনেকে কর্মব্যস্ততার জন্য চাইলেও পারেনা, এখন সেটা করতে পারেন ফলে আপনার মনও ভালো থাকবে।
(৫) ক্লিনিং এবং রুম ডেকোরেশন
নিজেদের ঘরবাড়ি পরিস্কার করার জন্য আপনি এর আগে রোজ কর্মব্যস্ততার মধ্যেও হয়তো এমন একটি দিনের অপেক্ষা করতেন। এখন আপনি সেই সময়টা পাচ্ছেন, তাহলে দেরি কীসের? এর মধ্যে একটি দিন ঠিক করে সেদিন বাড়ির সকলে একসাথে নিজেদের ঘরবাড়ি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে ফেলুন।
ঘরের বিভিন্ন ফার্নিচার সরিয়ে গুছিয়ে রাখতে পারেন। ঘরটাকে নিজেদের ইচ্ছে মতো সাজিয়ে রাখুন। একসাথে কাজের মাধ্যমে নিজের পরিবারের সাথে সুন্দরভাবে সময় কাটাতে পারেন।তাছাড়া ঘরের পরিবেশ আমাদের মনের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে সুতরাং ঘরের পরিবেশ যদি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার মনও ভালো থাকবে।
(৬) নিজস্ব শখ পূরণ
আমাদের প্রত্যেকের কিছু না কিছু শখ থাকে যেমন নাচ, গান, ছবি আঁকা, লেখা এবং হাতে তৈরী বিভিন্ন জিনিস বানানো ইত্যাদি। কিন্তু রোজকার ব্যস্ততার কর্মজীবনে এসব ছোটো ছোটো শখের কাজগুলো করার আর সময় থাকে না। লকডাউনের এই খালি সময়টা আপনি নিজের শখ অনুযায়ী সেইসব কাজগুলো করে সময় কাটাতে পারেন।
আপনি যদি নতুন কোনো স্কিল শিখতে চান এখনি সময় কাজে লাগান। ইন্টারনেটের যুগে নিমেষেই অনলাইনে ইচ্ছে মতো যেকোনো স্কিল শেখা সম্ভব। নতুন কিছু শেখার মাধ্যমে আপনি নিজেকে আরো প্রোডাকটিভ করতে পারবেন এবং যার ফলে মানসিক দিক থেকেও আপনি অনেক পজিটিভ অনুভব করবেন।
(৭) বন্ধুদের সাথে রিকানেক্ট হওয়া
এই লকডাউনে ঘর থেকে বেরিয়ে বন্ধুদের সাথে দেখা করা হয়তো সম্ভব না তবে কিছুটা সময় আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে মোবাইলে কথা বলে দেখুন অবশ্যই আপনি পজিটিভ অনুভব করবেন।
আপনার যেসব পুরনো বন্ধুরা অনেক দূরে থাকে বহুদিন দেখা হয়নি এবং দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততার জন্য তাদের সাথে কথাও বলতে পারেননি এখনি সময় তাদের সাথে কথা বলার। গ্রুপ ভিডিও কলের মাধ্যমেও আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে কথা বলতে পারেন। এসবই আপনাকে মানসিক অবসাদের হাত থেকে রক্ষা করে আপনাকে সুস্থ ও হাসি-খুশি রাখতে সাহায্য করবে।
(৮) সপরিবারে সিনেমা দেখা
লকডাউনে বাইরে গিয়ে সিনেমা দেখা তো সম্ভব না কিন্তু ঘরে বসেই বাড়ির সকলের সাথে বিভিন্ন সিনেমা দেখা যেতেই পারে। পুরনো বা নতুন যাই সিনেমা হোক্ না কেন যেটা আপনি এর আগে কখনো দেখেননি এমন কিছু সিনেমা দেখতেই পারেন।
অথবা এমন কোনো সিনেমা যেটা আপনি অনেকদিন ধরেই দেখতে চাইছিলেন কিন্তু সময় পাচ্ছিলেন না এখন আপনি সেইসব সিনেমা গুলো দেখে নিতে পারেন। বাড়িতে বসে সকলের সাথে সিনেমা দেখা সাথে সবার প্রিয় পপকর্ন বেশ দারুন কমবিনেশন। এই ফ্রী সময়টা ভালো ভালো সিনেমা দেখে পজিটিভির সাথে অবসর কাটিয়ে তুলুন এবং মানসিক দিক থেকেও ফ্রেশ ও সুস্থ থাকুন।
সর্বোপরি কেউই এই লকডাউনের সময় আতঙ্কিত হবেননা। এই সময়টা আপনি আপনার পরিবারের সাথে ভালোভাবে সময় কাটান এবং শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে সুস্থ থাকুন।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584