অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, স্পোর্টস ডেস্কঃ
কয়েক দিন আগে যেমন আইএসএল টেবলের এক ও দশ নম্বর দলের মধ্যে ম্যাচে উত্তেজনার পারদ চরমে ওঠে, তেমনই রবিবার দুই ও ন’নম্বর দলের মধ্যে ম্যাচেও এমনই উত্তেজনায় ঠাসা লড়াই আশা করা যেতে পারে। কারণ, দুই দলই বিখ্যাত তাদের লড়াকু মানসিকতার জন্যই। এটিকে মোহনবাগান ও কেরালা ব্লাস্টার্সের মধ্যে ম্যাচ তাই উপভোগ্য হয়ে উঠতে পারে।
অন্য দিকে, কেরালা ব্লাস্টার্স ইদানীং বেশ লড়াকু মেজাজে রয়েছে। প্রথম সাতটি ম্যাচের মধ্যে চারটিতেই হারার পরে শেষ পাঁচ ম্যাচে অপরাজিত কিবু ভিকুনার দল। এই স্প্যানিশ কোচের প্রশিক্ষণেই গত মরশুমে হিরো আই লীগ জয়ী হয় মোহনবাগান। গত পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে দুটিতে তারা জয় পায়, বেঙ্গালুরু এফসি (২-১) ও জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে (৩-২)।
বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে ৯৩ মিনিট পর্যন্ত ১-১ থাকার পরে শেষ মুহূর্তে কেপি রাহুলের অসাধারণ গোলে জয় পায় কেরালা। জামশেদপুরের বিরুদ্ধে ৬৬ মিনিটে লালরুয়াথারা লাল কার্ড দেখার পরেও জর্ডান মারের দু’টি গোলে ম্যাচ জেতে কিবু-বাহিনী। জামশেদপুরের সেরা স্কোরার নেরিজাস ভাল্সকিস জোড়া গোল করেও দলকে হারের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেননি। ৮৪ মিনিটে ২-৩ করার পরেও কেরালাকে হারাতে পারেনি তারা।
পাশাপাশি আরও একটা সম্ভাবনাও কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া যায় না। রবিবাসরীয় সন্ধ্যার ম্যাচে একটা অঘটনও ঘটে যেতে পারে। কারণ, কিবু ভিকুনার দলের পারফরম্যান্সের গ্রাফ যতটা উর্দ্ধমুখী, এটিকে মোহনবাগানের ততটা নয়। গত ম্যাচে নর্থইস্ট ইউনাইটেডের কাছে হেরেছে তারা। তার দুই ম্যাচ আগে মুম্বই সিটি এফসি-র কাছেও হারে তারা। নেহাত মাঝখানে দু’টি ম্যাচের একটিতে জয় ও অন্যটিতে ড্র করে তারা। না হলে দু’নম্বর জায়গাটা হয়তো এতদিনে হারাতে হত তাদের।
আইএসএলের সফলতম কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের দলের সময়টা মোটেই ভাল যাচ্ছে না এখন। সবচেয়ে বড় কথা, তাঁর দলে এখন গোল করার লোকের অভাব। রয় কৃষ্ণা তিন ম্যাচে গোল না পাওয়ার পরে গত ম্যাচে একটি গোল করেন। ডেভিড উইলিয়ামস, এডু গার্সিয়ার চোট।
আরও পড়ুনঃ গোয়ার বিরুদ্ধে দুটো ম্যাচই জেতা উচিত ছিল বলছেন ফাউলার
মাইকেল সুসাইরাজ না থাকায় বাঁদিক দিয়ে উইং প্লে-ও হচ্ছে না দলটার। ডান দিকের উইং দিয়ে আক্রমণে ওঠার জন্য গতবার যিনি বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন, সেই প্রবীর দাসও এ বার তাঁর সেরা ফর্মে নেই। প্রীতম কোটাল, সন্দেশ ঝিঙ্গন, তিরি, শুভাশিস বসুরা রক্ষণে কড়া পাহাড়ায় থাকলেও চাপের মুখে তাদেরও মাঝে মাঝেই ভুল হয়ে যায়, যা কাজে লাগাচ্ছে বিপক্ষরা। গত ম্যাচে নর্থইস্ট ইউনাইটেড যা করে দেখাল। ফলে ক্রমশ চাপে পড়ে যাচ্ছে এটিকে মোহনবাগান।
আরও পড়ুনঃ ভারতীয় ফুটবলের উন্নতি হচ্ছে আইএসএলের অর্থের জন্য, বলছেন ফেডারেশন সচিব
তবে তা মানতে রাজি নন সবুজ-মেরুন কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। শনিবার ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে তাঁকে বলতে শোনা যায়, “গত কয়েকটা ম্যাচে আমাদের পারফরম্যান্সে উন্নতি হয়েছে। আরও উন্নতি করতে হবে। প্রথম লেগ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে আমরা আমাদের সিস্টেম, ভাবনাচিন্তাগুলো গুছিয়ে নিয়েছি। এখন আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে। আক্রমণে শক্তিও বাড়াতে হবে।”
আত্মবিশ্বাসী কিবু, শনিবার ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্সে বললেন, “ডিসেম্বরে আমরা চারটে ম্যাচ খেলেছিলাম। জানুয়ারিতে আটটা ম্যাচ খেলতে হচ্ছে আমাদের। তবে এটুকু বলতে পারি, দলের অনেক উন্নতি হয়েছে। এখন আমরা অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। প্রতি দলের বিরুদ্ধেই আমরা ইদানীং বেশ ভাল খেলেছি। এবার আমাদের সামনে লিগের দুই সেরা দল (এটিকে মোহনবাগান ও মুম্বই সিটি এফসি)। ওদের বিরুদ্ধে সফল হতে গেলে নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিতেই হবে।”
তবে ঠাসা সূচী নিয়ে কিছুটা হলেও চিন্তায় রয়েছেন কেরালার কোচ। বলেন, “৩০ দিনে এই নিয়ে আট নম্বর ম্যাচ খেলতে নামছি আমরা কাল। খুবই কঠিন অবস্থা। কখনও আমরা ম্যাচের পর রিকভার করার জন্য যথেষ্ট সময়ও পাইনি। ম্যাচের প্রস্তুতি নেওয়াটাও কঠিন হয়ে উঠেছে। তবে এটা ঠিকই যে, সব দলেরই একই অবস্থা।”
ব্লাস্টার্স কোচের বক্তব্য, “ওই ম্যাচে আমরা পজেশন, নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে ছিলাম। কিন্তু সের্গিও সিদোনচা ও ভিনসেন্তে গোমেজের একটা ছোট ভুল বোঝাবুঝিতে বল পেয়ে গোল করে দেয় রয় কৃষ্ণা। তবে এখন পরিস্থিতি পুরো আলাদা। এটিকে মোহনবাগান দুই নম্বরে। ওদের অসাধারণ কয়েকজন খেলোয়াড় ও একজন ভাল কোচ রয়েছে। আমাদের কাছে এটা কঠিন চ্যালেঞ্জ।”
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584