দীপাবলিকে যারা আলোকিত করে তারাই আজ অন্ধকারে

0
81

নিজস্ব সংবাদদাতা, পশ্চিম মেদিনীপুরঃ

এ যেন রবি ঠাকুরের সেই বাতিওয়ালা, যারা পথে পথে বাতি জ্বালিয়ে বেড়ায় তাদেরই বাড়ি থাকে অন্ধকারে। আলোর উৎসবের আগে ঠিক এই অবস্থা কুমোরপাড়াতে। দীপাবলি কে যে আলোকিত করে তারাই আজ মহা সংকটের মুখে। শালবনীর ভাতমোড় কিম্বা চন্দ্রকোনা রোডের ডুমুরগেড়িয়ার কুমোর পাড়াতে কান পাতলেই শোনা যাবে পূর্বপুরুষ ধরে মাটির কাজ করে আসা কুমোর দের দীর্ঘশ্বাস।

potters | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

এমনিতেই চায়না আলো আর প্লাস্টিকের একছত্র অধিপত্যে মাটির প্রদীপ কিম্বা সরা, হাঁড়ি, মালসা ইত্যাদি বাজার থেকে উধাও, তার উপরে অতিমারির কারণে লকডাউন! এই দুয়ের জোড়া ফলায় আজ সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছে কুমোরেরা। শালবনীর ভাতমোড়ে ২০-২৫ টি কুমোর বাড়ি থাকলেও এখন প্রায় সবাই এই মাটির কাজ করা ছেড়ে দিয়েছেন।

আরও পড়ুনঃ চাকরির অনিশ্চয়তায় বেলেঘাটা আইডি’র ‘উৎকর্ষ কেন্দ্র’-এ কাজে যোগ দিতে নারাজ চিকিৎসকরা

potter | newsfront.co
রোদে শুকাতে দেওয়া হচ্ছে মাটির তৈরি জিনিস। নিজস্ব চিত্র

মাত্র সাতটি পরিবার এখনও পূর্ব পুরুষদের দেওয়া শিক্ষা ধরে রেখে এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। শালবনীর ভাতমোড়ের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব সনাতন দাস, বেনু দাস, ভগী পাল, হেলু দাস রা এখনও চাকা ঘুরিয়ে হাতের সাহায্যে নানান আকৃতির মাটির কলসি, সরা প্রদীপ তৈরি করেন। কিন্তু তাদের অবর্তমানে এই কাজ যে বন্ধ হয়ে যাবে তা বলাই বাহুল্য। কারণ পরিশ্রমের তুলনায় রোজগার খুবই কম। তাই বর্তমান প্রজন্মের ছেলেরা এই কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে কেউ বা চাষের কাজে কিম্বা অন্যান্য পেশায় নিযুক্ত হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুনঃ দিলীপ ঘোষ’কে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী করার আবেদন সৌমিত্র খাঁয়ের

lamp maker | newsfront.co
প্রদীপ তৈরিতে বাড়ির মেয়েরা। নিজস্ব চিত্র

সনাতন দাস জানান, “সুদুর লালগড়ের বামাল এলাকা থেকে ট্রাক্টারে করে মাটি আনতে খরচ পড়ে ট্রাক্টার পিছু দু হাজার টাকা। এরপর সেই মাটি প্রস্তুত করে তৈরি করা হয় মাটির জিনিস। তারপর সেগুলিকে রোদে শুকিয়ে আগুনে পোড়াতে হয়৷ আগুনে পোড়ানোর জন্য জ্বালানি সংগ্রহ করতে জঙ্গলে ছুটতে হয়। তারপর সেগুলি বাজারজাত করা হয়। এরপর এখন বাজারে প্লাস্টিকের নানান জিনিস ছেয়ে ফেলেছে। ফলে মাটির কলসি বা সরার চাহিদা সেরকম আর নেই।

আরও পড়ুনঃ মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির কালীপুজোয় তিন দশকেরও বেশি সময় মূর্তি গড়ছে এই পরিবার

চাহিদা বলতে যেটুকু তা হলো এই পুজোর সময়।” সনাতন দাসের স্ত্রী মৃদুলা দাস জানান,”এবার দীপাবলির জন্য এক হাজার প্রদীপ বানিয়েছি, মাত্র দেড় টাকা দামে এখনও পর্যন্ত সে রকম বিক্রিবাটা নেই৷” তিনি আক্ষেপ করে আরও জানান, এই কাজে রোজগার না থাকায় বর্তমান প্রজন্মের ছেলেরা এই কাজে আগ্রহ দেখাচ্ছে না, আমার এক ছেলে বাইরে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করত, লকডাউনের কারণে দীর্ঘ প্রায় আট নয় মাস ধরে বাড়িতে বসে আছে।

আর এদিকেই এই মাটির জিনিস গড়ে সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছি তাই বাধ্য হয়েই জনমজুরের কাজে যায়। শুনছি সরকারের পক্ষ থেকে নানানরকম ভাতা দেওয়া হচ্ছে কিন্তু আমরা সেই অন্ধকারেই রয়েছি। সরকারের পক্ষ থেকে কিছু আর্থিক সহায়তা করলে হয়ত বা পুর্বপুরুষের এই শিল্প কে আমরা বাচিঁয়ে রাখতে পারব।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here