নিজস্ব প্রতিবেদন, নিউজ ফ্রন্টঃ
পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফলে যে কয়েকটি বিষয় দেখা গেল তার মধ্যে অন্যতম প্রধান হল জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসের প্রায় অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়া। একই সঙ্গে দুটি আঞ্চলিক দলের জাতীয় রাজনীতিতে পদার্পণ। তার একটি অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমী পার্টি এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস।

এক্ষেত্রে আম আদমি পার্টি অনেকটাই বেশি সফল তৃণমূলের চাইতে, সেকথা অনস্বীকার্য, তারা বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে পাঞ্জাব দখল করেছে। অন্যদিকে তৃণমূল গোয়ায় আপ্রাণ চেষ্টা করেও তেমন কিছুই করতে পারেনি, তবে প্রায় ৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে। সর্বোপরি এই মুহূর্তে বিকল্প রাজনৈতিক দলের পরিবর্তে দেশের প্রয়োজন সাম্প্রদিয়কতার বিষ নামানোর ‘অ্যান্টিডোট’, সেই বিকল্প আপ না তৃণমূল?
সরকার পরিচালনায় আপ বনাম তৃণমূলঃ
এখন প্রশ্ন বিজেপি বিরোধী শক্তি হিসেবে কি তবে কেজরিওয়ালের ঝাড়ু বেশি বিশ্বাসযোগ্য? বা সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে কি তবে অরবিন্দ কেজরিওয়াল অনেকটা বেশি নম্বর পাচ্ছেন মমতার চেয়ে? দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরটা হবে হ্যাঁ। প্রথমত, কেজরিওয়ালের শিকড় প্রোথিত রয়েছে ‘ইন্ডিয়া এগেন্সট করাপশন’ আন্দোলনে, যা ইতিমধ্যেই জাতীয় রাজনীতিতে পরিচিত। দ্বিতীয়ত, সাধারণ নাগরিকের ‘বেসিক নিড’ বলতে যা বোঝায় আইআইটি-র প্রাক্তনী কেজরিওয়াল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সেগুলি দিয়েছেন দিল্লির বাসিন্দাদের। সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তন এনেছেন, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ‘মহল্লা ক্লিনিক’ দিল্লির মানুষের মন জয় করেছে এবং সর্বোপরি, বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে কেজরিওয়াল সরকার দিল্লির জনগণের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন। মমতা সে জায়গায় বেশ কিছুটা পিছিয়ে গিয়েছেন। কিছু সরকারি ভাতার ফলে একটা বড় অংশের মানুষ উপকৃত হলেও একাধিক বড়সড় দুর্নীতি বাণে বিদ্ধ মমতা সরকার। শিক্ষক নিয়োগে অস্বছতা , টাকা নিয়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়া, বন্যা ত্রাণ বিলিতে দুর্নীতি ইত্যাদি একাধিক দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছে দলীয় নেতা মন্ত্রীদের। এর জেরে শিক্ষিত সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশ মমতার বিকল্প খুঁজছে। এরপরে আছে দলের ওপর তলা থেকে শুরু করে নিচু তলায় গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব।
সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে আপ-এর অবস্থানঃ
ভারতে এই মুহূর্তে ধর্ম নিরপেক্ষতা প্রশ্নের মুখে। রাজনৈতিক বিকল্পের পাশাপাশি অনেক বেশি করে প্রয়োজন সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া শক্তির। তেমন কোন দৃষ্টান্ত এযাবৎ কেজরিওয়ালের দল বা তিনি নিজে তৈরি করে উঠতে পারেননি। সংখ্যা গরিষ্ঠের রাজনীতির দিকেই ঝুঁকতে দেখা গিয়েছে তাঁকে বা তার দলকে। সংখ্যালঘুর পাশে আপ-কে সাম্প্রতিক অতীতে কোথাও দেখা যায়নি। দিল্লির দাঙ্গায় কেজরিওয়াল সরকার ছিল একেবারে নিষ্ক্রিয়। বিজেপির উগ্র হিন্দুত্ব আপ-এর মধ্যে প্রকাশিত না হলেও হিন্দুত্বের পাশেই ছিল আপ। কাজেই ধর্ম নিয়ে রাজনীতির যে ‘খুলে আম’ খেলা সেই দোষে দোষী আপ-ও। অন্যায়ের বিরোধিতা না করলে তা পরোক্ষে অন্যায়কে সমর্থন করাই হয়। ঠিক এই ইস্যুতে ‘ইন্ডিয়া এগেন্সট করাপশন’ এর পরিচিত দুই মুখ প্রশান্ত ভূশণ ও যোগেন্দ্র যাদব সরে গিয়েছেন কেজরিওয়ালের পাশ থেকে কারণ তাঁরা দুর্নীতিমুক্ত ভারতের পাশাপাশি বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ঘোরতর বিরোধী।
লাভ তাহলে কারঃ
সামনে রয়েছে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন। উত্তর প্রদেশ সহ চার রাজ্য জিতলেও বিজেপির আসন কমেছে যথেষ্টই তার চেয়েও বড় কথা কমেছে ভোট সংখ্যা। লোকসভা নির্বাচন জিততে অন্যান্য সব তাস খেলার পাশাপাশি বিজেপিকে যা করতে হবে তা হল বিরোধী ভোট ভাগ। আঞ্চলিক দলগুলি যত বেশি ভোট ভাগাভাগি করবে ততই লাভের খাতা ভরবে বিজেপির।
আরও পড়ুনঃ হিজাব মামলার জরুরি ভিত্তিতে শুনানির আবেদন খারিজ শীর্ষ আদালতে
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584