শুভশ্রী মৈত্র, ওয়েব ডেস্কঃ
গত শুক্রবার থেকে তৎকালীন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্যের দড়ি টানাটানিতে আপাত জয় হল রাজ্যেরই। জিতে গেলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।প্রশাসনিক মহলের বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে একটা ধাপ এড়িয়ে গিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি সরকার, তাই এবারের মত হার হজম করতেই হলো।
গোটা ঘটনাপ্রবাহের কাটাছেঁড়া করতে নেমে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় শীর্ষস্তরের আমলাদের বদলির ক্ষেত্রে সাধারণত যে আইনি পদ্ধতি মেনে চলা হয়, বাঙালি আইএএস আলাপন বাবুর ক্ষেত্রে তার একটি ধাপ এড়িয়ে যায় কেন্দ্র। এই ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোন পর্যায়ে কোনরকম আলোচনার পথেই হাঁটেনি কেন্দ্র। ফলে এ যাত্রা কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতে জিতে গেল রাজ্য।
এর আগেও রাজ্যের আইপিএস বা আইএএস আধিকারিকদের বদলি করা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য সঙ্ঘাত আগেও হয়েছে। কিন্তু আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিষয়টি ছিল অনেকটাই ভিন্ন।কারণ, আলাপন যে সে অফিসার নন, তিনি একটি রাজ্যের মুখ্যসচিব। আর উল্টোদিকে, জড়িয়ে গিয়েছে দেশের প্রধানমন্ত্রীর নাম।
আরও পড়ুনঃ টিকা নেওয়ার পরও তৈরি হয়নি অ্যান্টিবডি উল্টে কমল প্লেটলেট, সেরাম কর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের
গত শুক্রবার কলাইকুন্ডায় প্রধানমন্ত্রীর পর্যালোচনা বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী অনুপস্থিত থাকার পর থেকেই ঘটে পরিবর্তন। প্রধানমন্ত্রীকে রাজ্যে ইয়াসের ক্ষয়ক্ষতির খতিয়ান দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই মুখ্যসচিবও বেরিয়ে যান দিঘায় প্রশাসনিক বৈঠকের জন্য । কার্যত সেই বৈঠকে আলাপনের অনুপস্থিতি নিয়েই সব টানাপোড়েনের শুরু। গত শুক্রবার সরাসরি আলাপনকে বদলির চিঠি পাঠায় কেন্দ্রীয় সরকার। সোমবার সকাল ১০টায় নয়াদিল্লিতে কর্মিবর্গ দফতরে পৌঁছনোর নির্দেশ ছিল ওই নির্দেশে।
এক্ষেত্রে, আইন বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন, কেন্দ্রীয় সরকার আইনি পদ্ধতির একটি ধাপ এড়িয়ে গিয়েছে। আইএএস ক্যাডার বিধি অনুযায়ী, কোনও আমলার বদলি নিয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে ‘মতানৈক্য’ তৈরি হলে শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের ইচ্ছাই বলবৎ হবে।
আরও পড়ুনঃ অনাথ শিশুদের দায়িত্ব নেওয়ার কথা আসলে মোদির ‘মাস্টারস্ট্রোক’, কটাক্ষ পিকের
অর্থাৎ, মতানৈক্যের প্রশ্ন উঠছে মানেই কেন্দ্রকে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে এটাও ঠিক! রাজ্য আপত্তি করলে তবেই ‘মতানৈক্য’ তৈরি হওয়ার প্রশ্ন আসে। কিন্তু আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে কেন্দ্র এবং রাজ্যের সেই ‘মতানৈক্য’ তৈরি হওয়ারও অবকাশ দেয়নি কেন্দ্র। কারণ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সরাসরি চিঠি পাঠিয়েছিল আলাপনকেই। রাজ্যের মাধ্যমে নয়। রাজ্যের সঙ্গে আলোচনাও করা হয়নি।
রাজ্যের প্রাক্তন অতিরিক্ত মুখ্য সচিব প্রসাদ রঞ্জন রায় সহ আরও বেশ কয়েকজন প্রাক্তন আমলা এই বিষয়ে স্পষ্টভাবে বিধিটি জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, রাজ্য আর কেন্দ্রের সঙ্গে আইএএস অফিসারদের সম্পর্ক বেঁধে দেওয়া আছে বেশ কয়েকটি বিধিতে। আইএএস অফিসাররা রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারে এমনকি, ভিন্ন রাজ্য সরকারেও কাজ করতে পারেন।
কোনও কেন্দ্রীয় পদ খালি হলে বা খালি হওয়ার আগে কেন্দ্র রাজ্য সরকারকে জানিয়ে দেয় এবং রাজ্য প্রয়োজনীয় সিনিয়রিটির অফিসারদের সম্মতি জেনে রাজ্য সরকারের মত সমেত তা কেন্দ্রকে জানায়। এরপর সব কিছু বিবেচনা করে আদেশনামা বেরোয় এবং সেই অফিসারকে দিল্লিতে যোগ দিতে বলা হয়। এক্ষেত্রে তার কোনটিই হয়নি।
আরও পড়ুনঃ ১০০ টাকার ওয়াটারপ্রুফ নোট আনতে চলেছে আরবিআই
এমনকি, কোন পদে যোগ দিতে হবে, সে রকম আদেশনামাও বেরোয়নি। কেবল বলা হয়েছে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় যেন ৩১ মে সকাল ১০টার মধ্যে দিল্লির প্রশাসন মন্ত্রকে যোগ দেন। কিন্তু বদলির কোন আদেশনামা এক্ষেত্রে বেরোয়নি, যেখানে কোনও পদের উল্লেখই নেই, সেখানে এই বিধি প্রযোজ্যই হয় না।
প্রশাসনিক মহলের একটা বড় অংশের বক্তব্য, কেন্দ্রের ওই ‘তাড়াহুড়ো’র ফলেই প্রথম রাউন্ডেই পিছিয়ে যেতে হলো তাদের। এরপর কেন্দ্রীয় সরকার আলাপনকে শো-কজ করবে কিনা বা আদালতে অথবা ‘ক্যাট’-এ যাবে কিনা, সেসব ভবিষ্যতের গর্ভে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584