দক্ষিন ২৪ পরগনা,সিমা পুরকাইতঃ

গঙ্গা সাগর পূণ্যের প্রত্যাশা নিয়ে ফি বছর আসেন কত জন।সেই পূন্য স্নানে এসে ছাব্বিশ বছর আগে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের চন্দ্রপুর জেলার কোঠারি গ্রামের রাজারাম পচুজি বঙ্গিরওয়ার।এখন বয়স তেষট্টি।আবার সেই গঙ্গা সাগর মেলায় মিলিয়ে দিলো পরিবারের সাথে রাজারামকে।

ঘটনার প্রকাশ এই যে,২০১৮র অক্টোবর নাগাদ হারুউড পয়েন্ট কোস্টাল থানার লট নম্বর আট থেকে এক রোগজীর্ণ স্মৃতিভ্রংশ বৃদ্ধকে উদ্ধার করা হয়।এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে সেই বৃদ্ধকে কাকদ্বীপ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আরও পড়ুনঃ সাতদিন পর নিখোঁজ যুবকের দেহ উদ্ধার,খুনের অভিযোগ

সেখানে দীর্ঘ চার মাসে চিকিৎসায় স্মৃতি ফিরে পান সেই বৃদ্ধ।এরপর উদ্ধারকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বৃদ্ধের উল্লেখিত ঠিকনায় যোগাযোগ করলে তাঁর পরিবারের সদস্যরা সনাক্ত করেন।বৃদ্ধের শারীরিক নির্দেশন স্বরূপ মেলানো হয় পায়ে দাগ এবং কপালে জরুল।

বাবাকে ফিরে পেয়ে খুশিতে আনন্দাশ্রু আটকাতে পারেন নি তিন ছেলে।খুশিতে মাতলেন উদ্ধারকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যরাও।পিতা সন্তানের এই মিলন মূহুর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে কাকদ্বীপ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন,সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা।

পরিবারের সাথে হারিয়ে যাওয়া বৃদ্ধকে মিলিয়ে দিতে উদ্যোগী তিনি।একই সাথে কাকদ্বীপ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সুপার ডঃ রাজশ্রী দাস,অ্যাসিসটেন্ট সুপার সহ হাসপাতালের একাধিক কর্মীরা এই মিলন ক্ষনের সাক্ষী হয়ে রইলেন।

রাজারাম পচুজি ১৯৫৫ সালের ২ মার্চ জন্ম গ্রহন করেন।তিনি পেশাগত ভাবে ছিলেন বন দফতরের সরকারী কর্মী,বারো বছর তিনি পেশাগত দায়িত্ব সামলেছেন।তিন সন্তান স্ত্রী নিয়ে ছিল তাঁর সংসার।নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসেন গঙ্গাসাগরে স্নানের উদ্দেশ্যে,এখানে এসে স্মৃতি ভ্রংশ (আলঝাইমার্স) রোগে আক্রান্ত হন।বয়স তখন সাঁয়ত্রিশ।

১৯৯৮ সালে হারিয়ে যাওয়া সরকারি কর্মচারি রাজারাম পচুজি বঙ্গিরওয়ারকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ শুরু করেন তার পরিবার।হদিশ না পেয়ে কোঠারি থানায় লিখিত নিখোঁজ অভিযোগ করেন স্ত্রী শকুন্তলা রাজারাম বঙ্গিরওয়াজ। সময়টা ২০০২ সাল।তখন বলা হয় গঙ্গাসাগরে গিয়ে মৃত হয়েছে রাজারাম পচুজি।

এরপর মৃত বলে সরকারের খাতায় নাম ওঠে।সরকারি পেনশান পেতে থাকেন শকুন্তলা। অবশেষে হারিয়ে যাওয়া রাজারাম পচুজি ফিরে পেল সংসার।বড় ছেলে সুনীল মেজ মুকেশ ও ছোট ছেলে সাবনীলকে হাসপাতালে দেখে কম্পপান হাত বাড়ি দিলেন রাজারাম পচুজি।মহারাষ্ট্র পুলিশের পক্ষ থেকেও উপস্থিত ছিলেন এক প্রতিনিধি।এতো বছর নিখোঁজ থাকার পর ফিরে পাওয়ার ঘটনা বিরল।এই বিরল দৃষ্টান্তের সাক্ষী হতে পেরে খুশি হাসপাতাল থেকে প্রশাসন সকলেই।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584