ওয়েব ডেস্ক, দিল্লিঃ
লোকসভায় আগেই পাশ হয়ে গিয়েছিল। এবার রাজ্যসভাতেও পাশ হয়ে গেল বিতর্কিত দুটি কৃষি বিল। সংখ্যাতত্ত্বের নিরিখে রাজ্যসভায় বিল পাশ আটকে দিতে চেয়েছিল বিরোধীরা। সেই অনুযায়ী রবিবার রাজ্যসভায় কৃষিবিল পেশ হতেই বিরোধীরা একজোট হয়ে শুরু করেন বিরোধিতা।
অথচ শত বিরোধিতা সত্ত্বেও রাজ্যসভায় ধ্বনিভোটে পাশ হয়ে গেল কৃষিবিল। সংখ্যাধিক্যের বলে রাজ্যসভায় বিতর্কিত দুটি কৃষি বিল পাশ করিয়ে নিল বিজেপি। রবিবার রাজ্যসভায় বিতর্কিত কৃষিবিলগুলি পেশ করেন কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র তোমর। এবার ওই বিল আইন হতে আর কোনও বাধা রইল না। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর হলেই আইন হয়ে যাবে এই বিল।
যদিও রবিবার বিল দুটি রাজ্যসভায় পেশ হওয়া মাত্রই তুমুল বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিরোধীরা। এদিন বিল পেশ হওয়ার কিছু সময়ের মধ্যেই রাজ্যসভায় কংগ্রেস সাংসদ প্রতাপ সিং বাজোয়া স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, ‘চাষিদের জন্য মৃত্যু পরোয়ানায় সই করবে না কংগ্রেস।’
আরও পড়ুনঃ কর্মী ছাঁটাইয়ে লাগবে না সরকারের অনুমোদন
আর এরপরই বিক্ষোভের রাশ নিয়ে নেয় তৃণমূল কংগ্রেস। ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল সাংসদরা। ছিঁড়ে ফেলেন বিলের প্রতিলিপি। সংসদের রুল বুক। এই বিষয়টি অত্যন্ত লজ্জার বলে অভিহিত করেছে শাসক শিবির।
বিরোধী বিক্ষোভে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত বন্ধ ছিল রাজ্যসভার কাজ। এরপর দেড়টায় ফের অধিবেশন শুরু হতেই বিরোধীরা পুরনো অবস্থানই নিতে থাকেন। ভোটাভুটি করতে বিরোধীদের শান্ত হতে বলেন প্যানেল চেয়ারপার্সন। কিন্তু বিরোধীরা বিক্ষোভ দেখাতেই থাকেন। এরমধ্যেই ধ্বনি ভোটে পাশ হয়ে যায় বিল।
আরও পড়ুনঃ সাংবাদিক রাজীব শর্মার গ্রেফতার উঁচুতলার নির্দেশে! সরব প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়া
কৃষিক্ষেত্রে ফসল বিক্রি এবং কৃষিপণ্যের বাজারে সরকারি নিয়ন্ত্রণ কমাতে অনেক আগেই তিনটি অর্ডিন্যান্স জারি করেছিল কেন্দ্র। যে অর্ডিন্যান্সে বেসরকারি সংস্থার জন্য সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ফসল কেনার রাস্তা খুলে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বেসরকারি সংস্থা চাইলে সরকারের অনুমতি ছাড়াই নিজেদের মতো দামে কৃষকদের কাছ থেকে ফসল কিনতে পারবে।
তবে, এই বিলের পরও বর্তমানে সরকার যেভাবে ন্যূনতম সমর্থন মূল্য দিয়ে ফসল কেনে, সেই পদ্ধতিতে কোনও বদল আসবে না। গত বৃহস্পতিবার ধ্বনি ভোটে ফারমার্স অ্যান্ড প্রডিউস ট্রেড অ্যান্ড কমার্স (প্রমোশন অ্যান্ড ফ্যাসিলিয়েশন) বিল এবং ফারমার্স (এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড প্রোটেকশন) এগ্রিমেন্ট অন প্রাইস অ্যাসিওরেন্স অ্যান্ড ফার্ম সার্ভিসেস বিল দু’টি সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় পাশ হয়ে যায়।
আরও পড়ুনঃ পুরোপুরি বেসরকারি হাতে ভারত পেট্রোলিয়াম, গ্যাসের ভর্তুকি নিয়ে উঠছে প্রশ্ন
যদিও কৃষকদের ধারণা, এই বিল পাশ হওয়ার ফলে বাজার থেকে সরকারি নিয়ন্ত্রণ সরে যাবে। সরকার ধীরে ধীরে ন্যূনতম সমর্থন মূল্যে ফসল কেনা বন্ধ করে দেবে। ফলে কৃষকদের পুঁজিপতিদের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে। ইতিমধ্যেই পাঞ্জাব ও হরিয়ানার কৃষকরা এই বিলের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন।
আগামী ২৪-২৭ সেপ্টেম্বর পাঞ্জাবে রেল রোকো কর্মসূচি নিয়েছে কৃষকদের একটি সংগঠন। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর ডাকা হয়েছে ভারত বনধ। এরই মধ্যে রবিবার রাজ্যসভায় বিলগুলি পেশ করেন কৃষিমন্ত্রী। অনেকদিন বাদে প্রায় সম্মিলিতভাবে বিরোধী শিবির এই বিলের বিরোধিতা করে।
কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। নির্ধারিত সময়ের পরও অধিবেশন চালু রেখে এই বিলগুলির উপর ভোটাভুটির ব্যবস্থা করা হয়। ভোটাভুটির সময় বিরোধীরা সরকার বিরোধী স্লোগানও দেন। কিন্তু কোনোভাবেই কিছু আটকানো যায়নি। শেষপর্যন্ত দুটি বিলই পাশ হয়ে যায়। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এই বিল দুটিকে ‘কৃষি-বিরোধী কালো আইন’ বলে অভিহিত করেছেন।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584