ঐতিহ্যবাহী গনুয়ার কালী পুজো এবার আড়ম্বরহীন

0
185

নিজস্ব সংবাদদাতা,পশ্চিম মেদিনীপুরঃ

মাত্র কয়েক বছর হল তৈরি হয়েছে মন্দির, তার অগে খোলা আকাশের নিচেই প্রায় ১৫০ বছরের বেশি সময় ধরে পূজিতা হচ্ছেন নারায়নগড় ব্লকের গনুয়ার কালী মা। কথিত আছে এখানকার দেবী জাগ্রত, সমস্ত ভক্তদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেন। আর এই কারণে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয় এই গনুয়ার কালী মায়ের পুজোকে কেন্দ্র করে।

brahmin | newsfront.co
মায়ের পুজো। ফাইল চিত্র

জেলার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী কালীপুজাে গুলির মধ্যে একটি অন্যতম পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড় ব্লকের নারায়ণগড় থানার অন্তর্গত গনুয়ার কালীপুজো। যেখানে শুধুমাত্র কালীপুজোর একটি দিন প্রায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়। এই পুজোকে কেন্দ্র করে রয়েছে একটি পুজো কমিটি। পুজাে উপলক্ষে বসে মেলা। হয় লক্ষাধিক পুণ্যার্থীর ভিড়। আর এই ভিড় সামলাতে থাকে বিপুল পরিমাণে পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে সুরক্ষার ব্যবস্থা। বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয় সমস্ত মন্দির চত্বর। ভিড়ের মাঝে বহু মানুষ তাদের পরিজনদের হারিয়ে ফেলেন আর তাদের সন্ধান পেতে থাকে অনুসন্ধান অফিস। এছাড়াও থাকে খাবার জন্য পানীয় জলের ব্যবস্থাও। সব মিলিয়ে একদিনের এই কালী পুজোর আড়ম্বরতা জেলার বড় ঐতিহ্যবাহী পুজো গুলির মধ্যে একটি অন্যতম কালী পুজো।

kali temple | newsfront.co
গনুয়ার কালী মন্দির। ফাইল চিত্র

তবে এ বছর করোনা পরিস্থিতির জন্য সেই আড়ম্বরপূর্ণ পুজো আর হচ্ছে না। বসছে না মেলা। থাকছে না লক্ষাধিক মানুষের ভিড়ে ঠাসা পরিস্থিতি। পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য শক্তিপদ ঘোড়াই জানান, “করোনা ভাইরাসের জন্য এবছর পুজোর পরিস্থিতি একটু অন্যরকম, বিগত বছরগুলোর মতো এবছর আর সেই ভাবে পুজো হবে না। শুধুমাত্র কুলপি রক্ষার্থে পুজো হবে। মালিক এবং মন্দিরের সেবাইত তারা পুজো দেবেন। সেই সঙ্গে কমিটির পক্ষ থেকে একটি ডালা সহযোগে পুজো দেয়া হবে। আর কোন দর্শনার্থী বা পুণ্যার্থী এখানে আসতে পারবেন না।”

temple | newsfront.co
ফাইল চিত্র

পুজো কমিটির সভাপতি রণজিৎ সাহু জানান,”এখান কার কালী মায়ের একটি ঐতিহ্য রয়েছে। সেই ঐতিহ্য মেনে পুজো হবে। তবে এবছর কোন পুণ্যার্থী পুজো দিতে পারবেন না। কোন দর্শনার্থীর এখানে ভিড় করা চলবে না। তাই আমরা আগাম মাইকিং করে এলাকার আসে পাশে এমনকি স্থানীয় পত্রপত্রিকা ও সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে প্রচার শুরু করে দিয়েছি।”এই দেবী নাকি সবং থানার বেলকি-র সাউ পরিবারের অর্থাৎ সাউ বাড়ির জায়গাতেই মায়ের আবির্ভাব। কথিত আছে সাউ পরিবারের এক মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তা দুরারোগ্য কঠিন ব্যাধিতে পরিণত হয়। মেয়ের চিকিৎসার জন্য তৎকালীন প্রতিপত্তিশালী সাউ পরিবার মেয়ে কে কলকাতা থেকে শুরু করে রাজ্যের বহু জায়গায় নিয়ে গেছেন কিন্তু কোন লাভ হয়নি।

crowd | newsfront.co
ভক্ত সমাগম। ফাইল চিত্র

অবশেষে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় ট্রেনেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে মেয়েটি। কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে শোকে ভেঙ্গে পড়ে পরিবারের লোকেরা। তখনই সাউ পরিারের তৎকালীন কর্তাকে স্বপ্নাদেশ দেওয়া হয় যে কোথাও গিয়ে কোনও লাভ হবে না, মেয়েকে যদি সুস্থ করতে হয় তা হলে গনুয়া যাও। ওখানে তোমাদের জায়গায় মাটি চাপা হয়ে আছি আমি, সেখান থেকে আমাকে বের কর। আমার পুজো শুরু কর। এই স্বপ্নাদেশ পেয়ে তৎক্ষণাৎ সাউ পরিবারের লোকজনেরা গনুয়ার আজকে যে জায়গায় মন্দির স্থাপিত হয়েছে সেখানে যান। গভীর জঙ্গল কেটে শুরু হয় খনন কার্য। আর যা পাওয়া যায় তা হল দুটি কালো পাথর আর একটি ত্রিশূল। আর তাতেই ভক্তি ভরে মায়ের পুজো শুরু করেন সাউ পরিবারের লোকজনেরা।

আরও পড়ুনঃ প্রচলিত নিয়ম মেনেই হয়ে আসছে তপনের অসূর্যস্পর্শা কালী মায়ের পু্জো

সঙ্গে থাকে অসুস্থ মেয়েটিও। পুজো শুরু হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত মেয়েটি। এত ডাক্তার বৈদ্য যে মেয়েকে সুস্থ করতে পারেনি দুটো পাথরের পুজো করার পরেই সুস্থ হয়ে ওঠে মেয়েটি। এই খবর যখন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে তখনই মানুষ নিজেদের অসুবিধার কথা জানিয়ে মায়ের কাছে মানত করতে থাকেন। কথিত আছে সকলেরই মনোস্কামনা পূর্ণ করেন গনুয়ার কালী মা। সেই থেকে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে মায়ের কাছে পুজো দেওয়ার ভিড়। আজ সেই পুজো লক্ষাধিক মানুষের ভিড়ে পরিণত হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ ফুলবাড়ির মার্ডার মোড় থেকে ১১ কেজি গাঁজা সহ গ্রেফতার দুই

বহু দিন ধরে পারিবারিক পুজো থাকলেও মানুষের অতিরিক্ত ঢলের কারণে এই পুজোকে সার্বজনীন রূপ দিতে হয়। বিগত দশ বছর ধরে সার্বজনীন পুজো হিসেবে পূজিতা হচ্ছেন গনুয়ার কালী মা। পুজো সার্বজনীন রূপ পাওয়ার পর গ্রামের মানুষ পুজো কমিটি, প্রশাসনের কাছে খোলা আকাশের নিচে মায়ের পুজো যাতে করতে না হয় তার জন্য মন্দির তৈরি করার আবেদন জানান। অবশেষে প্রশাসন এবং গ্রামবাসীদের উদ্যোগে মায়ের মন্দির নির্মিত হয়।

বিগত ক-এক বছর ধরে সেই মন্দিরেই পূজিত হচ্ছেন গনুয়ার জাগ্রত কালীমা। তবে এবছর করোনা পরিস্থিতির জন্য পুজো কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুধুমাত্র কালীপুজোর ২ দিন নিত্যপুজো বন্ধ থাকছে। তবে ঐতিহ্য মেনে চতুর্দশীর পুজো হবে। আর সেই পুজোতে শুধুমাত্র সাউ পরিবার অর্থাৎ মালিকপক্ষ এবং মন্দিরের সেবাইত ও কমিটির পক্ষ থেকে পুজো দেওয়া হবে।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here