পাঠকের মতামত
বিগত চার বছরের আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের প্রতিবেদন -ফারুক আহমেদ
২০১৩ সালে ১ অক্টোবর অধ্যাপক আবু তালেব খান বিশ্ববিদ্যালয়ের
উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিনি এর আগে গোয়াহাটির ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট
অফ টেকনোলজির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য
ছিলেন সৈয়দ শামসুল আলম। তাঁর কার্যকালের মেয়াদ ১৭ জুন ২০০৮ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৩ সাল পর্যন্ত।
বর্তমান উপাচার্য যোগদান করার আগে যে সমস্ত সমস্যা ছিল।
(১) ২০০৮–২০১৪ সালে বিধাননগরে ভাড়া নিয়ে পঠনপঠন চালানোর জন্য খরচ প্রায় ৬ কোটি টাকা। বাড়ি মালিকদের সঙ্গে ২০১৬ সাল পর্যন্ত
থাকার চুক্তি করেছিলেন। ধরে নেওয়া হয়েছিল ২০১৭ সালের আগে নিউটাউনের
ক্যাম্পাস তৈরি হবে না।
(২) ২১ হাজী মহম্মদ মহসিন ২০১০ সালে একটি ভবন তৈরি হলেও তা কাজে লাগানো যায়নি।
(৩) কলকাতা মাদ্রাসার হেরিটেজ ভবনের প্রথম তল ছিল এ পি স্কুলের অধিনে এবং দ্বিতীয় তলটি ছিল আলিয়া
বিশ্ববিদ্যালয়ের। আরবির এবং ইসলামিক ধর্মতত্ত্ব পড়ানোর জন্য যথেষ্ট
জায়গা ছিল না।
(৪) ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ৫ টি বিভাগে পড়ানোর জন্য এআইসিটিই–র অনুমতি ছিল
না। তাই প্রথম দিকে প্রশিক্ষণ এবং প্লেসমেন্ট দিতে সমস্যা ছিল।
(৫) চুক্তির ভিত্তিতে টেকনো ইন্ডিয়ার ক্যাম্পাসে এমবিএ, এমসিএ,
সাংবাদিকতার পঠনপাঠনে জন্য ২০০৯–২০১৯ পর্যন্ত চুক্তি করা হয়েছিল। ২০০৯
থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তাদের দিতে হয়েছিল ৭ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা।
(৬) নয়াপট্টি, মহেশ বাথান, চিংড়িঘাটার নানা জায়গায় ভাড়া নিয়ে হোস্টেল চালানো হত।
(৭) হোস্টেল ভাড়া ছিল ১ হাজার টাকা প্রতি মাসে। অনেক পড়ুয়া তা দিতে
সক্ষম ছিল না।
(৮) ইঞ্জিনিয়িরিং পড়ুয়াদের জন্য কর্মশালার আয়োজন করা হত পার্ক সার্কাস
ক্যাম্পাসে।
(৯) ভাড়া করা হয়েছিল দুটি বাস। দুই ক্যাম্পাসে সহজে যাতায়াতের জন্য।
২০১৪ সালে সে জন্য খরচ হয়েছিল ২১ লক্ষ ৭৯ হাজার ২২৪ টাকা।
(১০) এমবিএ, এমসিএ পড়ার ফি বেশি হওয়ায় অনেক পড়ুয়া নিয়মিত সেই খরচ
দিতে পারতেন না।
(১১) বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ছিল না, ইন্টারনেট পরিষেবা ছিল নিম্নমানের।
(১২) ২০১২ সাল থেকে ডবলুবিসিএস কোচিং শুরু হয়েছিল সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও
বিত্ত নিগমের ‘অ্যাম্বার’ ভবনে, ভাড়ার ভিত্তিতে।
(১৩) অনুমোদিত শিক্ষক পদ ছাড়া স্নাতকোত্তরস্তরে ইতিহাস এবং আইন পড়ানো শুরু হয়।
অক্টোবর ২০১৩ থেকে আগস্ট ২০১৭ সাল পর্যন্ত সাফল্যের কথা
(১) ২০১৪ সালে ১১ নভেম্বর জাতীয় শিক্ষা দিবসে নিউটাউনের প্রশাসনিক এবং
পঠনপাঠন ভবন চালু হয়। উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। ছিলেন সংখ্যালঘু
উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রীও।
(২) চুক্তি শেষে ডিএন–১৮, ডিএন–২০ এবং ইএন–৩৪ ভবনগুলি ছেড়ে পার্ক
সার্কাসে এবং নিউটাউনে জানুযারি, ২০১৫ থেকে পঠনপাঠন শুরু
হয়।
(৩) নিউটাউনের ক্যাম্পাসে ছাত্র এবং ছাত্রীদের জন্য হোস্টেলের প্রথম
পর্যায়ের কাজে শেষ হয়ে যায়।।
(৪) ১ হাজার জন ছাত্র-ছাত্রীর জন্য কম্পিউটার ল্যাবরেটরি তৈরি করা হয়েছে।
(৫) নিউটাউন এবং পার্ক সার্কাস ১৬৫ এবং ৬০ জনের জন্য ডিজিটাল ল্যাবরেটরি
তৈরি করা হয়েছে।
(৬) ১৭ গোরাচাঁদ রোডে পার্ক সার্কাসের ক্যাম্পাস তৈরি এং উদ্বোধন।
(৭) ১৭ গোরাচাঁদ রোডে ২১৬ আসনের ছাত্রীদের হোস্টেল তৈরি।
(৮) ২১ হাজী মহম্মদ মহসিন রোডের ঐতিহ্যশালী ভবন সংস্কার।
(৯) পাঠাগার সরিয়ে সেখানে নতুন চারতলরা ভবন তৈরি।
(১০) পার্স সার্কাস খেলার মাঠকে নতুন করে গড়ে তোলার প্রস্তাব।
(১১) উর্দু, জীববিজ্ঞান এবং নার্সিংয়ের পঠনপাঠন শুরু করা।
(১২) ইসলামিক ধর্মতত্ত্বে বিএ পড়ানোর জন্য ৮ টি স্টাডি সেন্টারের
অনুমতি পাওয়া। ফাজিল পাস করার পর ছাত্রীদের লেখাপড়া ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা
কমাতে।
(১৩) পি এইচডি এবং এম টেক পড়ুয়াদের জন্য বৃত্তি প্রদান।
(১৪) ছাত্রীদের জন্য ভর্তির আবেদন পত্র অর্ধেক করা ছাত্রদের থেকে।
(১৫) ইতিহাস, উর্দু এবং আইনের জন্য ২৯ টি শিক্ষক পদে অনুমোদন।
(১৬) ২৮ আধিকারিক, ৫৭ টি অশিক্ষকর্মী পদের অনুমোদন।
(১৭) ৫৭ জন শিক্ষক নিয়োগ, সেইসঙ্গে তাদের প্রোমোশনের ব্যবস্থা
(১৮) রেজিস্ট্রার, প্রশিক্ষণ এবং প্লেসমেন্ট অফিসার, ৩ জন
অ্যাসিস্ট্যান্ট লাইব্রেরিয়ান নিয়োগ।
(১৯) ১০ টি বিভাগের জন্য ১৭ জন গ্রেড–১ টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট পদ পূরণ।
(২০) ১২ জন অশিক্ষকর্মী পদে পূরণ।
(২১) নিউটাউন, পার্স সার্কাস ক্যাম্পাসে ল্যান, ইন্টারনেট এবং ফ্যাক্স
পরিষেবা চালু করা।
(২২) বিশ্ববিদ্যালয়ের ওযেবসাইট তৈরি করা।
(২৩) নিউটাউনে ৫৫০ জন বসতে পারবে এমন সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় কেন্দ্রীয় পাঠাগার চালু।
(২৪) পরীক্ষার ফল সঠিক সময়ে প্রকাশ করার জন্য ইআরপি চালু করা।
(২৫) প্রশিক্ষণ এবং প্লেসমেন্ট সেলকে ঢেলে সাজানো।
(২৬) পাঠাগারের জন্য বইপত্র, ল্যাবরেটরির জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা।
(২৭) ৫৪ হাজার ৯০০ পড়ুয়ার দক্ষতা বাড়াতে ১০০ কোটি টাকা দিয়ে
প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। ওই অর্থ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক
মন্ত্রক। ইতিমধ্যে ৩৬ হাজার ৮০০ জনকে প্রশিক্ষম দেওয়া হয়েছে।
(২৮) ৪০ এবং ৫০ সিটের দুটি বাস কেনা হয়।
(২৯) এ পি স্কুল থেকে এ পি বিল্ডিং সরিয়ে নিয়ে যাওয়া। ইসলামিক
ধর্মতত্ত্ব পঠনপাঠন স্থানান্তরিত হয়।
(৩০) ডবলুবিসিএস কোচিং সেন্টারে থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ১৮ জন ডবলুবিসিএস
হয়েছেন। ২০১৫ সাল পর্যন্ত গ্রুপ এ–তে ৫, গ্রুপ বি–তে ২, গ্রুপ সি–তে ১১।
গ্রুপ সি–তে ২৫ জন ইন্টারভিউ দিয়েছেন। এখান থেকে প্রশিক্ষণ
নিয়ে অনেকে সরকারি চাকরিও পেয়েছেন।
(৩১) শিক্ষকদের জন্য কেরিয়ার অ্যাডভান্সমেন্ট স্কিম চালু।
(৩২) কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুবিধে পেয়েছেন ৩৭৮ জন।
(৩৩) স্বনির্ভর গোষ্ঠীর জন্য ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট এবং হসপিটিলিটি
ম্যানেজমেন্টের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা।
(৩৪) নিউটাউনের দোকানিদের জন্য রিটেল ম্যানেজমেন্টের প্রশিক্ষণ।
(৩৫) কর্মীদের জন্য প্রভিডেন্ট ফান্ড খোলা।
(৩৬) ডিপার্টমেন্ট অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ
(ডিএসআইআর)–এ নাম নথিভুক্তি করিয়ে ল্যাবরেটরির জন্য যন্ত্রপাতি আনায়
ছাড়ের ব্যবস্থা করা।
বিধিসম্মত প্রাপ্য অনুমতি
(১) ২০১৬ সালে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মাবলি অনুমোদন করে বই হিসেবে প্রকাশ করেন।
(২) আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কোর্ট এবং এক্জিকিউটিভ কাউন্সিল তৈরি করে রাজ্য সরকার।
(৩) বি টেক এবং এম টেকের ৫টি বিষয়ের জন্য এআইসিটিই–র অনুমোদন।
(৪) আইএনসি এবং ডবলুবিএনসি–র অনুমোদনে ৪ বছরের নার্সিংয়ের পঠনপাঠন। আসন
সংখ্যা ৬০। ২০১৭–১৮ সালে ডবলুবিএনসি বি এসসি নার্সিংয়ের জন্য অনুমতি
দিয়েছে।
(৫) ১০০ আসনের বি এড–এর জন্য এনসিটিই–র অনুমোদনের পুর্ননবীকরণ।
(৬) ৫০ জন ছাত্রীর জন্য বি এড পড়ানোর অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। খুব
শিগগিরি পরিদর্শক আসবেন।
(৭) শিক্ষকদের জন্য সিএএস চালু।
(৮) কর্মীদের জন্য মৃত্যু এবং অবসরকালীন সুযোগসুবিধে চালু।
(৯) কর্মীদের পিএফ অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া।
অবিলম্বে যে বিষয়ে নজর দেওয়া দরকার
(১) ইউজিসি–র ১২বি–র অনুমোদন।
(২) প্রথম সমাবর্তন।
(৩) ছাত্রীদের জন্য ৫০ আসনের বি এড চালু।
(৪) বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদের জন্য আবাসন।
(৫) আধিকারিক এবং কর্মীদের জন্য কেরিয়ার অ্যাডভান্সমেন্ট স্কিম চালু।
(৬) কর্মীদের জন্য স্বাস্থ্য প্রকল্পের বাস্তবায়ন করা।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
(১) নিউটাউনে অতিরিক্ত ২০ একর জমির জন্য আবেদন করে মেডিক্যাল কলেজ এবং
হাসপাতাল গড়ে তোলার কাজ। ২০১৬–১৭ সালে বি এসসি নার্সিং চাল হয়েছে। তাদের
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইন্ডিয়ান
নার্সিং কাউন্সিলরে নিয়মে, কোনও মেডিক্যাল কলেজে নার্সিং নিয়ে পড়ানোর
ব্যবস্থা থাকতে হবে। এটি পুরোপুরি আবাসিক পাঠ্যক্রম। চার ছরের জন্য। সে কারণে তাদের থাকার ব্যবস্থা করতে হোস্টেল চাই। এ জন্য জমি দরকার।
(২) ২১ হাজী মহম্মদ মহসিন রোডে ছাত্রীদের জন্য হোস্টেল তৈরি করা।
(৩) পার্ক সার্কাস এবং হাজি মহম্মদ মহসিন স্কোয়ার চত্ত্বরে ছাত্রদের
জন্য হোস্টেল তৈরি করা।
(৪) বিভিন্ন প্রফেশনাল চাকরির উপযুক্ত আরও নতুন কোর্স যথা মানববিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞান, সোসাল ওয়ার্ক এবং লাইব্রেরি সায়েন্সে নতুন আরও কোর্স চালু করা।
(৫) শিক্ষক ও অশিক্ষকর্মী পদ সৃষ্টি করা।
(৬) দক্ষতা বাড়াতে আরও বেশি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিতে হবে।
(৭) দূর শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
(৮) নিউটাউনের হোস্টেল বিল্ডিংয়ের পরের দফার কাজ শুরু করা।
(৯) আরও কয়েকটি সিনিয়র মাদ্রাসকে ধর্মতত্ত্ব বিভাগে বিএ চালু করার জন্য অনুমোদন দেওয়া কারণ পশ্চিমবঙ্গের কোনও কলেজে এই বিষয় পড়ানো হয় না।
(পাঠকের মতামত নিজস্ব-নিউজফ্রন্ট কতৃপক্ষের কোনও দায় নেই)
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584