শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
পরীক্ষায় সফল ভাবে পাশ করাই যে এ রাজ্যে চাকরি পাওয়ার একমাত্র যোগ্যতামান নয়, তা যে পদে পদে প্রমাণ করে দিচ্ছে রাজ্যে বিভিন্ন শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার পরবর্তী জটিলতা। সব পরীক্ষার পরেই নিয়োগের সুবিচারের আশায় তাকিয়ে থাকতে হয় আদালতের দিকেই। সেই আদালতের রায়েই ফের উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষকের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জটিলতা তৈরি হল।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের মধ্যে রাজ্যে প্রায় ১৪০০০ শিক্ষক নিয়োগ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল রাজ্য সরকার। ২০১৫ সালে উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা হয়। তারপরে কেটে গিয়েছে ৫ বছর। কিন্তু আজও পাশ করা পরীক্ষার্থীরা নিয়োগের মুখ দেখতে পাননি। উলটে নতুন করে নিয়োগের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।
পরীক্ষার্থী ভানু রায়ের মামলায় বিচারপতি বিবেক চৌধুরী নির্দেশে জানিয়েছেন , মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ করা যাবে না। নিয়োগ করতে হলে হাইকোর্টের অনুমতি নিতে হবে স্কুল সার্ভিস কমিশনকে।
আরও পড়ুনঃ কড়া শাস্তি, লাইন্সেস বাতিলঃ রোগী ফেরানো বন্ধে দাওয়াই স্বাস্থ্য দফতরের
ভানু রায়ের আইনজীবী ফিরদৌস শামিম জানান, “উচ্চ প্রাথমিক মেধাতালিকায় প্রচুর অস্বচ্ছতা রয়েছে। মেধা তালিকায় স্বজনপোষণের যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।ইন্টারভিউ দেওয়া নম্বর নিয়েও অস্বচ্ছতা রয়েছে বিস্তর। এমনকি অনলাইন আবেদন পূরণের ক্ষেত্রেও দু’রকম পদ্ধতি সামনে এসেছে। তার মধ্যে একটি ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীর ছবি সহ আবেদনপত্র, অন্যটির ক্ষেত্রে ছবি ছাড়া।’ তিনি বলেন, ‘সেই অস্বচ্ছতার একাধিক প্রমাণ আমরা আদালতের সামনে পেশ করেছি। হাইকোর্ট তা বিবেচনা করে নিয়োগে স্থগিতাদেশ দিয়েছে।’
এর আগে প্রশিক্ষণহীনদের ইন্টারভিউতে ডাকা হয়েছে, এই অভিযোগ নিয়ে একাধিক মামলা হয় কলকাতা হাইকোর্টে । ২০১৯ সালে বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্যের নির্দেশে ইন্টারভিউতে ডাক পাওয়া প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করতে নির্দেশ দেওয়া হয় কমিশনকে। হাইকোর্টের নির্দেশে উচ্চ প্রাথমিক-এর ইন্টারভিউ দেওয়া ২৪,৫৬৪ নিয়োগপ্রার্থীর তালিকা সে বছর ১০ জুলাই বিকেলে প্রকাশ্যে আসে।
তালিকায় ছিল প্রার্থীর নাম, টেট-এ প্রাপ্ত নম্বর, অ্যাকাডেমিক স্কোর। এরপরেই তাতে একাধিক অসঙ্গতির অভিযোগ জমা পড়ে হাইকোর্টে। সেই মামলার শুনানি আজও চলছে । এ দিকে সোমবার ভার্চুয়াল শুনানির পর বিচারপতি বিবেক চৌধুরির এমন নিষেধাজ্ঞায় ভবিষ্যতে উচ্চ প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও দীর্ঘায়িত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই সব দেখে পাশ করা এক শিক্ষকের বক্তব্য, ‘যে রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগের এই হাল, সেখানে শিক্ষার কি হাল তা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়!’
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584