শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
করোনা আবহে পুরসভার রাজস্ব আদায় তলানিতে ঠেকলেও বেড়ে গিয়েছে বিভিন্ন খরচ। সংক্রমণ রুখতে ওয়ার্ড ধরে ধরে বিভিন্ন জায়গায় বাসিন্দাদের লালারস পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে পুরসভা। এমনকি ২ টি নিজস্ব করোনা পরীক্ষা কেন্দ্রের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। আর এই সব করতে গিয়ে টান পড়েছে পুরসভার কোষাগারে। অর্থের যোগানের আভাবে মাঝপথে থমকে গিয়েছে একাধিক প্রকল্পের কাজ। টাকা না পেয়ে কার্যত প্রকল্প গুলির কাজ বন্ধ রেখেছে ঠিকাদাররা। এমনকি কাজ হয়ে যাওয়ার পরও বেশ কিছু ঠিকেদার সময় মতো বকেয়া পাওনা পাচ্ছেন না, অভিযোগ উঠেছে এমনটাই।
সূত্রের খবর, এই অবস্থায় অতিরিক্ত অনুদানের আবেদন জানিয়ে নবান্নের দ্বারস্থ হয়েছে পুরসভার প্রশাসক বোর্ড। নবান্ন সূত্রে খবর, চলতি পরিস্থিতি বিবেচনা করে সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে রাজ্যের অর্থ দফতর পুরনিগমকে অতিরিক্ত আর্থিক অনুদান দেওয়ার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে। ফলে চলতি জুন এবং জুলাই মাসের বেতন-পেনশন এবং ঠিকাদার খাত নিয়ে যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, তা আপাতত মিটতে চলেছে।
প্রশ্ন উঠছে, তবে কি করোনা ও আমফানের জোড়া ধাক্কা দুরমুশ করে দিয়েছে কলকাতা পুরসভার ভাঁড়ারও। আর তাই মাঝ পথে থমকে গিয়েছে সব প্রকল্পের কাজ? লকডাউনের জেরে দীর্ঘ তিন থেকে চার মাস সম্পত্তি কর আদায়ের ক্ষেত্রে তীব্র ধাক্কা খেয়েছে কলকাতা পুরকর্তৃপক্ষ। কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি কর বকেয়া। তার ওপর আমফান ঘূর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া শহরকে নতুনভাবে সাজিয়ে তুলতেও মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করতে হয়েছে পুরকর্তৃপক্ষকে। এই অবস্থায় তাই চাপ পড়েছে পুর ভাঁড়ারে।
আরও পড়ুনঃ বেহাল রাস্তায় ভাঙছে বিয়ে
সম্প্রতি কলকাতা পুরসভার প্রশাসনিক বোর্ডের চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘২০১৯ – ২০ অর্থবর্ষে মার্চ মাস পর্যন্ত প্রায় ৪০০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার তা একটু বেশিই। কলকাতা পুরসভা ধীরে ধীরে সেই অর্থ মিটিয়ে দিয়েছি।’ তবে আমফান ও করোনার জোড়া চাপে পুরভাঁড়ারের স্বাস্থ্য খারাপ হয়েছে তা স্বীকার করে নেন তিনি। ফিরহাদ হাকিম আরও বলেন, রাজ্য সরকার যাবতীয় বকেয়া মিটিয়ে দিচ্ছে। সমস্ত ঠিকেদাররা বকেয়া পেয়ে যাবেন।
কলকাতা পুর নিগম সূত্রে খবর, কোভিড পরিস্থিতিতে রাজস্ব আদায় তলানিতে ঠেকবে বলে বোঝা গিয়েছিল। তাই এপ্রিল মাসেই বৈঠক করে ঠিক করা হয়, এই আর্থিক সঙ্কট থেকে অন্তত দু’-তিন মাস রেহাই পেতে রাজ্যের অর্থ দফতরের কাছে চিঠি পাঠানো হবে। সেই সিদ্ধান্তমাফিক কলকাতা পুরসভার অর্থ বিভাগের প্রধান চিঠি পাঠিয়ে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা অনুদান চান নবান্নের কাছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে সম্মতি দিয়েছে নবান্ন। তবে ৩০০ কোটি টাকা একেবারে না দিয়ে প্রাথমিক ভাবে ১১০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ প্রাপ্ত সর্বোচ্চ নম্বরের ভিত্তিতেই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ফল প্রকাশ করতে উদ্যোগ শিক্ষা দফতর
ঠিক কেমন অবস্থা পুরসভার? জানা গিয়েছে, যেখানে গত অর্থবর্ষ শুরুর প্রথম তিন মাসে আদায় হয়েছিল ২৩৫ কোটি টাকা, সেখানে চলতি বছরে একই সময়ে আদায় হয়েছে মাত্র ৫০ কোটি টাকা। অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরসভার বেতন ও পেনশন খাত মিলিয়ে মোট ব্যয় হয় ১৭০ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা। যার মধ্যে স্থায়ী কর্মীদের বেতনের জন্য ৮৮ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা, অস্থায়ীদের জন্য ৩৫ কোটি টাকা। পেনশন খাতে খরচ ৪৫ কোটি টাকা। তারপর রয়েছে ঠিকাদারদের পাওনা মেটানো। তবে নবান্নের সাহায্যে কিছুটা আপাতত মিটবে বলে আশা পুরসভার প্রশাসনিক আধিকারিকদের।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584