নিজস্ব সংবাদদাতা,দাঁতনঃ
বাংলা গান চলবেনা,হিন্দি গান গাইতে হবে। আবার যে সে হিন্দি গান হলেও চলবেনা,কোমর দুলিয়ে নাচ করা যাবে এমন গান গাইতে হবে,না হলে শিল্পীকে ট্রেনের কামরায় গান গাইয়ে ছাড়বে তারা !এমনই সব হুমকি খোদ পুলিশের। ‘কোত্থেকে আনা হয়েছে এই তিন টাকার শিল্পীকে ?’ ওকে নিচে নিয়ে আয় ,আমাদের সঙ্গে নাচতে হবে।এমনই দাবীর মুখে থানার অনুষ্ঠান পালাতে বাধ্য হলেন আতংকিত শিল্পী।আবার ইনি যেমন তেমন শিল্পী নন,সা রে গা মা খ্যাত শিল্পী মেখলা দাশগুপ্ত।
কালী পুজো উপলক্ষ্যে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাঁতন থানার উদ্যোগে শনিবার রাতে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।মেখলা জানিয়েছেন, “উদ্যোক্তাদের গাড়িতেই অনেক রাতেই পৌঁছেছিলাম, গিয়েই দেখি পরিস্থিতি বেশ গরম।শিল্পী অনীক ধরকে আনার নাম করে আনা হয়নি বলে ক্ষোভ পুলিশ কর্মীদের মধ্যে।আমি নিজে অনীকদার সঙ্গে কথা বলি.. । এরপর আমি মঞ্চে উঠি । প্রথমেই একটি বাংলা গান গাইলাম। তারপর আরেকটি বাংলা গান গাইতেই শুনলাম , বাংলা চলবেনা হিন্দি চাই।আমরা জানি দর্শকদের নানা রকম দাবী থাকে।তাই একটা হিন্দি গান গাইতে শুরু করলাম।দাবী উঠল এরকম নয়, নাচার গান চাই।কেউ একজন আমার কাছে এসে বললেন , ম্যডাম একটু বাঁ দিকে যান , ওদিকে রেস্পেক্টেড পুলিশ অফিসাররা রয়েছেন।ওদিকে যেতেই আওয়াজ আরও বাড়ল , নাচার গান গাইতে হবে।আমি কিশোর কুমারের সিং নয় তবু নাম তার সিংহ ধরলাম কিন্তু কুৎসিত চিৎকার ছুটে এল, এই তিন পয়সার গায়িকা তোকে দিয়ে ট্রেনে গান গাওয়াবো!আমি বললাম আপনারা মদ খেয়ে এসব কি করছেন ! এতে পুলিশের দল আরও ক্ষেপে গেল।কেউ একজন বলল , ওকে নিচে নামা , ওকে আমাদের সঙ্গে নাচাবো।আরও সব কুৎসিত অশ্রাব্য ভাষা।আমি বললাম , আমি বাইজি নই ।আমি একজন শিল্পী । তার উত্তরে ওরা আরও ক্ষেপে গেল। প্রায় ১ঘন্টা ১০মিনিট হয়ে গেছে তখন আমার মঞ্চে থাকা।এরপর নেমে পড়লাম পুলিশগুলো তখন যেন আমাকে তাড়া করছে।আমি থানার আইসিকে বললাম , আমাদের এখান থেকে বের করার ব্যবস্থা করুন প্লীজ। আইসি কোনও মতে আমাদের বেরুনোর ব্যবস্থা করুন।তার সহায়তায় কোনও রকম বেরিয়ে আসি । ”
জানা গেছে সেদিন প্রায় রাত ১টায় দাঁতন ছাড়েন মেখলা ও তার দল।দাঁতন ছাড়লেও আতংক ছাড়েনি তাঁকে।প্রায় ৪০কিলোমিটার দুরে এসে মেখলা গভীর রাতেই গাড়ির মধ্যেই প্রথম ফেসবুক লাইভ করেন । বলেন, “প্রচণ্ড আতংকে রয়েছি , জানিনা প্রান নিয়ে ফিরতে পারব কিনা ! মনে হচ্ছে পিছনে গাড়ি নিয়ে কারা আসছে।যদি বাড়ি ফিরি , মানে প্রানে বেঁচে ফিরতে পারি তবে আপনাদের বিস্তারিত জানাবো।”
পরের দিন আবার লাইভে এসে মেখলা ওপরে বর্নিত অভিজ্ঞতা জানান ।
মেখলা জানিয়েছেন , দাঁতনের সাধারন মানুষ , অ-পুলিশ দর্শক তাঁর অনুষ্ঠান সুন্দর ভাবেই গ্রহন করেছিলেন যত সমস্যার উৎস ছিল পুলিশ কর্মীরাই।দাঁতন বরাবরই শিল্প সাহিত্যের মননশীল স্থান।উৎকৃষ্ট শিল্প সাহিত্যের চর্চার পাশাপাশি অন্য জায়গার জ্ঞানীগুণীদের কদরে দাঁতনের ঐতিহ্য বরাবরই সমাদৃত।সেই দাঁতনে এই কান্ড মাথা নিচু করে দিয়েছে দাঁতনবাসীর।
দাঁতনের বাসিন্দা অভিনন্দন মাইতি নামে এক ছাত্র ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন , “সমগ্র অনুষ্ঠানটায় ছিলাম , শিল্পীর সঙ্গে এত বাজে ব্যবহার করা হয়েছে যে ধারনার বাইরে।আমি লজ্জিত ! ”
মেখলা আরও অভিযোগ করেছেন তিনি তাঁর প্রাপ্য টাকার পুরোটা পাননি। টাকা পাননি তাঁর সহ শিল্পীরাও।
সেদিন রাতের ভয়াবহ স্মৃতি উগরে দিতে গিয়ে প্রথম লাইভে মেখলাকে যেমন প্রচণ্ড আতংকিত দেখা গিয়েছিল।বাড়ি ফিরে দ্বিতীয় লাইভে সেই মেখলাকে দেখা গেল লজ্জায় অপমানে কান্নায় ভেঙে পড়তে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584